বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজস্ব আদায়

সঠিক পথে এগোতে হবে

আমাদের এই ভূখণ্ডে সেই পাল আমল থেকে সেন, সুলতান এবং মুঘল আমলের কর ব্যবস্থার কথা অনেকেরই জানা। সে সময় মোট কৃষি উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশই কর হিসেবে আদায় করা হতো। তুলনামূলকভাবে অনেক অনেক বেশি সভ্য যে ইংরেজরা প্রায় পৌনে দুই শ বছর আমাদের শাসন করেছে তাদের কর ব্যবস্থাও ছিল কমবেশি নিষ্ঠুর। বাড়তি করের কারণে কৃষক এবং কারিগররা অনেক সময় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাত। শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত এটা যেমন সত্যি, তার চেয়েও বেশি সত্যি সে আমলেও দুর্ভিক্ষে প্রায়ই প্রাণহানি ঘটত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর করের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা ভোগের প্রবণতা শুরু হয়। ১৭ কোটিরও বেশি মানুষের দেশে করযোগ্য আয় করেন এমন মানুষের বড় জোর এক-চতুর্থাংশ করের আওতায়। তাদের কত অংশ সঠিকভাবে কর দেন সে বিষয়টিও প্রশ্নাতীত নয়। ফলে রাজস্ব আয়ের টার্গেট প্রতি বছর অপূরণীয় থেকে যাচ্ছে। বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি বছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তা অর্জন তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ বারবার ব্যর্থ হলেও চলতি অর্থবছর ৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকার একটি বড় আকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের মূল ও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ পূর্ণ হিসাবকালে দেখা যাবে বিদায়ী বছরেও রাজস্ব টার্গেট পূরণ হয়নি। রাজস্ব আয় দেশের সমৃদ্ধির চাবিকাঠি। সমৃৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কর ফাঁকি দূর করতে হবে। কর ভীতির অবসান ঘটানোও জরুরি। রাজস্ব আদায়ে পাহাড় সমান টার্গেট না করে কর ফাঁকিবাজদের খুঁজে বের করতে হবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর