মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আল্লাহ ও রসুলে নিরঙ্কুশ ভালোবাসা

মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন

মুমিনদের জীবনের শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত তওবার ওপর অটল থাকতে হবে। যেসব ছোটখাটো মানবীয় ভুলভ্রান্তি থেকে কেউ মুক্ত নয়, সেগুলো ছাড়া পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কল্পনা কখনো অন্তরে সৃষ্টি করা যাবে না। একেই বলা হয় তওবায় দৃঢ় থাকা। এ ধরনের তওবাকারীর তওবাকে বলা হয় একনিষ্ঠ তওবা। আর  সে তওবার আত্মা হচ্ছে প্রশান্তিময়। দ্বিতীয়ত, তওবা করার পর মৌলিক আমলগুলোয় দৃঢ় থাকবে। কিন্তু পাপাচার থেকে মুক্ত হতে পারবে না। অপরাধে লিপ্ত হওয়ার জন্য সুদৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে অগ্রসর হবে না; তার পরও ফেতনা থেকে বাঁচতে পারবে না, লিপ্ত হয়েই যাবে। যখনই এ ধরনের কিছু ঘটে যাবে অপরাধীর মতো নিজেকে লাঞ্ছনা দেবে, লজ্জিত হবে এবং অন্যায়ে লিপ্ত হওয়ার যাবতীয় উপকরণ থেকে বেঁচে থাকার জন্য অঙ্গীকার করবে। একেই বলা হয় নাফসে লাওয়ামাহ বা তিরস্কারকারী আত্মা। তৃতীয়ত, তওবা করে কিছুকল দৃঢ় থাকবে। এরপর হঠাৎ কোনো গুনাহের কাজে প্রবৃত্তিতাড়িত হয়ে লিপ্ত হয়ে পড়বে। অথচ সে নিয়মিতভাবে নেককাজ করেই চলবে। যাবতীয় অপরাধে জড়াতে মন চাইলেও এবং হাতের নাগালে পেলেও তা পরিত্যাগ করবে। কিন্তু দু-একটি বিষয়ে প্রবৃত্তিকে দমন করতে পারবে না, ফলে তাতে লিপ্ত হয়ে পড়বে, শেষে লজ্জিত হবে এবং উক্ত অন্যায় অচিরেই ছেড়ে দিয়ে তওবা করার অঙ্গীকার করবে। একে বলা হয়, নাফসে মাসউলা বা জিজ্ঞাসিত আত্মা। এর পরিণাম ভয়াবহ কেননা, সে আজ নয় কাল বলে তওবা করতে দেরি করছে। হতে পারে সে তওবার সুযোগ না পেয়েই মৃত্যুবরণ করবে। মানুষের শেষ আমলই তার পরিণাম নির্ধারণ করে। চতুর্থত, তওবা করে কিছু সময় দৃঢ় থাকবে। কিন্তু পুনরায় দ্রুত অন্যায়ে লিপ্ত হবে, এরপর অন্যায় করে আফসোসও করবে না এবং তওবা করার কথা মনেও আনবে না। একেই বলা হয় নাফসে আম্মারা বিস সুই বা অন্যায়ে উদ্বুদ্ধকারী আত্মা। এর পরিণাম খুবই ভয়ানক। এর শেষ পরিণতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা। অর্থাৎ মৃত্যুর আগে তার নসিবে তওবা না-ও জুটতে পারে। ফলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইসলাম মানুষকে জীবনের সব ক্ষেত্রে সত্যবাদী হওয়ার তাগিদ দেয়। কথা ও কাজে মানুষ সত্যের অনুসারী হবে এবং মিথ্যা থেকে দূরে থাকবে এমন শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, অসত্যভাষীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত (আলে ইমরান-৬১)। সত্যবাদিতা হচ্ছে অন্তরের যাবতীয় আমলের মূল। সিদক বা সত্যবাদিতা শব্দটি ছয়টি অর্থে ব্যবহার হয় : (১) কথাবার্তায় সত্যবাদিতা (২) ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যে সত্যবাদিতা (এটাকে ইখলাস বলা হয়) (৩) দৃঢ় সংকল্পে সত্যবাদিতা (৪) দৃঢ় সংকল্প বাস্তবায়নে সত্যবাদিতা (৫) কর্মে সত্যবাদিতা। অর্থাৎ ভিতর ও বাহির একই রকম হওয়া। যেমন বিনয়ের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। (৬) ধর্মের সব বিষয় বাস্তবায়নে সত্যবাদিতা। এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ ও সর্বাধিক সম্মানিত স্তর। যেমন ভয়ভীতি, আশা-আকাক্সক্ষা, শ্রদ্ধা-সম্মান, দুনিয়াবিমুখতা, সন্তুষ্টি, ভরসা, ভালোবাসা তথা অন্তরের যাবতীয় আমলে সততার পরিচয় দেওয়া। যে ব্যক্তি উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে সত্যতার গুণে নিজেকে গুণান্বিত করতে পারবে তাকেই বলা হবে ‘সিদ্দিক’। কেননা সে সত্যতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই তোমরা সত্যনিষ্ঠ হবে, কেননা সত্যতা নেক কাজের পথ দেখায়। আর নেক কাজ জান্নাতের পথ দেখায়। একজন মানুষ যদি সত্যবাদী হতে থাকে এবং সত্যতা অনুসন্ধান করে, তবে সে একসময় আল্লাহর কাছে ‘সিদ্দিক’ বা মহাসত্যবাদী রূপে লিখিত হয়ে যায়।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর