বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্রঋণের নামে ব্যবসা

নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রশংসনীয়

মহাকবি শেকসপিয়রের মার্চেন্ট অব ভেনিস দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি মঞ্চায়িত নাটক। এ নাটকের একটি চরিত্র সাইলক। একজন ইহুদি সুদখোর। কেউ তার কাছ থেকে অর্থ ধার করলে সময়মতো শোধ না করলে কঠিন মূল্য দিতে হতো। শেকসপিয়র সুদের ব্যবসায় সিদ্ধহস্ত ইহুদিদের যে নৃশংস চরিত্র তার নাটকে তুলে ধরেছেন তা নিয়ে মতদ্বৈততাও আছে। তবে বাংলাদেশে যারা ক্ষুদ্রঋণের নামে নির্দয় সুদের ব্যবসা করেন তাদের নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। কথিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সুদখোরদের ভয়ে আত্মহত্যার অনেক ঘটনা ঘটেছে এ দেশে। সুদের টাকা শোধ করতে না পারায় ঘরের টিন খুলে নেওয়ার ঘটনাও কম নয়। তারা সুদি ব্যবসাকে সর্বগ্রাসী আকারে সম্প্রসারিত করার ধান্ধায় জড়িয়েছে। এ প্রবণতার বিরুদ্ধে দেরিতে হলেও কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে উঠেছে সরকার। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো আর লাভজনক বাণিজ্যে জড়াতে পারবে না। অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যারা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে নিবন্ধন নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে লাভজনক বাণিজ্যে জড়ানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কোনো কোনো ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সদস্যদের ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ইলেকট্রনিকস পণ্য বা ভোগ্যপণ্য দিচ্ছে। এর বিপরীতে তারা আবার উচ্চ সুদে কিস্তিও নিচ্ছে।

এমনকি কর্মীদের প্রতি মাসে এ ধরনের পণ্য বিক্রির টার্গেট নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। টার্গেট পূরণ না হলে বেতন থেকে টাকা কেটে রাখারও অভিযোগ উঠেছে। এমআরএ আইন অনুযায়ী এ ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমআরএর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে ৭৩৯টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে আলোচ্য ১০ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৬৭ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে। তথাকথিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসার সম্প্রসারণ রোধে প্রজ্ঞাপনটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সর্বশেষ খবর