বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে - ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ

আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে

আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। তার মতে, রপ্তানি আয় বাড়াতে আমাদের কিন্তু একটা সুযোগ আছে। যদিও আমরা এখনো সুযোগগুলো সঠিকভাবে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহেদ আলী ইরশাদ ও রাশেদ হোসাইন

 

ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের সার্বিক আর্থিক খাতের বর্তমান অবস্থা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ড. জামালউদ্দিন আহমেদ : ভালো খারাপ মিলে সার্বিকভাবে দেশের আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। ব্যাংক খাতে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। ঋণের ৯ শতাংশ এবং আমানতের ৬ শতাংশ সুদহার থেকে সরে আসার প্রভাব পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা হয়তো দাবি করতে পারেন সুদের হার বাড়ালে তাদের খরচ বেড়ে যাবে। সুদের হার বাড়ালেও ট্যাক্সে ৫০ শতাংশের মতো মাফ দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে পুরো প্রভাবটা পড়বে না। আর ব্যাংকগুলোও তারল্যের একটি সমস্যায় আছে। তাই আমানতের সুদহার বাড়লে আমানত বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এতে ব্যাংকের তারল্যে ইতিবাচক দিক দেখা যাবে। ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে। বিদ্যমান চলমান প্রক্রিয়া অনেকটাই চাপমুক্ত হয়ে যাবে। এতদিন একটা ফিক্সড জিনিসের মধ্যে আটকা ছিল। যার সক্ষমতা আছে সে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হবে। একই সঙ্গে যেসব ব্যাংকের তারল্যের অবস্থান ভালো, বেশি বিনিয়োগ করে তারা বেনিফিটেড হবে। আবার ছোটদের জন্য অসুবিধা হবে। তবে নীতিমালা অনুযায়ী ছোটরা সুবিধা পেলে সার্বিকভাবে সবার জন্যই ভালো হবে। আর যদি বলি কিছু লোককে সুবিধা দেব, কিছু লোককে আটকে রাখব তাদের অসুবিধা হবে। যারা অনিয়মের মধ্যে আছে, নিয়মের বাইরে যারা চলছে, তাদের জন্য কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন করলে করদাতার সংখ্যা ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়ানো সম্ভব। ডিজিটালাইজেশন করা গেলে করহার কমিয়েও বর্তমানের ৩-৪ গুণ কর আদায় করা সম্ভব। বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ কর দেয়।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যাংক খাতের সংকট উত্তরণের উপায় কী?

ড. জামালউদ্দিন আহমেদ : ব্যাংকগুলোকে এখন আগের চেয়ে কঠোর হতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক আর্কিটেকচারে পুঁজিবাজার এবং বন্ড মার্কেটের অবদান এখনো ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বব্যাপী যদি দেখেন ব্যাংক লোন বেইজড অর্থনীতি দিয়ে বেশিদূর এগোনো যায় না। একটা দেশের ফাইন্যানশিয়াল স্ট্রাকচারে ব্যাংকের মানসম্মত অবদান ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। আমাদের দেশে এর চেয়ে বেশি। কেন বেশি তা বের করা দরকার। আরেকটা বিষয় হলো অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের যে অবদান সেটাও কিন্তু তুলনামূলক কম। কারণ এটাও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের ওপরে যাওয়া উচিত না। যদি ৬০ শতাংশও ধরা হয়, বাকি থাকল ৪০ ভাগ। তারপর আছে বন্ড মার্কেট। বন্ড মার্কেটের অবদান যদি একটা ভারসাম্যে থাকে। সেটা এখন খুবই মিনিমাম। ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি না। এটা হওয়া উচিত কমপক্ষে ২০ শতাংশ। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যদি আরও ১০ শতাংশ হয়, বিনিয়োগের উৎস যদি এভাবে হয়, তাহলে অর্থনীতিকে একটা সমতায় আনা যায়। অন্য সেক্টরগুলো সঠিকভাবে চলে। আমাদের দেশের বর্তমান যে অবস্থা ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে ৬০ শতাংশের বেশি অর্থায়ন করছে। ফলে ব্যাংকগুলোকে সমস্যায় পড়ার কারণ হচ্ছে এটার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। বিনিয়োগের উৎসগুলোকে বহুমুখী করতে পারলে অর্থনৈতিক সিস্টেমকে উৎপাদন এবং প্রবৃদ্ধিমুখী করার মাধ্যমে সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে। আরেকটা উৎস আছে রেমিট্যান্স। বিদেশি ঋণ নিলে সরকারকে সুদসহ ফেরত দিতে হয়। আর রেমিট্যান্সের অর্থ ফেরত দিতে হয় না। আবার পুঁজিবাজার কিন্তু আমাদের দেশে দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আরও খারাপ হতে পারত যদি আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ থাকত। কারণ পুঁজিবাজারের অবস্থা খারাপ হলে বিদেশিরা বিক্রি করে নিজ দেশে চলে যেত। যেহেতু বিনিয়োগ কম সেহেতু বিরাট কোনো প্রতিক্রিয়া আসছে না। কিন্তু পুঁজিবাজারের যে ভূমিকা এখনো কিন্তু বাজারকে ওঠাতে পারেনি। ওঠানোর জন্য যে ব্যবস্থা, সে ব্যবস্থাগুলোও কতটুকু কার্যকর হচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে তার কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। যেটা হচ্ছে এতদিন দুই দিন বাড়ে আবার নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। অঙ্ক আছে না, লাফিয়ে উঠল আবার দড়ি দিয়ে নিচে পড়ে গেল। সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে আমাদের পুঁজিবাজারের উন্নতি হচ্ছে না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ডলার সংকট সমাধানে আপনার পরামর্শ কী?

ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ : রপ্তানি আয় বাড়াতে আমাদের কিন্তু একটা সুযোগ আছে। যদিও আমরা এখনো সুযোগগুলো সঠিকভাবে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজ হয়েছে। বিদেশি ঋণের প্রকল্প এখনো বাংলাদেশে আছে খারাপ না। রপ্তানির বহুমুখীকরণ এখনো আমাদের দেশে হয়নি। মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশই তৈরি পোশাক। অপ্রচলিত পণ্যগুলো বিশেষ করে চামড়াজাত পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে এনে শিল্পকারখানা গড়ে যদি পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করত তাহলে চামড়া খাতে অনেক বেশি মূল্য সংযোজন হতো। বর্তমানে কাঁচা চামড়া রপ্তানি হচ্ছে ১ ডলারে, সেটাকে রূপান্তরিত করে পণ্য তৈরি করে ব্র্যান্ডের কোম্পানির মাধ্যমে রপ্তানি করলে রপ্তানি আয় বাড়ত ৭ থেকে ৮ গুণ। সেটা কিন্তু এখন হচ্ছে না। আমরা কাঁচা চামড়া রপ্তানি করেই খুশি। এত বছর হলো চামড়া খাতকে ম্যানেজই করতে পারছে না। সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণ এবং উৎপাদনমুখী করা হলে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আয় আসবে। এটা করা সম্ভব। আমাদের দেশের ফল ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি বাড়ানো উচিত। কার্যকর ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এটা সম্ভব। কারণ এখন গরু আমদানি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের গরু দিয়েই গত কোরবানি করা সম্ভব হয়েছে। মাছ ইতোমধ্যে রপ্তানি হচ্ছে। মাছ রপ্তানি আরও বাড়ানো দরকার। মাংস রপ্তানি করা সম্ভব। রপ্তানির এরিয়া বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্যের বহুমুখীকরণ করা গেলে ডলার সংকট কেটে যাবে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। আমরা ১ ডলার রপ্তানি করলে তার মধ্যে ৪০ সেন্ট আবার চলে যাচ্ছে। রপ্তানির তৈরি পোশাকে ব্যবহৃত উপকরণের যেগুলো আমাদের দেশে নেই সেগুলো আমদানি করতে এ ৪০ শতাংশ ডলার আবার বিদেশে চলে যাচ্ছে। এসব উপকরণ যদি আমাদের দেশের শিল্পকারখানায় তৈরি করা যায়, তাহলে আমদানি ব্যয় আরও কমলে রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোর কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের কাজ হবে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরি করা হয়। বিদেশে যেসব পণ্যের চাহিদা সেসব দেশ থেকে বিনিয়োগকারীদের এনে এখানে যৌথ মালিকানায় শিল্পকারখানা তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্রিকসে যোগদানের বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন? নতুন এ জোটে যোগদান বাংলাদেশের জন্য কতটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে?

ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ : অর্থনৈতিক জোটে যোগ দিলে লাভ-লোকসান দুটোই আছে। বাংলাদেশ যেখানে অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে সেখানেই যাবে। এ জোটে যোগ দিলে অর্থনৈতিক স্বার্থ থাকে। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে বড় বড় ঋণ নিতে পারবে। ফেড সুদহার বাড়ানোর কারণে ডলার ব্যয়বহুল। টাকার সঙ্গে ডলারে বিনিময়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ লোকসান হচ্ছে। তাহলে আমাদের বিকল্প রাস্তা বের করতে হবে। সেটাই হলো ব্রিকসে যোগ দেওয়ার উদ্যোগ। ব্রিকস যত শক্তিশালী হবে আমরা ততই বেনিফিট পেতে থাকব। আমরা যদি চীনের সঙ্গে ইউয়ানে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে পারি তাহলে ডলারের তুলনায় খরচ অনেক কম পড়বে। একইভাবে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কারেন্সি সোয়াপ করতে পারলে ডলারের ওপর নির্ভর করতে হবে না। মূলত লেনদেন হয় ট্রাস্টের ভিত্তিতে। ইউএস ডলারের গ্রহণযোগ্যতা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে বিগত ৮০-৯০ বছরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। এ ম্দ্রুাটা হলো ডমিনেটিং কারেন্সি। এটা টেইট কারেন্সি। এখন যদি চায়না থেকে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট করা হয়, প্রথমে বাংলা মুদ্রা জমা দিতে হবে; পরে গিয়ে এটা ইউয়ানে রূপান্তরিত হবে। ডলারে আমাদের পেমেন্ট দিতে হলে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ চার্জ দিতে হয়। কিন্তু যদি আমরা ইউয়ানে দিই তাহলে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে দিতে পারি। এটার পলিটিক্যাল ব্যাপারও আছে। অর্থনৈতিক জোটে গেলে এর পেছনে পলিটিক্যাল ব্যাপারও থাকে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশ রাজি হলে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন করতে পারে যেটা আমরা রাশিয়া-ভারতের মাঝে দেখতে পাই।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আর্থিক খাতে অনেক ধরনের অনিয়ম। এসব অনিয়ম দূর করতে সরকারের কতটা কঠোর হওয়া উচিত?

ড. জামালউদ্দিন আহমেদ : আর্থিক খাতে অনিয়ম দূর করতে সরকারের আরও সক্রিয় থাকা উচিত। আর্থিক খাতের অনিয়ম আমরা পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের পার্লামেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে তারা যদি সঠিকভাবে কাজ করে, সময়োপোযোগী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে কাজ করতে পারে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো যদি তাদের কাজ যথাযথভাবে পালন করতে পারে, তাহলে বহু রকম অনিয়ম বন্ধ হবে। গুদামজাতকরণ ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যদি পণ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ভালোভাবে কাজ করত তাহলে পণ্যের দাম বাড়ত না। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন যদি করা হয় তাহলে সেখানে ট্রেড বডি থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যের আলাদা করে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। আমাদের এখানে প্রতিযোগিতা কমিশন করা হয়েছে। তাদের ফলপ্রসূ কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। এরপর ভোক্তা অধিকার রয়েছে। এরকম বিভিন্ন কমিশন রয়েছে তারা যদি যথাযথ কাজ করে তাহলে ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সেরকম কাজ কিন্তু হচ্ছে না। তাদের কার্যক্রর করা উচিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে। ব্যাংকিং ও মুদ্রা সিস্টেমে যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রক রয়েছে। এখন ব্যাংক এক ধরনের ডলার রেট নির্ধারণ করে। অরেকজন আরেক রকম করছে। এখন রাষ্ট্র তো ব্যবসা করার প্রতিষ্ঠান না। ব্যবসার জন্য সৃষ্টি হয়নি। তারা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত; যাতে এসব অনিয়ম না হতে পারে। রাষ্ট্র জনগণের জন্য কাজ করে, নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর জন্য না। সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো আরও সক্রিয় থাকা উচিত।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : একটি শিল্পগোষ্ঠীর মালিকানায় অনেক ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকে পাহাড়সম অনিয়ম হয়েছে, এটাকে কীভাবে দেখেন?

ড. জামালউদ্দিন আহমেদ : সবকিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখার দায়িত্বে রয়েছে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ তৈরি এবং আয়বৈষম্য কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আরও অন্য সংস্থারও সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু মুখ্য ভূমিকা পালন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইনের প্রয়োগ যদি না হয় তাহলে তা তো বিচারহীনতার সংস্কৃতি হবে। একটা লোক টাকা পাচার করে চলে গেল, তার বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে না। এ টাকা পাচারটা বন্ধ করতে হবে। টাকা পাচারকারী অনেক লোক এখন বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা শুরু করছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে একই পরিবার থেকে চারজন পরিচালক একটানা নয় বছর থাকার সুযোগ দিচ্ছে সরকার; এটা ব্যাংক খাতের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে?

ড. জামালউদ্দিন আহমেদ : ব্যাংকের পরিচালকরা মনে হয় নবুয়তি নিয়ে এসেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে দুই টার্মের বেশি কেউ থাকে না। প্রাইভেট ব্যাংকেরও এক নীতিতে চলা উচিত। প্রাইভেটের জন্য এক ধরনের নীতি আর সরকারি ব্যাংকের জন্য আলাদা তা তো হবে না। আইন প্রয়োগের বৈষম্য এখানেও দেখা যাচ্ছে। এক পরিবারের চারজন ডাইরেক্টর হলে এটার ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেটা আমরা এখন দেখছি। সামনে আরও ক্ষতি হবে। একেক চেয়ারম্যান ২০ থেকে ২২ বছর ধরে চেয়ারম্যানশিপ করছেন। এটা কীভাবে সম্ভব? দু-তিন টার্মের পর কেউ যেন থাকতে না পারে সে বিষয় দেখা উচিত। বাই রোটেশনে আসতে হবে। একজন দীর্ঘমেয়াদি থাকলে একনায়কতন্ত্রের মতো হয়ে যায়। সেটা দেশের, সমাজের ও ব্যাংকের জন্য কল্যাণকর নয়।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ঢাকা এসেছে। ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিতে অনেক শর্ত দিয়েছে এটাকে কীভাবে দেখছেন?

ড. জামালউদ্দিন আহমেদ : ঋণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। ঋণ বাস্তবায়নে শর্ত রয়েছে। লোনের শর্ত বাস্তবায়নের জন্য চুক্তির বিষয় থাকে। চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে কি না তা দেখা হয়। একটি কিস্তি তিন মাস পরপর রিভিউ হয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। ডকুমেন্ট সাইনের শর্ত রয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন নিলে সুদ যোগ হয়ে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। সঠিকভাবে পরিচালনা না করলে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে। বাংলাদেশে পার ক্যাপিটাল ইনকাম ২৭০০-২৮০০ ডলার। ১৬ কোটি মানুষের অর্ধেক ৮ কোটি লোক কর্মক্ষম, সে হিসেবে আমাদের জিডিপির সাইজ আরও বড় হওয়া উচিত। কিন্তু অফিশিয়ালি তো তা নয়। এখানে ইনফরমাল বিষয় রয়েছে। আমাদের রাজস্ব আদায়ের বিষয় সংস্কার করতে হবে। ডিজিটালাইজড করতে হবে। আমাদের রাজস্ব কালেকশন অনেক কম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। আমাদের এখানে ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার লোক আছে কিন্তু কালেকশনের লোক নেই। আমাদের ট্যাক্স বিভাগকেও ডিজিটালাইজড করতে হবে। আমাদের ডাইরেক্ট ট্যাক্স ৬৫ শতাংশ আর ইনডাইরেক্ট ট্যাংক্স ৩৫ শতাংশ হওয়া উচিত। সেখানে আমাদের এখানে পুরো উল্টো।

সর্বশেষ খবর