সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিক্ষা ক্ষেত্রে মওলানা ভাসানী

প্রফেসর মো. শহীদুজ্জামান মিয়া

শিক্ষা ক্ষেত্রে মওলানা ভাসানী

মানুষকে আদিম বর্বরতা থেকে আলো, সত্য-সুন্দর ও সফল জীবনের সন্ধান দিয়েছে শিক্ষা। শিক্ষাই মানুষকে দিয়েছে সুনির্মল পরশ, জাগ্রত করেছে তার আত্মিক সুপ্ত চেতনাকে, উদ্ভাসিত করেছে তার ধ্যান-জ্ঞান ও ভাবনার জগৎকে; মানুষের কর্ম-প্রয়াসকে করেছে আধুনিক, কল্যাণমুখী ও নান্দনিক, আপ্লুত করেছে প্রাতিস্মিকতায়। সুষ্ঠু ও অবারিত জ্ঞানচর্চাকে অবরুদ্ধ রেখে কোনো দেশ ও জাতি কখনো উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে পারে না।

মার্জিত ও কাক্সিক্ষত সমাজ, স্বনির্ভর দেশ নির্মাণে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এ সত্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন গণমানুষের অকুতোভয় মজলুম জননেতা মরহুম আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯৫৭ সালের ঐতিহাসিক ‘কাগমারী সম্মেলন’- উত্তরকালে তিনি অনুধাবন করতে পারেন হতভাগা ও সম্ভাবনাময় দেশবাসীর ভাগ্যের গুণগত ও যথার্থ পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা অতীব জরুরি। সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু ও খেলাফত আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মওলানা মোহাম্মদ আলীর নামে আধ্যাত্মিক পুরুষ পীর শাহজামানের পুণ্য স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক কাগমারীর নিভৃত পল্লীতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ’। টাঙ্গাইল শহরতলির অতি সন্নিকটে ছায়াঘেরা সবুজ বৃক্ষরাজি সুশোভিত শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও সুখ্যাতি মজলুম জননেতার মতোই কালের পরিক্রমায় ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। কালের খেয়ায় ভর করে এ মাটিতে ১৯৭৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পদার্পণ করেন নব্য স্বাধীন দেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রবাদপুরুষ জাতীয়করণ করেন প্রতিষ্ঠানটিকে। জাতীয় জীবনে সীমাহীন অবদান রেখে প্রতিষ্ঠানটি অতিক্রম করেছে তার মহিমামন্ডিত অর্ধশত বছর। স্বাধীনতার পূর্বাপরে এখানকার বহু শিক্ষার্থী দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। কলেজটির শিক্ষার পরিবেশ ও অনুকরণীয় সাফল্য কলেজটিকে বহুবার সমাসীন করেছে জেলায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে। একই সঙ্গে কলেজটির অধ্যক্ষ ও একাধিক শিক্ষক শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করেছেন। যুগোপযোগী শিক্ষার পরিবেশের কারণে কলেজটির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিদ্যার্থীদের আগ্রহ বিবেচনায় উচ্চমাধ্যমিকের তিনটি বিভাগ ও স্নাতক (পাস) কোর্সসহ এখানে ১৫টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়; প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও ৮টি বিষয়ের স্নাতকোত্তর কোর্স। শিক্ষার্থীদের সার্বিক সুবিধা বিবেচনায় এবং প্রশাসনিক গতিসঞ্চারে পরিবহন পুলে রয়েছে একটি মাইক্রোবাস ও ৬টি শিক্ষার্থী পরিবহন বাস। পাঠচর্চার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক ও নৈতিক বিকাশের জন্য এখানে রয়েছে রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, বিএনসিসির মতো মানবিক সংগঠন। নিয়মিত খেলাধুলা, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, শিক্ষা সফর, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জাতীয় অনুষ্ঠানসমূহে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানবিক মানুষ, যোগ্য নাগরিক ও সঠিক নেতৃত্ব তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি অনুকরণীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। কলেজের সুবিশাল ও বিস্তীর্ণ খেলার মাঠ, শহীদ মিনার, ফলদ-বনজ-ঔষধি নানাবিধ বৃক্ষ শোভিত সুশীতল নয়নাভিরাম পরিবেশ বরাবরই মন-প্রাণ কেড়েছে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও পথচারীদের। তাই দেশের ভবিষ্যৎ দেশপ্রেমিক ও আদর্শ নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রে এ কলেজের প্রচেষ্টা কখনো ভাটা পড়বে না; রং তার বহতা রবে অবিরত অনাধির পথে।

লেখক : অধ্যক্ষ, সরকারি মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, কাগমারী টাঙ্গাইল

সর্বশেষ খবর