শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাজিদের হজ পরবর্তী আমল

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

হাজিদের হজ পরবর্তী আমল

সৎকর্ম কবুল হওয়ার অন্যতম নিদর্শন হলো- সৎকর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। নেক কাজের প্রতি আরও উৎসাহিত হওয়া। আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণে বেশি পরিমাণে আত্মনিয়োগ করা। কোরআন সুন্নাহর অগণিত বর্ণনায় এমনটাই প্রমাণ হয়। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থেকে বর্ণিত আছে, ‘সৎকর্মের প্রতিদান হলো এরপর সৎকর্ম এবং অপকর্মের প্রতিদান হলো এরপর অপকর্ম করে যাওয়া।’ হজের পর হাজিদের পাপমুক্ত জীবনযাপনই হলো হজ কবুল হওয়ার অন্যতম নিদর্শন। যাদের হজ কবুল হয়েছে, তাদের জীবনের মোড় এবং আমলের অভিযাত্রা ঘুরে যাবে। পাপমুক্ত জীবন গড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। যত্নবান হবে আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রসুলের আনুগত্যের প্রতি। মহান প্রভু ইরশাদ করেন, ‘আর যখন তোমরা হজের যাবতীয় কাজ সমাপ্ত করবে, তখন স্মরণ করবে আল্লাহকে, যেমন করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের বাপ-দাদাদের।’ (সুরা আল বাকারা-২০০)। হজের অন্যতম একটি ফরজ কাজ হলো- আরাফায় অবস্থান করা। আরাফায় অবস্থান পরবর্তী রাতে মুজদালিফা নামক স্থানে আল্লাহতায়ালাকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করার প্রতি উল্লিখিত আয়াতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তবে হজ-পরবর্তী সময়ে আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করা এবং নিয়মিতভাবে তাঁর ইবাদতে মগ্ন থাকার বিষয়ে নির্দেশনা এই আয়াতে রয়েছে, এতে কোনো অস্পষ্টতা নেই। জানার বিষয় হলো- আল্লাহর জিকির বা স্মরণ করা অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। নামাজ আদায় করা, তাসবিহ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত করা- সবই আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। অতএব কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাই হাজিদের হজ পরবর্তী প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত। ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবের লোকজন হজ পালন করত। তাই আল্লাহতায়ালা জাহেলি যুগের সেই প্রথা পরিবর্তন করার লক্ষ্যে মুসলমানদের হজ পরবর্তী আল্লাহর জিকির তথা তাঁর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। বলা বাহুল্য, হজ একটি কঠিন কাজ, আর্থিক ও শারীরিক মহৎ একটি ইবাদত। মহান প্রভু যাকে এ মূল্যবান ইবাদতটি পালন করার তৌফিক প্রদান করেছেন তাদের গর্ব বা অহংকার করার কিছু নেই। আছে শুধু আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করার প্রয়োজন। আল্লাহর প্রশংসা করা, জিকির করা, নিষিদ্ধ কাজ বর্জন করা, মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করা, গরিব মিসকিনদের সহযোগিতা করা, তাদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা ও নিয়মিত ইবাদত বন্দেগি করা ইত্যাদি আল্লাহতায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্যতম উপায়। মোটকথা হলো- মাবরুর হজ যার নসিব হয়েছে সে ব্যক্তি সদ্য প্রসূত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। তাই হজ পালনকারী হজ পরবর্তী জীবনের যাবতীয় ক্ষেত্রে নিজেকে কলুষমুক্ত রাখার প্রচেষ্টা করাই সমীচীন। তাদের উচিত আল্লাহর বিধানগুলো পালন করার প্রতি যথাযথভাবে পরিপূর্ণ মনোনিবেশ করা। উচিত হিংসা, বিদ্বেষ, পরনিন্দা, ঝগড়া-বিবাদ ও অকারণে বিতর্কে জড়ানো ইত্যাদি অপকর্মকে চিরতরে পরিহার করা।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর