সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঈদুল আজহার আমল

যুবায়ের আহমাদ

ঈদুল আজহার আমল

মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা দরজায় কড়া নাড়ছে। ঈদুল আজহাকেন্দ্রিক আবশ্যিক আমল ৩টি। প্রথম ২টি ধনী-গরিব সবার জন্য। তৃতীয়টি কেবল সম্পদশালীদের জন্য আবশ্যক। ঈদুল আজহাকেন্দ্রিক আবশ্যিক আমলগুলোর প্রথমটি হলো, তাকবিরে তাশরিক বলা। আরাফার দিনের (জিলহজের ৯ তারিখ) ফজর থেকে ১৩ জিলহজের আসর পর্যন্ত এ ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর একবার তাকবিরে তাশরিক (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ) বলা ওয়াজিব। নারী-পুরুষ, ইমাম, মুক্তাদি, মাসবুক ও মুকিম-মুসাফির, একাকী কিংবা জামাতে নামাজ আদায়কারী সবার ওপরই ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চ স্বরে এবং নারীরা নিচু আওয়াজে পড়বেন। যাদের ওপর নামাজ ফরজ, তার ওপরই তাকবিরে তাশরিক ওয়াজিব। যেহেতু হায়েজ-নেফাসগ্রস্তা নারীর ওপর নামাজ ফরজ নয়, তাই তাদের তাকবিরে তাশরিকও পড়তে হবে না। মাসবুক (জামাতে কিছু অংশে ইমামের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ব্যক্তি) তার অবশিষ্ট নামাজ আদায়ের পর তাকবিরে তাশরিক পড়বে। আইয়ামে তাশরিকের (৯-১৩ জিলহজ) মধ্যে কোনো ওয়াক্তের ফরজ নামাজ কাজা হলে এবং সে কাজা নামাজ আইয়ামে তাশরিকের মধ্যেই পড়লে তর পরও তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে।

ঈদুল আজহার দ্বিতীয় আবশ্যিক আমল হলো, আজান-ইকামত ছাড়া জামাতের সঙ্গে দুই রাকাত ঈদের নামাজ পড়া। এটিই ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। ঈদগাহেই (উন্মুক্ত ময়দানে) ঈদের নামাজ উচিত। তবে ঈদগাহ কিংবা মসজিদ যেখানেই হোক, এ নামাজ কেবল জামাতেই পড়া যায় এবং সে জামাতে ইমাম ছাড়াও অন্তত তিনজন মুসল্লি হতে হবে। কোনো কারণে ঈদের নামাজ ছুটে গেলে এর কোনো কাজা নেই, কেবল গুনাহগারই হতে হবে। এ জন্য ঈদের নামাজের জন্য মুসলমানদের আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। ঈদের নামাজ অতিরিক্ত ৬টি তাকবির যুক্ত করে সাধারণ নামাজের নিয়মেই পড়তে হয়। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা হাত বাঁধা ও সানার পর অতিরিক্ত ৩টি তাকবির দিতে হয়। প্রথম তাকবিরের সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিয়ে তৃতীয় তাকবির বলার সময় উভয় হাত উঠিয়ে হাত বেঁধে কিরাত পড়তে হয়। দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত শেষ করে রুকুর আগে ৩টি তাকবির দিতে হয়, প্রত্যেকবারই দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিতে হয়। চতুর্থ (রুকুর) তাকবির দিয়ে রুকু করে অবশিষ্ট নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে শেষ করতে হয়। নামাজ শেষে ইমামে খুতবা প্রদানের সময় মুসল্লিদের অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত না হয়ে তা শোনা জরুরি।

ঈদুল আজহার তৃতীয় আবশ্যিক আমল হলো সামর্থ্যবান ব্যক্তির কোরবানি করা। জিলহজের ১০ তারিখের ফজর থেকে ১২ তারিখের সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কোনো মুসলমান পুরুষ/নারীর কাছে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা প্রয়োজন অতিরিক্ত এর সমপরিমাণ অর্থ থাকে, তার ওপরই কোরবানি ওয়াজিব। কিছু স্বর্ণ, কিছু রুপা, কিছু টাকা মিলে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয় তখনো কোরবানি ওয়াজিব। যে কারণে আমাদের দেশের অনেক নারীর ওপরও ওয়াজিব। ঈদুল আজহার সুন্নত আমলসমূহ : খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াকসহ অজু করে ফজরের নামাজ নিজ মহল্লার মসজিদে আদায় করা, ভালোভাবে গোসল করা, সাধ্যমতো উত্তম (পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন) পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, ঈদ সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে কোরবানির গোশত দিয়ে ঈদুল আজহার দিনে প্রথম খাওয়া, দেরি না করে তাকরিরে তাশরিক বলতে বলতে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া।

 

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, গাজীপুর

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর