মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাউকে কাউকে মেঘে ঢাকা তারা হয়ে থাকতে হয়

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

কাউকে কাউকে মেঘে ঢাকা তারা হয়ে থাকতে হয়

এক. ‘দাদা আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম... দাদা, আমি যে সত্যি সত্যি বাঁচতে চেয়েছিলাম, দাদা আমি যে বড় বাঁচতে ভালোবাসি, দাদা আমি বাঁচব, দাদা আমি বাঁচব, দাদা তুমি একবার বল আমি বাঁচব।’ ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সিনেমার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অভিমানী ডায়ালগটি খুব বেশি মনকে আহত করল, বোবাকান্নায় বাষ্পরুদ্ধ হলো বুকটা।

এই তো পৃথিবী, যেখানে কাউকে কাউকে মেঘে ঢাকা তারা হয়ে থাকতে হয়। সংসারের বোঝা টানতে টানতে তাদের চোখের আড়ালে চলে যেতে হয়। সংসারের স্বার্থপর মানুষ তাদের জন্য তিলে তিলে ক্ষয়ে যাওয়া মানুষটাকে ভুলেই যায় হয়তো। সংসারের সবাই যখন উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে, তখন মেঘে ঢাকা মানুষটার জীবন বাস্তবতার নির্মম জাঁতাকলে পুড়তে থাকে। অথচ কি অদ্ভুত, যেদিন সবাই খুব অসহায় ছিল সেদিন সেই মেঘে ঢাকা মানুষটাই তারার মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলতে জ্বলতে সংসারে সুখ আনার নিরন্তর লড়াই করছিল। মানুষ মানুষের প্রিয়জন হয় না, প্রয়োজন হয়, তাতে রক্তের সম্পর্ক থাকুক আর নাই বা থাকুক।

ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’র কথা বলছি। ১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি শক্তিপদ রাজগুরুর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। হয়তো কারও কারও কাছে এটা নিছক সিনেমা ছাড়া কিছুই না। কিন্তু প্রতিদিন এমন নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। তখন মনে হয়, মেঘে ঢাকা তারাটা আর কেউ নয়, হয়তো আমি নিজেই। কিংবা আমাদের কোনো আপনজন, যে সবাইকে আগলে রাখতে গিয়ে নিজের অস্তিত্বই হারিয়ে ফেলেছে। অথচ কেউ তাকে মনে রাখেনি, কেউ কথা রাখেনি। পোড় খাওয়া একটা মানুষ ঋত্বিক ঘটক তাই হয়তো সিনেমার দর্শকদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আমি প্রতি মুহূর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বোঝাব যে, It is not an imaginary story, বা আমি আপনাকে সস্তা আনন্দ দিতে আসিনি। যা দেখছেন তা একটা কল্পিত ঘটনা, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে যেটা বোঝাতে চাইছি আমার সেই থিসিসটা বুঝুন, সেটা সম্পূর্ণ সত্যি।’

মেঘে ঢাকা তারার মুখ্য চরিত্র নীতা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সংগ্রামমুখর একটি মুখ, যে নিজের স্বপ্নগুলো হত্যা করে বাঁচিয়ে রাখতে চায় সংসারের অন্যদের স্বপ্নগুলো। নীতা সেই মানুষটি যে নিজেকে অন্ধকারে লুকিয়ে রেখে সংসারের সবাইকে সূর্যের আলোয় আনতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। খুব চেনা চেনা হয়তো লাগছে কিন্তু স্বার্থপর মানুষ তার থেকে সবটুকুই নেবে, তার ত্যাগকে মনে রাখবে না এতটুকুই। ছেঁড়া চটিজোড়া নিয়ে পিচঢালা রাস্তার সঙ্গে লড়াই করলেও নীতারা নিজেদের প্রয়োজনের কথা ভাবে না, বরং ছোট বোন গীতাকে নতুন শাড়ি, ছোট ভাই মন্টুকে ফুটবল খেলার জন্য বুট, দাদা শংকরকে একটা পাঞ্জাবির কাপড় কিনে দেওয়ার কথা ভাবে। নিঃস্বার্থ হয় এমন মানুষগুলো, যাকে দুঃসময়ে ঘিরে থাকে চেনা মুখগুলো।

জীবনের কঠিন সময়েও নীতার জীবনে সনৎ প্রেম হয়ে এসেছিল, বিয়ে হবে হবে করে সংসারের বোঝা টানতে টানতে আর বিয়ে হয়নি। নীতা বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল সনৎকে, অথচ রঙের পৃথিবী সেটার মর্ম কি কখনো বোঝে! ভাগ্যের পরিহাস হলো সনতের সঙ্গে নীতার বিয়ে হয়নি, সনতের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল নীতার ছোট বোন গীতার। একসময় জীবনের কঠিন বাস্তবতার ঝাপসা আয়নায় মনের অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় নীতা। সংসারে যখন সুখ, নীতার মন ভেঙে শরীরে তখন অসুখ। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নীতার আবার নতুন করে বেঁচে ওঠার আকুতিটা পাহাড়ের চারপাশ ভেদ করে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে বারবার।

নিয়তি কি শুনবে সে কথা। পৃথিবীতে কেউ কারও নয়, যার যার তার তার। অথচ মেঘে থাকা তারারা নিজেদের না, তারা সবার। সবার আড়ালেই তাদের জন্ম হয়, সবার আড়ালেই তাদের মৃত্যু হয়। ট্রেনটা খুব জোরে চলছে... স্টেশনটা কোথায় তা ট্রেনটা নিজেও জানে না। মেঘগুলো কাঁদছে তারাদের জন্য... মানুষের কানে তা কখনো পৌঁছে না। টিনে ঝাঁপিয়ে পড়া বৃষ্টির মধ্যে মানুষ আনন্দ খোঁজে, কান্নাদের আকুতিকে খোঁজে না।

দুই. হুমায়ুন আজাদ খুব মূল্যবান একটা কথা বলেছেন, ‘সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য বলে মনে হয়।’ সত্য আসলে কোনটা? মানুষ যেটাকে সত্য বলছে সেটা, নাকি মানুষ যেটাকে মিথ্যা বলছে সেটা? সত্য বলার জন্য অনেক অনেক বছর আগে সক্রেটিসকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। যারা সেদিন সক্রেটিসকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল তারা ভেবেছিল তারা সত্য বলছে, অথচ সময় স্রোতের তোড়ে ভাসতে ভাসতে একটা সময়ে এসে বলছে, যারা ভেবেছিল সত্য বলছে, তারাই মিথ্যা বলেছিল। আর সক্রেটিস হেমলক নামের বিষ পান করতে করতে সে সময়ই ভেবেছিলেন, সত্যকে প্রমাণ করতে কখনো কখনো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়। সক্রেটিসের সুযোগ ছিল পালিয়ে যাওয়ার কিন্তু তিনি পালিয়ে যাননি। কারণ তিনি জানতেন, তিনি যদি পালিয়ে যান তবে সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে। আপনি কি ভাবছেন, বাইরে থেকে যেটা সবার সামনে বলছেন বা দেখানোর চেষ্টা করছেন, সেটা সত্য? নাকি আপনার ভিতরে যেটা নীরবে-নিভৃতে ঝড়ের মতো বইছে, অথচ যেটা বললে বা দেখালে সবাই আপনার আসল রূপটা চিনে ফেলবে সেটা?

মনে রাখতে হবে, সত্যের ভিতরেও সত্য থাকে, সত্যের ভিতরেও মিথ্যা থাকে, মিথ্যার ভিতরেও সত্য থাকে, মিথ্যার ভিতরেও মিথ্যা থাকে। অনেক সময় সাধারণ মানুষকে মিথ্যাকে সত্য বলে দেখানো হয়, সত্যকে মিথ্যা বলে দেখানো হয়। আসলে সত্য-মিথ্যা খুব সরল সরল, খুব জটিল জটিল একেকটা থিওরি। অনেকটা ফুলের গন্ধের মতো, যে গন্ধকে চোখ দিয়ে দেখা যায় না, অনুভব করা যায়। তবে অনুভবও কখনো কখনো বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, বিশ্বাসে বিষ পুশ করে অনুভবে লোভ ছড়ায়। অনুভব থেকে জন্ম নেয় অনুভূতি। অনুভূতি খুব কঠিন বিষয়। কেউ অনুভূতির মূল্য দিতে গিয়ে নিজের সব বিলিয়ে দেয়, কেউ অনুভূতিকে ব্যবহার করে মানুষের সব কেড়ে নেয়। একটা বিখ্যাত চিত্রকর্মের ভাবার্থ মনে পড়ল। যেখানে বলা হচ্ছে, যেটাকে আমরা সত্য বলে চোখে দেখছি সেটা নাকি সত্য নয়, সত্যের মুখোশ পরা মিথ্যা। এ প্রসঙ্গে ফরাসি একজন চিত্রকর জিনলেওন জেরোমের ১৮৮৬ সালে আঁকা বিখ্যাত একটি ছবি Truth Coming Out of Her Well-এর বিষয়বস্তুকে টেনে আনা হয়েছে। উনিশ শতকের একটি লোককথাকে ভিত্তি করে ছবিটি আঁকা হয়েছিল।

গল্পটা ছিল এ রকম : সত্য আর মিথ্যা কথা বলতে বলতে একদিন রাস্তা দিয়ে চলছিল। এভাবে চলতে চলতে দুজনে একটা কুয়োর সামনে এসে দাঁড়াল। মিথ্যা খুব আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বলল, দেখ দেখ, কত স্বচ্ছ পানি। আহা, এই পানিতে গোসল করতে পারলে কত আনন্দটাই না হতো। চল, দুজনে মিলে গোসল করতে নেমে পড়ি। সত্যের বরাবরই মিথ্যাকে সন্দেহ, কিন্তু সত্য যখন নিজে পরখ করে দেখল মিথ্যা সত্যই বলছে, কুয়োর পানি আসলেই অনেক পরিষ্কার, ঠিক যেন স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো। সত্য পানির স্বচ্ছতা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে কুয়োর পানিতে গোসল করার মিথ্যার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। দুজনেই শরীরের পোশাক খুলে কুয়োর পানিতে নেমে পড়ল। সত্য যখন গোসলের আনন্দে আত্মহারা, সেই সুযোগে মিথ্যা কুয়ো থেকে ওপরে উঠে এসে সত্যের পোশাক পরে পালিয়ে গেল। সত্য দীর্ঘক্ষণ ধরে মিথ্যার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল, কিন্তু মিথ্যার দেখা মিলল না। একসময় বিরক্ত হয়ে সত্য কুয়োর ওপরে উঠে এলো। এদিক-ওদিক-চার দিক বারবার তাকিয়ে মিথ্যাকে খোঁজ করতে লাগল। না, মিথ্যা তো কোথাও নেই, পোশাকও নেই। নিজের ওপর নিজের ক্ষোভ হলো সত্যের, এরপর সত্য মিথ্যাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ল, পাগলের মতো মিথ্যাকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু নগ্ন সত্যকে দেখে সভ্য দুনিয়ার মানুষ ছি ছি করতে লাগল, এমনকি তেড়েও এলো অনেকে। সত্য পৃথিবীর মানুষকে আকুতি-মিনতি করে নিজের বিপর্যয়ের কথা বোঝানোর চেষ্টা করল, সে যে সত্য তা চেনানোর আপ্রাণ চেষ্টা করল। কিন্তু কোনোভাবেই মানুষকে বোঝাতে পারল না। সব চেষ্টা যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো তখন রাগে-দুঃখে, অপমান-অভিমানে সত্য আবার কুয়োর ভিতর নেমে গেল।

এরপর সত্যের দেখা আর কখনো মেলেনি। মানুষ সত্য বলে যাকে দেখছে কিংবা সত্য বলে বিশ্বাস করছে সেটা সত্য নয়, সত্যের পোশাক পরা মিথ্যা।

আসলে মিথ্যাটা সত্যের পোশাক পরেছে, প্রতিদিন মার খাচ্ছে সত্য। মিথ্যা এখন আলোর ভিতর দিয়ে বুক ফুলিয়ে চলে, সত্য অন্ধকারে নিজেকে লুকিয়ে রাখে।

সময় কি তবে বদলাবে না?

হয়তো বদলাবে, যেদিন মিথ্যা সীমা লঙ্ঘন করতে করতে সত্যের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দেবে সেদিন হয়তো সত্য ঘুরে দাঁড়াবে, রুখে দাঁড়াবে, গুঁড়িয়ে দেবে মিথ্যার দম্ভ। স্বপ্ন দেখতে টাকা লাগে না, ক্ষমতা লাগে না, সত্যকে জয় করার আত্মবিশ্বাস লাগে।

তিন. স্বপ্ন ভেঙে গেলে তুমি ভেঙে পোড়ো না। বরং তখন তুমি তোমাকে আয়নার মতো করে ভাবতে পারো। আয়না ভেঙে গেলে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, তখন একটা বড় আয়না থেকে অনেকা ছোট ছোট আয়নার জন্ম হয়। তোমার স্বপ্ন ভেঙে গেলে সেই স্বপ্নের ভিতরে লুকিয়ে থাকা অনেক ছোট ছোট স্বপ্ন তখনো বেঁচে থাকে। মনে রেখো, সেই লুকিয়ে থাকা স্বপ্নগুলো তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে, পৃথিবীতে এমন কাউকে পাবে না যে তোমার স্বপ্নগুলো খুঁজে দেবে। হয়তো মানুষ তোমাকে স্বপ্ন দেখাতে চাইবে, স্বপ্নের লোভ দেখাবে, সেটা সেই মানুষটার স্বপ্ন, তোমার স্বপ্ন নয়, সেটা সেই মানুষটার লোভ, যে লোভটাকে সে তোমার জন্য স্বপ্ন বানিয়ে নিজের স্বার্থটাকে উদ্ধার করবে, তারপর তোমাকে আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলবে।

পৃথিবীতে চরমতম সত্য হলো, কারও স্বপ্নের সঙ্গে কারও স্বপ্ন মিলে যায় না, একেকজনের স্বপ্ন একেকরকম হয়। তুমি যদি অন্যের ওপর নির্ভর করে তোমার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে চাও, তবে সবচেয়ে বড় ভুলটা তখন তুমি করবে। স্বপ্নে নির্ভরতা থাকতে নেই, স্বপ্নে নিজের স্বাধীনতা থাকতে হয়, না হলে তোমার স্বপ্ন চুরি হয়ে যেতে পারে। স্বপ্ন চুরি হয়ে যায়, স্বপ্ন চোরেরা ভয়ংকর মানুষের চেয়েও ভয়ংকর হয়।

স্বপ্ন ছোট হলেই তা মূল্যহীন হয়ে যায় না। সারা পৃথিবীর মানুষ এখন ক্রমে বড় থেকে ছোটর দিকে ছুটছে, ম্যাক্রো থেকে মাইক্রো, মাইক্রো থেকে ন্যানোর দিকে ঝুঁকছে। আইনস্টাইনের I=mc2-এর মতো ছোট একটা সমীকরণের ভিতরে অনেক গভীর থেকে গভীরতর বিজ্ঞানের পৃথিবী লুকিয়ে আছে, যার দাম কখনো ফুরাবে না। স্বপ্নটাও ঠিক এমনই, স্বপ্ন যত ছোট হয়, স্বপ্ন তত গভীর হয়, ছোট ছোট স্বপ্ন মানুষকে বড় বড় স্বপ্নের দিকে টেনে নিয়ে যায়।

আকাশে ছোট ছোট তারাদের অন্ধকারে দেখতে দেখতে নিজের জীবনের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো দেখা যায়। সূর্য অনেক বড়, আলোর ভিতর ডুবে থাকে অথচ সূর্যের তাপ শরীর থেকে ঘাম ঝরায়, সূর্যের কাছে স্বপ্নের চেয়ে বাস্তবতার দাম বেশি। সূর্যে পুড়লে স্বপ্ন পুড়ে যায়। স্বপ্ন যখন পুড়ে যায় তখন ছাইয়ের ভিতর স্বপ্নকে খুঁজতে হয়। খুঁজতে খুঁজতেই স্বপ্নের খোঁজ মেলে।

যারা ভাবে স্বপ্ন হারিয়ে গেছে তারা ভুল করে ভাবে। স্বপ্ন নদীর ভাঙা-গড়ার মতো। স্বপ্ন ভেঙে গেলে হতাশ হতে নেই, জীবনকে থামিয়ে দিতে নেই, বরং স্বপ্নের ভাঙা-গড়া খেলার মধ্যে নিজেকে টিকিয়ে রাখার লড়াইটা শেষ পর্যন্ত করে যেতে হয়। পরপর তিনটি আত্মহত্যা। খুব অদ্ভুত একটা বিষয় হলো এদের তিনজনই একদিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বের হতেন, কিন্তু এখন তারা স্মৃতি, সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে। আমাদের দেশের নামকরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তারা। তাদের ক্যামেরাবন্দি ছবিগুলো এখনো আছে, তারা নেই। কারণ তারা স্বপ্নের ভঙ্গুর রূপটাই বেশি দেখেছেন, স্বপ্নের ভঙ্গুর রূপের ভিতর যে আরও অনেক ছোট ছোট স্বপ্ন পুঞ্জীভূত হয়ে আরও অনেক স্বপ্নের দ্বার উন্মোচিত করে রেখেছিল, তা দেখার চেষ্টাই করেননি। স্বপ্ন হারিয়ে গেলেও যে স্বপ্নকে ফিরিয়ে আনতে নতুন সাহসের জন্ম দিতে হয়, সে পথে তারা হাঁটেননি। খুব অসহায় লাগে যখন দেখি এমন একটা প্রজন্ম জন্ম নিচ্ছে যারা সব পথ বন্ধ হয়ে গেলে ভয় পায়, অথচ পথ বন্ধ হলেই যে পথ খোলার মতো চ্যালেঞ্জগুলো নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় তা তারা বোঝেন না। ঝুলন্ত মানুষ, স্বপ্নগুলোও ঝুলন্ত অথচ মাটির ওপর পা রেখে যতদূর আকাশ দেখা যায় ততদূর পর্যন্ত যে ছোট ছোট স্বপ্নগুলো আকাশ থেকে খসে খসে পড়ে একদিন মানুষের হাতের মুঠোয় আসবেই, সেই বিশ্বাসটাতেই যেন ঘুণে ধরেছে। এখন তাই দরকার ঘুরে দাঁড়ানোর, নিজের চোখ দিয়ে নিজের স্বপ্নকে চেনার, নিজের হাত দিয়ে নিজের স্বপ্নকে ধরার।

 

লেখক : শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও লেখক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

সর্বশেষ খবর