বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রকেট গতিতে আদর্শ বদল

মহিউদ্দিন খান মোহন

রকেট গতিতে আদর্শ বদল

গ্রামের মাথায় বাস স্টপেজ সংলগ্ন সেমি-বাজারে ছোট ভাই গ্রাম্য ডাক্তার আসলামের ফার্মেসিতে চলছিল ঈদোত্তর আড্ডা। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি। চায়ের কাপে আমরা কয়েকজন ঝড় তুলছিলাম নানা বিষয়ে। এরই মধ্যে বাল্যবন্ধু মাসুম হঠাৎ প্রশ্ন ছুড়ে দিল, দোস্ত, রাজনীতিবিদরা যে আজ এ দল কাল সে দলে যায় এর কারণ কী? তারা তো সব সময় আদর্শের কথা বলেন। কিন্তু দলবদলের সময় সে আদর্শ কোথায় যায়? বড়ই কঠিন প্রশ্ন। এক কথায় জবাব দেওয়া আরও কঠিন। বললাম, রাজনীতিবিদদের দল বা পক্ষ বদল নতুন কোনো ব্যাপার নয়। তবে, আগের দলবদল আর এখনকার দলবদলে পার্থক্য আছে। আগে দলবদল হতো প্রকৃতই আদর্শগত কারণে। আর এখনকার দলবদল ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের হিসাব মাথায় রেখে করা হয়। বন্ধুকে নিরস্ত করতে চাইলাম এই বলে যে, রাজনীতির মতো জটিল বিষয় নিয়ে কথা বলে আজকের আড্ডার বারোটা বাজানোর দরকার নেই। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। তাই সংক্ষেপে যতটুকু সম্ভব বললাম।

অবিভক্ত ভারতেও রাজনীতিবিদরা দল বা পক্ষ বদল করেছেন। তবে, সে ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয় প্রাধান্য পেত না। আদর্শিক দ্বন্দ্বই তাদের দলবদলের প্রধান কারণ ছিল। পাকিস্তানের জনক খ্যাত কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন কংগ্রেস সদস্য। ১৯০৬ সালে ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার পরও তিনি কংগ্রেসেই ছিলেন। এমনকি বেশ কয়েক বছর তিনি একই সঙ্গে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে ১৯১৩ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগে যোগ দেন ও এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ব্রিটিশ-ভারতের রাজনীতিতে আরেকজন রাজনীতিবিদের দলবদল ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনি নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু। ১৯৩৯ সালের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে নিখিল ভারত কংগ্রেসের দ্বিতীয়বার সভাপতি নির্বাচিত হয়েও ওই পদে থাকতে পারেননি গান্ধীজির অসন্তুষ্টির কারণে। মোহনদাশ করমচাঁদ গান্ধী সুভাস বসুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। এর কারণ ছিল ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসন হটানোর পন্থা নিয়ে মতপার্থক্য। গান্ধীজি রাজনীতিতে বাঙালি সুভাষ বসুর উত্থানকেও সুনজরে দেখতেন না। এক রকম অনন্যোপায় হয়েই সুভাষ চন্দ্র বসু কংগ্রেস ত্যাগ করে গঠন করেন ‘অল-ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লক’।

ভারত বিভক্তির পরে সদ্য জন্ম নেওয়া পাকিস্তানে রাজনীতিবিদদের প্রথম দলবদলের ঘটনা ঘটে ১৯৪৯ সালে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিপরীতে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ; যার সভাপতি হন এক সময়ের মুসলিম লীগ নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতাদের প্রায় সবাই ছিলেন মুসলিম লীগের সাবেক নেতা। তাদের এ দলবদল ব্যক্তিগত কারণে ছিল না। ছিল আদর্শগত কারণে। মুসলিম লীগ সরকারের সাম্প্রদায়িক নীতি ও পূর্ববাংলার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণে ক্ষুব্ধ নেতৃবৃন্দ সময়ের চাহিদা মোতাবেক গঠন করেছিলেন নতুন দল। সে দল প্রথম ভাঙে ১৯৫৭ সালে; যার সূত্রপাত হয় কাগমারী সম্মেলনে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ও পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে মওলানা ভাসানীর তীব্র মতবিরোধ আওয়ামী লীগের ভাঙনকে অনিবার্য করে তোলে। একপর্যায়ে মওলানা ভাসানী বেরিয়ে আসেন আওয়ামী লীগ থেকে। গঠন করেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। এটাও ছিল আদর্শগত দ্বন্দ্বের ফসল। সংশ্লিষ্ট কারও ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয় এতে জড়িত ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশেও এ পর্যন্ত অনেক দলে ভাঙাগড়ার ঘটনা ঘটেছে। কোনোটি আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে, কোনোটি বিশেষ কারও স্বার্থের বিষয়কে কেন্দ্র করে। তবে কয়েকজন নেতার দল বা আদর্শ বদলের ঘটনা বাংলাদেশের সমকালীন ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে স্থান পেয়েছে। এ ধরনের দলবদলের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে। একটা সময় ছিল কোন নেতা কখন বোল এবং ভোল পাল্টে এরশাদের দলে চলে যাবেন তার নিশ্চয়তা ছিল না। সমালোচকরা এ প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছিলেন ‘পলিটিক্যাল হর্স ট্রেডিং’।

কাজী জাফর আহমদ। প্রথিতযশা শ্রমিক নেতা। এক সময় ভাসানী ন্যাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও একপর্যায়ে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) গঠন করে সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে যোগ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তবে ওই বছর বিএনপি গঠিত হলে ‘সামরিক শাসকের সঙ্গে দল করা যায় না’- এই যুক্তিতে বেরিয়ে যান ফ্রন্ট থেকে। তবে তার দলের সভাপতি ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী (অব.) কয়েকজন নেতাসহ বিএনপিতে যুক্ত হন। সেই কাজী জাফর আহমদও শেষ পর্যন্ত আরেক সামরিক শাসকের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। সম্পৃক্ত হয়েছিলেন স্বৈরশাসক এরশাদের দল জাতীয় পার্টিতে। কাজী জাফরের একটি কথা আমার এখনো খুব মনে পড়ে। ১৯৮৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের নগ্ন হামলার পর সাতদলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়ার পর সেখানে একটি রিকশার ওপর দাঁড়িয়ে কাজী জাফর আহমদ সমবেত জনতার উদ্দেশে বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আজ সেক্রেটারিয়েটে লাশ, মিটফোর্ডে লাশ, মেডিকেলে লাশ। লাশ আজ সারা বাংলায়। এত লাশ রাখব কোথায়? এ লাশ রাখব আমাদের মাথার তাজ করে।’ এর কিছুদিন পরেই একরাতে টেলিভিশনের খবরে দেখলাম, তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর করমর্দন করছেন প্রেসিডেন্ট এরশাদের সঙ্গে। মনে প্রশ্ন জেগেছিল, যে লাশকে মাথার তাজ করে রাখতে চেয়েছেন জাফর সাহেব, সে লাশগুলোর কথা কি মনে ছিল তার? স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে আবার তার হাতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ধন্য হওয়া নেতার সংখ্যা কম নয়। এ তালিকায় আছেন সিরাজুল হোসেন খান। খ্যাতিমান সাংবাদিক ও শ্রমিক নেতা। বক্তৃতায় তিনি এমন ভাষায় এরশাদকে আক্রমণ করতেন, মনে হতো, সামনে পেলে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন। অবশেষে তাকেও একদিন (১৯৮৫ সালের ৩ জুলাই) দেখা গেল এরশাদের হাতের উষ্ণতায় জীবন ধন্য করতে। এম কোরবান আলী ছিলেন আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতাদের একজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠজনও ছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম দিকে তিনিও ছিলেন প্রথম সারিতে। কিন্তু যেদিন তার ‘চিরশত্রু’ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এরশাদের মন্ত্রী হয়ে গেলেন, অমনি তিনিও ছুটলেন সেদিকে। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, দুই দিন আগে সদরঘাটের এক জনসভায় এরশাদকে তুলাধুনা করা এম কোরবান আলী মন্ত্রিত্বের শপথ নেওয়ার পর সহাস্যে করমর্দন করছেন এরশাদের সঙ্গে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দেশের একজন প্রখ্যাত নেতা। সরাসরি রাজনীতি না করলেও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। পেয়েছিলেন শেখ মুজিবুরের স্নেহ-সান্নিধ্য। জিয়াউর রহমান নেপথ্যে থেকে প্রথম যে দলটি গঠন করেন, সেই জাগদলের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। পরে সম্পৃক্ত হন বিএনপিতে। মন্ত্রী ছিলেন জিয়া কেবিনেটে। এরশাদ ক্ষমতা দখলের বছর দুয়েকের মধ্যেই তিনি রূপ পাল্টালেন। মন্ত্রী হলেন এরশাদের। জাতীয় পার্টি গঠিত হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন। এরশাদের বদান্যতায় হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, এমনকি উপ-রাষ্ট্রপতিও। ১৯৯৬ সালে এসে আবার পক্ষ বদল করলেন। পুনরায় ফিরে এলেন বিএনপিতে। জায়গাও পেলেন ভালো। একেবারে স্থায়ী কমিটির সদস্য। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার কেবিনেটে মন্ত্রী হলেন। কাজী জাফর থেকে ব্যারিস্টার মওদুদ যে কজনের কথা বললাম, তারা কি কোনো আদর্শের কারণে দল পাল্টেছেন? মুখে তারা বলেছেন, ‘দেশ এবং গণতন্ত্রের খেদমত’ করার জন্যই তাদের এ জার্সি বদল। কিন্তু আসল কথাটি হলো ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগ পাওয়া।

আরেকজনের কথা না বলে পারছি না। ছিলেন চিকিৎসক। জিয়ার আহ্বানে যোগ দেন রাজনীতিতে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিবের দায়িত্বও পান। মন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী থেকে উপবেশন করেছিলেন দেশের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ আসনেও। কিন্তু স্বীয় দলের কোপানলে পড়ে সাত মাসের মাথায় তাকে সে সিংহাসন ত্যাগ করতে হয়। এরপর তিনি নতুন একটি দল করেন। জোট বাঁধতে চেষ্টা করেন কয়েকজনের সঙ্গে। কিন্তু হয় না। ২০০৭ সালের অনুষ্ঠিতব্য (কিন্তু হয়নি) নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি নৌকার ছৈয়ের তলায় একটু ঠাঁই পাওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। ওয়ান-ইলেভেনের পর তিনি রূপ পাল্টালেন। অবশ্য দৃশ্যপটে থাকলেন না। সেখানে এলো তার পুত্রধন। ওই সরকারের পায়রোবি করার চেষ্টায় ব্রত হলেন। সে সময় ওই সরকার ‘রোড শো’ নামে রাষ্ট্রীয় অর্থের যে শ্রাদ্ধ করেছিল, তার নেপথ্য কারিগর নাকি ছিলেন ওই পুত্রধন। ফখরুদ্দীন-মইন ইউর সরকার বিদায় নেওয়ার পর তার বোধোদয় হলো তিনি আসলে বৃক্ষ নন, লতাগুল্ম। বৃক্ষের অবলম্বন ছাড়া তার বেঁচে থাকার উপায় নেই। তিনি আবার কাস্তে হাতে ঘুরতে থাকলেন ধান খেতের আশপাশে। গিয়েছিলেনও বেশ কাছাকাছি। একদা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ‘চোর’ বলে গালি দেওয়া ব্যক্তিটি বিএনপির ইফতার মাহফিলে আসন পেলেন খালেদা জিয়ার পাশের চেয়ারে। এতদসত্ত্বেও শিকে না ছেঁড়ায় ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তদীয় পুত্রপ্রবরকে তুলে দিলেন নৌকায়। এই যে রূপ বদল এটা কোন আদর্শের জন্য? হ্যাঁ আদর্শ একটা আছে বটে। তা হলো আত্মস্বার্থ হাসিল করা। এখানে কোনো নীতি-আদর্শের বালাই নেই।

এবার একজন আধ-মাঝারি রাজনীতিকের কথা বলব। এককালে তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রনেতার তেমন কোনো পরিচিতি ছিল না। ২০০৮ সালের (২৯ ডিসেম্বর) নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে তরুণ বয়সে এমপি নির্বাচিত হন পটুয়াখালীর একটি আসন থেকে। টেলিভিশন টকশোতে তার বাচনিক পাণ্ডিত্য তাকে বেশ পরিচিত করে তোলে। কিন্তু অজ্ঞাত এক কারণে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সরকারের ক্ষমতাধর এক ব্যক্তির সঙ্গে। এর ফলে পরবর্তী নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে মুজিব কোট খুলে ফেলে ধানমন্ডি থেকে ছুটে গেলেন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসে। আক্রার বাজারে তাকে পেয়ে বিএনপিও লুফে নিল। পেলেন দলের সদস্য পদ এবং মনোনয়নও। মুহূর্তে একজন ‘বঙ্গবন্ধুর সৈনিক’ পরিণত হলেন ‘জিয়ার সৈনিকে’। এখন তিনি ইউটিউবে যেসব টকশো করেন, শুনলে কারোরই মনে হবে না, এই ভদ্রলোক কখনো আওয়ামী লীগ করেছেন! তার এই ভোল বদল কি আদর্শজনিত?

এ পর্যন্ত বলার পর আমার শ্রোতাগণ বললেন, কথা একটাও মিথ্যা না। কিন্তু আমরা তো অসহায়, পুতুল। যেমনে নাচাও তেমনে নাচি পুতুলের কী দোষ? আমাদের তো যাওয়ার জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে এই ‘নীতিহীন নেতাদের’ শ্রদ্ধা জানানোর অভিনয় করি। বললাম, মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকে। রাজনীতির পচনও সেখান থেকেই শুরু।

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর