আট শ কোটিরও বেশি মানুুষের আবাসস্থল পৃথিবীতে উষ্ণায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত শতাব্দীতেই। একবিংশ শতাব্দীতে উষ্ণায়নের কারণে দুই মেরুর বরফ গলছে বিপজ্জনক হারে। পৃথিবীতে হিমবাহের আরেক বৃহৎ উৎস হিমালয়ের বরফ গলছে আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি। দুই মেরু দেশের বরফ গলার কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ইত্যাদি সমুদ্র-তীরবর্তী অনেক দেশের জন্য তা প্রত্যক্ষ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান হিমবাহ হিমালয়ের মাউন্ট এভারেস্ট এবং কে-২-তে প্রায় ২০০০ বছরে যতটা বরফ জমেছিল, তা গলতে সময় লেগেছে মাত্র ৩০-৩২ বছর। গবেষকদের অনুমান, কে-২ আর এভারেস্টের বরফের চাদর প্রতি বছর প্রায় ২ মিটার করে পাতলা হচ্ছে। মাউন্ট এভারেস্টে বরফ গলে যাওয়ার হার স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮০ গুণ বেশি যা বেশ উদ্বেগজনক! সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্টের একটি গবেষণা রিপোর্টে দ্রুত বরফ গলার তথ্য দেওয়া হয়েছে। কে-২ বা কে-টু এভারেস্ট পর্বতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। হিমালয় পর্বতমালার কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত এ পর্বতশৃঙ্গটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের গিলগিত-বালতিস্তান ও চীনের জিং জিয়ানের তাক্সকোরগান সীমান্তে অবস্থিত। হিমালয়ের হিন্দুকুশ থেকে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ পানি পায়। হিমালয়ের নিচে অবস্থিত উপত্যকায় বিভিন্ন নদী মারফত প্রায় ১৬৫ কোটি মানুষ পানি পেয়ে থাকে। এ গবেষণার প্রধান গবেষক বলেছেন, পরিবেশ তপ্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় বরফ গলবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু অত্যন্ত দ্রুত বরফ গলছে। আর এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিমালয় পর্বতের হিমবাহগুলো গঙ্গা, সিন্ধু, মেকং, হোয়াংহো, ইরাবতিসহ বিশ্বের ১০টি প্রধান পানির উৎস। বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ মানুষের খাদ্য, জ্বালানি এবং দূষণমুক্ত বায়ুর জোগান দেয় হিমালয়ের হিমবাহ। এগুলো গলতে থাকলে একপর্যায়ে যেগুলো বরফশূন্য হয়ে পড়বে। পানিশূন্য হয়ে পড়বে সব নদনদী। বিপন্ন হয়ে পড়বে পৌনে দুই শ কোটি মানুষের জীবিকা।