শিরোনাম
শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিতুমীর

তিতুমীর

জমিদার এবং ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচার প্রতিরোধ এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে পরিচালিত আন্দোলনের নেতা তিতুমীরের প্রকৃত নাম সাইয়িদ মীর নিসার আলী। পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে ১১৮৮ বঙ্গাব্দের ১৪ মাঘ তাঁর জন্ম। ১৮২২ সালে তিতুমীর হজব্রত পালনের জন্য মক্কা শরিফ যান এবং সেখানে তিনি বিখ্যাত ইসলামী ধর্ম সংস্কারক ও বিপ্লবী নেতা সাইয়িদ আহমদ বেরেলির সান্নিধ্য লাভ করেন। সাইয়িদ আহমদ তাঁকে বাংলার মুসলমানদের বিদেশি শক্তির পরাধীনতা থেকে মুক্ত করা ও ইসলামী অনুশাসন বিস্তারের কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৮২৭ সালে মক্কা থেকে দেশে ফিরে তিতুমীর চব্বিশ পরগনা ও নদীয়া জেলায় মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী অনুশাসন প্রচার শুরু করেন। বিশেষ করে তাঁতি ও কৃষকদের মধ্যে তিনি ব্যাপক প্রচারকার্য চালান। অচিরেই মুসলমানদের প্রতি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং তাদের ওপর অবৈধ করারোপের জন্য পুরার হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ও অপরাপর জমিদারদের সঙ্গে তিতুমীর সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এ প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা এবং কৃষকের নিরাপত্তা দানের লক্ষ্যে তিতুমীর এক মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে তাদের লাঠি ও অপরাপর দেশীয় অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ দান করেন। তাঁর অনুসারী ও ভাগিনেয় গোলাম মাসুমকে বাহিনীর অধিনায়ক করা হয়। তিতুমীরের শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে জমিদাররা তাঁর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ সৃষ্টি এবং যুদ্ধে ইংরেজদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালান।

তিতুমীর ১৮৩১ সালের অক্টোবর মাসে নারকেলবাড়িয়ায় এক দুর্ভেদ্য বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। তিনি তাঁর মুজাহিদ বাহিনীতে বিপুল সংখ্যক মুজাহিদ নিয়োগ করে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দান করেন। অচিরেই তিনি চব্বিশ পরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলায় স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিতুমীর তাকি ও গোবরডাঙার জমিদারদের কাছে কর দাবি করলে তারা ইংরেজদের শরণাপন্ন হন। কলকাতা থেকে এক ইংরেজ বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরিত হয়। কিন্তু ইংরেজ ও জমিদারদের সম্মিলিত বাহিনী মুজাহিদদের কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। অবশেষে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে ১০০ অশ্বারোহী, ৩০০ স্থানীয় পদাতিক, দুটি কামানসহ গোলন্দাজ সৈন্যের এক নিয়মিত বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর ইংরেজ বাহিনী মুজাহিদদের ওপর আক্রমণ চালায়। মুজাহিদরা সাবেকী ধরনের স্থানীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে বাঁশের কেল্লায় আশ্রয় নেয়। ইংরেজরা কামানের গোলাবর্ষণ করে কেল্লা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দেয়। বিপুলসংখ্যক মুজাহিদ প্রাণ হারান। ১৯ নভেম্বর বহুসংখ্যক অনুসারীসহ তিতুমীর যুদ্ধে শহীদ হন। মুজাহিদ বাহিনীর অধিনায়ক গোলাম মাসুমসহ ৩৫০ জন মুজাহিদ ইংরেজদের হাতে বন্দি হন। গোলাম মাসুম মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর