শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

হানাফি মাজহাব

হানাফি মাজহাব ইসলামের সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মাজহাব (স্কুল) এবং এর অনুসারীর সংখ্যাও সর্বাধিক। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মধ্য এশিয়া, তুরস্ক, মিসর ও আফগানিস্তানের মুসলমানরা এ মাজহাবের অনুসারী। ইমাম আবু হানিফা আল-নুমান-বিন-সাবিত (৭০০-৭৬৭ খ্রি.) এ মাজহাব প্রতিষ্ঠা করেন এবং তারই নাম অনুসারে এর নাম হয় হানাফি মাজহাব। ইমাম আবু হানিফা (রা.) হিজরি ৮১ (৭০০ খ্রি.) সালে সিরিয়ার কুফায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পারস্যের প্রাচীন সাসানীয় রাজবংশের সমর্থক। ইমাম আবু হানিফা শিয়া মাজহাব সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি শিয়া মাজহাব পরিত্যাগ করে নিজস্ব মাজহাব গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ইমাম আবু হানিফা মুসলিম ব্যবহার তত্ত্বের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। হাদিস-কোরআনের ব্যাখ্যায় তথ্যজ্ঞানের ও অবরোহমূলক যুক্তিতর্ক প্রয়োগে তার তুলনা ছিল না। তিনি আধ্যাত্মিক ও পার্থিব কানুনের এক সিলসিলা (ধারা) প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার অনুসারীরা এর বিকাশ সাধন করেন। আজও তার মাজহাব প্রাচ্যের অধিকাংশ স্থানে, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্য এশিয়ায় সর্বজনীন স্বীকৃতি লাভ করেছে। তার শিষ্য আবু ইউসুফ তার ‘কিতাবুল খারাজ’ গ্রন্থে হানাফি মতবাদ ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। কথিত আছে, আবু হানিফা ‘ফিকাহ-ই-আকবর’ নামে একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন। ইমাম আবু হানিফা নিঃসন্দেহে তার যুগের তথা সমগ্র মুসলিম জাহানের সর্বোত্তম আইনবিদ ছিলেন। তার রচিত কানুনের ভিত্তি ছিল কোরআন মজিদ। হাদিসের নির্ভরযোগ্যতার ওপর পূর্ণ সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি তা গ্রহণ করতেন না। সাদৃশ্যমূলক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কোরআনের উক্তিকে তিনি সর্বক্ষেত্রে যে কোনো অবস্থায় প্রয়োগযোগ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন। আবু হানিফাই প্রথম আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কিয়াস বা সাদৃশ্যমূলক যুক্তির মূল্যের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি সাম্য নীতির পত্তন করেন। আবু হানিফা প্রচলিত রীতি ও প্রথার প্রাধান্য স্বীকার করতেন এবং এগুলোকে আইন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করেন। আইনের ব্যাখ্যার সময় প্রচলিত অবস্থা বিবেচনা করতে তিনি তার অনুসারীদের উৎসাহিত করতেন। তিনি ব্যক্তিগত বিচার ক্ষমতার ওপর এত গুরুত্বারোপ করতেন যে, অন্য মাজহাবের অনুসারীরা তাকে ও তার শিষ্যবর্গকে ‘আহলে রায়’ অর্থাৎ যুক্তিবাদী বলে অভিহিত করত। হানাফি মাজহাবকে সবচেয়ে উদার মতাবলম্বী আইন পদ্ধতি বলা হয়। আবু হানিফা ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীনচেতা মানুষ। জীবনের শেষ দিকে খলিফা আল-মনসুর তাকে কাজি পদে নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি অস্বীকৃত হন। কারণ তিনি নিশ্চিত জানতেন, এ সরকারি অনুগ্রহ তার স্বাধীন চিন্তাধারা ব্যাহত করবে। ফলে তাকে কারাবাস ভোগ করতে হয়। ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে ইমাম আবু হানিফা ইন্তেকাল করেন।

আবদুর রশিদ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর