মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইন্দোনেশিয়ার গণহত্যা

সুদীপ্ত সুজন

ইন্দোনেশিয়ায় ষাটের দশকে সংঘটিত হয় কমিউনিস্ট গণহত্যা। সেনাপ্রধান জেনারেল সুহার্তোর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট গণহত্যায় প্রাণ হারায় ১০ লাখ ইন্দোনেশীয়। ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে সুকর্ণের নেতৃত্বে। কমিউনিস্ট পার্টি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়।

১৯৬২ সালে ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি সুকর্ণের সরকারে যোগ দেয়। দেশের শ্রমিক আর কৃষকদের মধ্যে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। তবে কমিউনস্টি পার্টি ছিল সামরিক বাহিনী আর ধর্মীয় দলগুলোর দুই চোখের বিষ। ১৯৬৫ সাল নাগাদ চীন আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পর ইন্দোনেশীয় কমিউনিস্ট পার্টি পিকেআই বিশ্বের বৃহত্তম কমিউনিস্ট পার্টিতে পরিণত হয়। ৩০ লাখের বেশি সদস্যবিশিষ্ট এ দলটি ইন্দোনেশিয়ার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মানুষকে সংগঠিত করার ক্ষমতা রাখত। ১৯৬৫ সালের এপ্রিলে কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নেতা আহমেদ ইয়ানি ঘোষণা দেন, তারা একটি পৃথক কমিউনিস্ট মিলিশিয়া গঠন করবেন। তার প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট সুকর্ণও সায় দেন। যুবসমাজের মধ্যে কমিউনিজমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার প্রতি সুকর্ণের দুর্বলতা দেখে সে দেশের সেনাবাহিনী শঙ্কিত হয়ে পড়ে।

সুকর্ণের কয়েকজন কমিউনিস্ট সমর্থক দেহরক্ষী আর সামরিক বাহিনীর কয়েকজন সদস্য ১৯৬৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশীয় সামরিক বাহিনীর সাতজন সিনিয়র জেনারেলকে অপহরণ করে এবং মারদেকা চত্বর দখল করে নেয়।

সুহার্তো দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কে ছিলেন এই বুঝি কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করল। কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনেন সুহার্তো। কমিউনিস্টদের প্রতি উদার মনোভাবের জন্য প্রেসিডেন্ট সুকর্ণকে ক্ষমতাহীন আর গৃহবন্দি করা হয়। তারপর সেনাবাহিনী ও ধর্মীয় দলগুলোর যোগসাজশে ইন্দোনেশিয়াজুড়ে শুরু হয় একের পর এক হত্যাকান্ড।

পঞ্চশীলা ইউথ নামের একটি আধাসামরিক সংগঠন কমিউনিস্ট হত্যাকান্ডে নেতৃত্বে দেয়। জেনারেল আবদুল হারিস নাসিতিওনের এই সংগঠনের মূল শক্তি ছিল রাস্তার ভাড়াটে গুন্ডা, মাফিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজন এবং উগ্র ডানপন্থি যুবকরা।

সুহার্তোর নেতৃত্বে ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনী কমিউনিস্টদের ওপর হামলা চালিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। তাদের বেপরোয়া হত্যাকান্ডের শিকার হয় ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকারী চীনা বংশোদ্ভূতরা। তাদের চীনের দালাল, গুপ্তচর, নাস্তিক ও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সরকারিভাবে। চীনাদের সম্পত্তি লুটপাটে মেতে ওঠে সেনাবাহিনীর লেলিয়ে দেওয়া গুন্ডারা। হাজার হাজার চীনাকে এ সময় হত্যা করা হয়। কমিউনিস্ট নিধন অভিযানে ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ১০ বছর বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ আর সরকারি জেল-জুলুম অগণিত মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। ইন্দোনেশীয় সরকারের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৮০ হাজারের মতো হলেও স্বাধীন গবেষকদের ধারণা ১০ থেকে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয় ওই সময়ে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর