মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

এ পৃথিবীতে ভালো মানুষের টিকে থাকা কঠিন

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

এ পৃথিবীতে ভালো মানুষের টিকে থাকা কঠিন

এক. পৃথিবী তো অনেক দেখলাম, অনেক চিনলাম, এ পৃথিবীতে ভালো মানুষের টিকে থাকা কঠিন। তার পরও জীবনকে টেনে নিতে হবে অনেকটা পথ। জানি মানুষের অভিনয় দেখতে হবে, সে অভিনয়টা আমি দেখছি না, বুঝতে পারছি না বলে অভিনয়ও করতে হবে, কিন্তু অভিনয় শেষ হলেই বাস্তবতাটা জানিয়ে দেবে আমি অভিনয় করিনি বরং অভিনেতাদের অভিনয় দেখে হেসেছি। হয়তো এমন করেই হেসে যাব ততদিন, যতদিন জীবনের বোঝা কাঁধের ওপর ঝুলিয়ে বয়ে বেড়াতে হবে।

সারা জীবন মানুষের বোঝা টেনেই গেলাম, নিজেরটা নিজে বলা যায় না। কিন্তু আমি জানি, আমার বিশ্বাস জানে কখনো মানুষের খারাপ চাইনি, কোনো খারাপ কাজে নিজেকে জড়াইনি। পৃথিবীর চরমতম সত্য হলো, ভালো মানুষ খারাপ মানুষের মতো মিথ্যা বলতে পারে না, অভিনয় করতে পারে না, নিজেকে জাহির করতে পারে না। খারাপ মানুষের মানসম্মানের ভয় থাকে না, তারা সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বানাতে এতটুকু লজ্জাবোধ করে না। অথচ তাদের এ সত্য-মিথ্যার খেলা কত ভালো মানুষের জীবনকে ভেঙেচুরে নিঃশেষ করে চলেছে তার খবর হয়তো কেউ রাখে না। মানুষও খুব অদ্ভুত, খারাপ মানুষের জাদু তাদের খারাপের দিকেই টানে, ভালোর দিকটা সব সময় অন্ধকারেই ডুবে থাকে।

খুব বিচিত্র একটা সময় অতিক্রম করছি আমরা, যেখানে ভালো মানুষের কোনো দাম নেই, খারাপদের কদরের শেষ নেই। সত্যি বলতে কি, মানুষ ভালোদের সঙ্গে থাকে না, খারাপদের সঙ্গেই থাকে। কারণ একটাই, স্বার্থের মতো রোগে যে সমাজ আক্রান্ত হয়, সেই সমাজের মানুষ রোগে ভুগতে ভালোবাসে। খারাপের মোহে মায়াজাল থাকে, সেই মায়ায় মানুষ ভুলে যায়, সব মায়ায় আদর থাকে না, স্বার্থও থাকে। মাথায় হাত বোলালেই আদর হয় না, কখনো কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে মানুষ মানুষকে তার দাস বানায়, পরাধীনতার শিকল পরায়। এ সমাজে ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকাটাই এখন পাপের মতো। খারাপ মানুষ তাদের মতো করে অন্যদের বোঝায় ভালো বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই, সবটাই আপেক্ষিক, সবটাই অভিনয়। অথচ যুগে যুগে পৃথিবীতে ভালোত্বের জন্ম হয়েছে বলেই হয়তো পৃথিবী আজও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে, অন্ধকারের মধ্যেও নিভুনিভু বাতি যতটা পারছে দম নিতে নিতে আলো ছড়াচ্ছে।

খারাপ হলে নাকি অনেক লাভ, তখন মানুষের বদনাম ছড়ানো যায়, মানুষকে কলঙ্কিত করা যায়, মানুষকে ডোবানো যায়, মানুষকে ভাসানো যায়, যা ইচ্ছা করা যায়। মানুষ ভালো হলে খারাপ চিন্তা করতে পারে না বলেই হয়তো অসহায়ত্বের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত হতে দেখে, নিজেকে ক্রমে ঠেলতে ঠেলতে পর্দার পেছনে নিয়ে আসে, তারপর একসময় হারিয়ে যায়। পৃথিবীর মানুষ হয়তো বুঝতেও পারে না তাদের কাছে যে অমূল্য সম্পদ ছিল, তা হারিয়ে গেছে। হয়তো মানুষ একদিন বুঝবে, সেদিন হয়তো সেটার কোনো মূল্যই থাকবে না।

আসলে এ সমাজে ভালো মানুষের প্রতিদিন যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। মিথ্যার মোহের কাছে নিজের সত্যের মৃত্যুকে দেখতে হয় প্রতিদিন। খারাপ মানুষের স্রোতে ভেসে যাওয়ার চেয়ে সবকিছু ছেড়ে একা থাকা ভালো। যখন মানুষ একা হয়ে যায়, তখন মানুষের ভিতরে অনেক মানুষের জন্ম হয়, ভালো মানুষ তখন ভালো থাকতে মুখ বুজে থাকে না বরং খারাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। অনেক মানুষ একই রকম করে ভাবে বলে যা করতে পারে না, নিজের একার শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা নিজের মতো করে ভাবতে পারে বলে তা করতে পারে। শক্তি সংখ্যাধিক্যে থাকে না, শক্তি ভালোর ভিতরে থাকে, যদিও ভালোকে একাই লড়ে যেতে হয়।

দুই. মনে পড়ছে পেছনে ফেলে আসা দাসপ্রথার কথা। সহজসরল অসহায় মানুষকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধরে এনে নিলামে তোলা হতো, এরপর যে বেশি দাম দিতে পারত, তার কাছে মানুষ বিক্রি হয়ে যেত। মানুষ মানুষকে কিনে তার মনিব হতো, মানুষ মানুষের কাছে বিক্রি হয়ে তার দাস হতো। যে মানুষটা বিক্রি হয়ে যেত, সারা জীবনের জন্য আপনজনদের তাকে হারাতে হতো। কখনো নীরবে, নিভৃতে কাঁদত তারা, কিন্তু তাদের সে কান্না ইটপাথরের প্রাচীরে চিরকালের জন্য বন্দি হয়ে থাকত।

সময় গড়িয়েছে, ইতিহাসের পাতা পুরনো হতে হতে নতুন নতুন ইতিহাস হয়েছে, মানুষ এখন খুব গর্ব করে বলে, পৃথিবীতে আর দাসপ্রথা নেই, অথচ নির্মম সত্য হলো পৃথিবীতে দাসপ্রথা বেড়েছে। এখন মানুষকে আর নিলামে তুলতে হয় না, মানুষ এখন নিজেই বিক্রি হয়ে যায়। মুখে মুখে নিজেকে স্বাধীন মানুষ বলে দাবি করলেও মানুষের ভিতরটা জানে সে কতটা পরাধীন। কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত উপন্যাস ‘ক্রীতদাসের হাসি’র কথা মনে পড়ছে। কারণ মানুষের মুখে এখন আর মানুষের হাসি দেখি না, ক্রীতদাসের হাসি দেখি।

এখন প্রতিদিন মানুষ বিক্রি হচ্ছে, কর্মীরা বিক্রি হচ্ছে নেতাদের কাছে, ছোট ছোট নেতারা বিক্রি হচ্ছে বড় নেতাদের কাছে, বড় বড় নেতা বিক্রি হচ্ছে বিনা পুঁজির বড় বড় ব্যবসায়ীর কাছে, বড় বড় ব্যবসায়ী বিক্রি হচ্ছে বড় বড় অদৃশ্য শক্তির কাছে। এ অদৃশ্য শক্তির সুতোটা বাড়তে বাড়তে ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে কেউ জানে না, কারও জানার কথা নয়। কারণ সাধারণ মানুষ ততটুকুই জানে যতটুকু তাদের দেখানো হয়। এমন করেই মানুষ বিক্রি হচ্ছে নিজের স্বার্থের কাছে, বিবেকের কাছে, টাকার কাছে, টাকা দিয়ে দরকষাকষি করে কেনা ঠুনকো মানমর্যাদার কাছে, মিথ্যার কাছে, ভোগবিলাসের কাছে। আরও অনেক কিছুর কাছে।

মনে পড়ছে ফেলে আসা রাজা-মহারাজাদের জলসাঘরের কথা। যেখানে পেটের দায়ে মানুষ থেকে নর্তকীতে রূপান্তরিত হওয়া রূপবতীদের রাখা হতো। জলসাঘরের মাথায় ঝোলানো ঝাড়বাতির আলোয় অন্ধকার জীবনের গভীর অনুভূতিতে হারিয়ে যাওয়া সেসব নর্তকীর কষ্টগুলো খাঁচায় বন্দি পাখির মতো আছড়ে পড়ত। পায়ের নূপুরের ঝনঝনানিতে নাচের আসরে সরাবে বুঁদ হয়ে থাকা হাসিমুখে রাজাদের আনন্দ দিত যারা, তাদের নিজেদের জীবনে কোনো আনন্দ ছিল না।

রাজপ্রাসাদে রাজার বউ হয়ে রানিতে রূপান্তরিত হওয়া মানুষটা সোনা-রুপার অলংকারে নিজেকে ঢেকে রাখত, একটাই আশা ছিল তাদের, যদি রাজারা জলসাঘর ছেড়ে রাজমহলমুখী হয়। দিনের পর দিন রানিরা রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে রাজার জন্য প্রতীক্ষা করেছে, চোখের পানি ফেলেছে কিন্তু জলসাঘরের রঙিন পৃথিবীর ভ্রান্তিবিলাস রানিদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। রাজপ্রাসাদের প্রহরীরা সব দেখেছে, সব বুঝেছে, কিন্তু রাজপ্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে এসে সত্যটা কখনো বলতে পারেনি। সত্য বলা যে খুব কঠিন, মিথ্যা বলা যে খুব সহজ।

সময়ের চাকা ঘুরেছে, পৃথিবী এখন আরও বেশি করে সভ্যতার মেকআপ পরে জলসাঘর হয়েছে। সেই জলসাঘর ঘিরে কেউ এখনো রাজা, কেউ এখনো রানি, কেউ এখনো নর্তকী, কেউ এখনো প্রহরী, কেউ এখনো প্রজা। সবকিছুই রং বদলেছে, তবে মুখ দেখে চেনা কঠিন কে কোন রং মেখেছে। প্রাচীন শব্দের জায়গায় তথাকথিত আধুনিক শব্দটা যুক্ত হয়েছে, মানুষগুলো যেভাবে বন্দি ছিল সেভাবেই থেকে গেছে। সত্যগুলো প্রতিদিন জন্ম নেয়, প্রতিদিন কেউ জানার আগেই মরে যায়, তবে মিথ্যারা বেঁচে থাকে সত্যের মতো করেই। জলসাঘরের ক্রীতদাস চেনা এখন খুব কঠিন, কারণ সবাই যে খুব বেশি ভদ্রলোক।

তিন. যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন আমার নানার বাড়িতে মানিপ্লান্টের বড়সড় একটা গাছ ছিল। সবাই বলতেন ওটা নাকি টাকা তৈরির গাছ। তখন সবকিছু বোঝার মতো বয়স হয়নি, খুব অবাক হয়ে ভাবতাম, কি অদ্ভুত একটা গাছ, যেখান থেকে টাকার জন্ম হয় কিন্তু গাছে রংবেরঙের পাতা দেখলেও কাগজের টাকা সেখানে ঝুলতে না দেখে সমীকরণটা ঠিক মেলাতে পারতাম না। কিন্তু মনে মনে বিশ্বাস করতাম, ওটা টাকারই গাছ।

এখন বুঝি গাছটা টাকার হলেও বটগাছের মতো সেটার মেরুদন্ড ছিল না, নামের সঙ্গে মানি বা টাকা থাকলেও, সেই টাকার কোনো মূল্য ছিল না। টাকা থাকলেই মেরুদন্ড তৈরি হয় না, টাকা থাকলেই সারা পৃথিবীর সবকিছু কেনা যায় না, অনেক সময় টাকা খুব মূল্যহীন হয়, অসহায় হয়, কখনো কখনো টাকা মানুষের ঘুম কেড়ে নেয়, সুখ কেড়ে নেয়, মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৫৮ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘পরশপাথর’ ছবিটি মুক্তি পায়। সে ছবির মুখ্য চরিত্র নিম্নমধ্যবিত্ত কেরানি পরেশচন্দ্র দত্ত (বিখ্যাত অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তী) একটি পরশপাথর পান, যে পাথর কোনো লোহার ওপর ধরলে সোনা হয়ে যেত। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, এটি ফেলে দেবে, কিন্তু ক্রমে তার লোভ বাড়তে থাকে। তিনি প্রচুর লোহা কিনে সেগুলোকে সোনা বানিয়ে অনেক টাকার মালিক হয়ে যান। এ টাকায় তিনি খুব দ্রুত কেরানি থেকে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি হয়ে যান। বিভিন্ন সভা-সমিতি ও বড় বড় পার্টিতে তার ডাক পড়তে থাকে।

একসময় সবাই জানতে পারে, পরেশবাবু কীভাবে টাকা বানানোর মেশিন হয়ে উঠেছেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ধনী মানুষ সোনার দরে পতন ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় জমানো সোনা বিক্রি করতে সোনার দোকানগুলোয় হুমড়ি খেয়ে পড়ে। পরেশবাবু বিপদ বুঝতে পেরে তার সেক্রেটারি প্রিয়তোষকে পরশপাথরটি দিয়ে বউসহ তীর্থযাত্রার উদ্দেশে বেরোতে গেলে পুলিশের জেরার মুখে পড়েন এবং সোনাসহ তাদের থানায় আনা হয়। অন্যদিকে প্রিয়তোষ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে পরশপাথরটি গিলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। চিকিৎসরা অবাক হয়ে দেখতে থাকেন প্রিয়তোষ পরশপাথরটি ক্রমে হজম করে ফেলায় তা ক্রমাগত ছোট হয়ে আসছিল। পুলিশ পরশপাথরের অদ্ভুত গল্পকে বিশ্বাস না করে পরেশবাবুকে স্মাগলিং ও অবৈধভাবে অর্থসম্পদ অর্জন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে থাকে। পরেশবাবু বারবার তার অর্থ উপার্জনের উৎস যে এই পরশপাথর তা যখন পুলিশকে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন, সে সময় পুলিশের সামনে রাখা সোনাগুলো হঠাৎ করেই পরিবর্তিত হয়ে লোহায় পরিণত হয়। বিস্মিত হয় পুলিশ, পরেশবাবু ও তার বউয়ের মুখে তখন নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের হাসি। খবর আসে, প্রিয়তোষ পরশপাথর পুরোপুরি হজম করে ফেলায় পরশপাথর তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। বিস্মিত হয় পুলিশ।

একদিন যারা লোহাকে সোনা বানিয়ে হেসেছিল, আজ তারাই সোনাকে লোহায় পরিণত হতে দেখে হাসছে। খুব অদ্ভুত মানুষের মনস্তত্ত্ব¡, যে টাকা একদিন হাসিয়েছে, সুখ এনেছে, সে টাকা একদিন বোঝা হয়েছে, বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে, আবার টাকার পরাধীনতা থেকে সাধারণ মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার আনন্দ স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিয়েছে।

অর্থ অনর্থকের মূল, যদিও অনেকেই বলবেন, টাকা ছাড়া কি দুনিয়া চলে? এসব ব্যাকডেটেড চিন্তা এই সময়ে পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই না। তাদের বলব, অমর্ত্য সেনের সেই মতবাদটির কথা যেখানে বলা হয়েছে, দুর্ভিক্ষ টাকার অভাবে হয় না, সুষম বণ্টনের অভাবে হয়।

খুব নগণ্য মানুষ হিসেবে আমি বলব, ততটুকুই মানুষের টাকা থাকা প্রয়োজন যতটুকু তার দরকার। আরেকটি কথা বলব, মানুষ তখনই নিজেকে মানুষ হিসেবে দাবি করতে পারবে, যখন মানুষ টাকার পেছনে ছুটবে না বরং টাকাই মানুষের পেছনে ছুটবে কিন্তু মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবে না। মনুষ্যত্বহীন মানুষ আবার ভাবুক, মানুষ বড়, টাকা বড় নয়।

মাকড়সার মতো ঝুলে আছি, স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝামাঝি, যেখানে ওপরে আকাশ, নিচে মাটি। আকাশে তারার কল্পনার হাতছানি, মাটিতে নিজের বাস্তবতার শিকড়। যেখানে বেঁচে থাকলে টাকার স্বপ্ন মানুষকে ওড়ায়, মরে গেলে টাকারা সব মাটি হয়ে যায়।

লেখক : শিক্ষাবিদ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

সর্বশেষ খবর