রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

জীবনানন্দের কষ্টের মৃত্যু, জ্যোতি বসুর বাড়ি ফেরা

নঈম নিজাম

জীবনানন্দের কষ্টের মৃত্যু, জ্যোতি বসুর বাড়ি ফেরা

জীবনের হিসাবনিকাশগুলো সমানভাবে মেলানো যায় না। একটি ঘটনাকে এপাশ থেকে দেখলে এক রকম, অন্যপাশে আরেক। এ নিয়ে একটা গল্প। সকালের নাশতার সময় কলকাতার এক নামকরা রেস্টুরেন্টে প্রচণ্ড ভিড় হতো। একজন ব্যবসায়ী মাঝে মাঝে নাশতা করতে যেতেন সেই রেস্টুরেন্টে। তিনি খেয়াল করলেন এক ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে নাশতা করতে আসেন। ভিড়ের সুযোগ নিয়ে বিল না দিয়ে কেটে পড়েন। ব্যবসায়ী খেয়াল করলেন, রেস্টুরেন্ট মালিক ও স্টাফদের ফাঁকি দিচ্ছেন লোকটি। অথচ তারা খেয়াল করছেন না। তাদের ভিড় সামলানোর সুযোগ নিচ্ছেন লোকটি। এভাবে বেশ কিছুদিন দেখে ব্যবসায়ী বিস্মিত হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন বিষয়টি রেস্টুরেন্ট মালিককে বলবেন, তোমাদের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ভালো নয়। কর্মব্যস্ততার কারণে ব্যবসায়ীর অনেক দিন আর সকালের নাশতা খেতে সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়া হলো না।

পরে একদিন খেতে গিয়ে দেখলেন ভিড় কম। বিল না দিয়ে চলে যাওয়া মানুষটিও আসেননি। ব্যবসায়ী নাশতা সারলেন। তারপর বিল দেওয়ার সময় মালিককে বললেন, আপনাকে একটা কথা বলব। মালিক বললেন, বলুন। ব্যবসায়ী বললেন, আপনার রেস্টুরেন্টে ভিড় থাকলে একজন মানুষ আসেন। ভিড়ের ভিতরে নাশতা করেন। তারপর বিল না দিয়ে চলে যান। আপনার লোকজনকে বলে দেবেন পরেরবার এলে খেয়াল করতে। তারপর লোকটিকে ধরে সব বিল আদায় করতে। টাকা না দিলে পুলিশে দেবেন। মালিক হাসলেন। বললেন, আমি সব জানি। সব দেখি। এবার ব্যবসায়ী বললেন, আশ্চর্য! আপনি জেনেশুনে কিছু বলেন না? জবাবে রেস্টুরেন্ট মালিক বললেন, একটা কারণ তো অবশ্যই আছে। মন থেকে বিশ্বাস করি আমার রেস্টুরেন্টে ভিড় হয় লোকটির জন্য। একটা সময় এ রমরমা অবস্থা ছিল না। ব্যবসায়ী বললেন, তিনি কি কোনো সেলিব্রেটি? চেহারা -সুরুত দেখলে তো মনে হয় না। মালিক বললেন, আপনি ঠিক ধরেছেন। মানুষটি সেলিব্রেটি না। তিনি একজন ভিখারি। বিল না দিয়ে একদিন চলে যাওয়ার সময় পিছু নিয়েছিলাম। জানলাম, তিনি পাশের রাস্তায় ট্রাফিক মোড়ে ভিক্ষা করেন। এখান থেকে বের হয়ে তিনি মোনাজাত ধরে প্রার্থনা করেন আল্লাহর কাছে। তার প্রার্থনা একটাই- এই রেস্টুরেন্টে যেন প্রতিদিন এভাবে ভিড় হয়। ভিড়ের ফাঁকে তিনি খেতে আসতে পারেন। আমরাও খেয়াল করলাম, এই ফকির এলে নজিরবিহীন ভিড় হয়। আজ ফকির আসেননি। দেখেন ভিড়ও নেই। চিন্তায় আছি ওনার অসুখ হলো না তো! ভাবছি একবার গিয়ে খোঁজ নেব।

মানুষের জীবনে কার দোয়া কখন কীভাবে কবুল হবে আমরা জানি না। আর যে কোনো ঘটনা দুই পাশ থেকে দুই ভাবে দেখা হয়। চলার পথে চাওয়াপাওয়ার সুখদুঃখ অনেকটা আপেক্ষিক। কবিগুরু বলেছেন, ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু’। দেহের ক্লান্তি দূর করা যায়। মনে ক্লান্তি একবার ভর করলে সহজে আর যেতে চায় না। মনের ক্লান্তি সবকিছু শেষ করে দেয়। তছনছ করে ফেলে একটা জীবন। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু নিয়ে এখনো তর্ক হয়। কেউ বলেন, আত্মহত্যা, আবার কারও চোখে স্রেফ দুর্ঘটনা। আসলে তিনি কি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন? না সবকিছু ছিল দুর্ঘটনা? ট্রামের নিচে পড়ার ঘটনা নজিরবিহীন! শতবর্ষের রেকর্ড শুধুই জীবনানন্দ। ধীরে চলা ট্রাম বারবার ঘণ্টি বাজাচ্ছিল। চালক চিৎকার করছিলেন, সরুন। জীবনানন্দ শুনছিলেন না। আপন মনে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। শেষ জীবনটা মনের ক্লান্তিতে ছিলেন। কোনো কিছুই ভালো লাগত না। অভাব-অনটনের সংসারে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো ছিল না। পেশা ছিল অধ্যাপনা। নেশায় কবিতা। কারণে-অকারণে চাকরি ছাড়তেন। আবার চাকরি চলেও যেত। আর্থিক কষ্টের কারণে ধারকর্জ করতেন বন্ধু, আত্মীয়-পরিজনের কাছ থেকে। চাকরির জন্য আবেদন জমা দিতেন। চিঠিও লিখতেন অনেকের কাছে। স্ত্রী লাবণ্য দাশের সঙ্গে এ নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত ধূসরতা ও নির্জনতার কবির। জন্ম নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বরিশালে। বড় হয়েছেন খাল-বিলের প্রকৃতি দেখে। অসহ্য শহুরের জীবন বেছে নিতে হয়েছিল চাকরি আর সংসারের কারণে। থাকতে হতো শহরে। ছবি আঁকতেন। ১৯৪৭ সালের পর কলকাতায় স্থায়ী হন।

চার দেয়ালের সংসারে জীবনের হিসাবের কশাঘাত কবিকে ক্লান্ত করে তোলে। কলকাতার অলিগলিতে বিকালে হাঁটতেন কবি। সেদিন হাঁটতে হাঁটতে এলেন রাসবিহারি অ্যাভিনিউতে। কোনো কিছুতে মন নেই কবির। ট্রামচালক বারবার ঘণ্টি বাজাচ্ছিলেন। কবি হুট করে পড়ে গেলেন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে বাংলার অপরূপ রূপ দেখা কবির শরীর দলিত হলো। ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার কবিকে ভর্তি করা হলো হাসপাতালে। দুয়ারে কড়া নাড়ছিল মৃত্যু। হাসপাতালে বন্ধু, আত্মীয়-পরিজন ভিড় জমালেন। জীবনের শেষ মুহূর্তে কবির মনে হলো জীবন অনেক সুন্দর। মৃত্যুর ভয়াবহতা সামনে নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদ তৈরি হলো। তিনি আক্ষেপ নিয়ে প্রিয়জনদের বললেন... বেঁচে থাকতে চাই। সময়টা ছিল ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪। প্রথম দিকে সবকিছু ভুলে কবিপত্নী লাবণ্যও এলেন। একদিন তাকে বললেন, ‘মৃত্যুর পর অনেক প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হয়। আচ্ছা বলো তো আমি মারা গেলে তুমি কী করবে?’ হাসপাতালে থাকার সময় কবি তার বন্ধুদের বললেন, ‘আমাকে একটু ছাদে নিয়ে যাবে? খোলা আকাশের নিচে বসে কবিতা পড়ব।’

কবিতাকে ভালোবাসতে গিয়ে কবি হারিয়েছিলেন অনেক কিছুই। হৃদয়জুড়ে ক্ষত ছিল। সংসারের হিসাব বুঝতেন না। দুঃখকে বরণ করে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে জীবনের ওপারে চলে গেলেন। শেষ মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ কষ্টের। শরীর ও মনের কষ্টে ভেঙে পড়েছিলেন। হাসপাতালে কবিপত্নী তেমন আসতেন না। মৃত্যুর সাত দিন আগ থেকে লাবণ্য দাশ হাসপাতালে আসা পুরোপুরি বন্ধ করলেন। কবির বন্ধুরা গাড়ি পাঠিয়ে কবিপত্নীকে আসার অনুরোধ করলেন। সেই অনুরোধ রাখলেন না লাবণ্য।

মানুষ জেনেও জানে না, সম্পর্কের বন্ধনগুলো কতটা আলগা হয়। ভেঙে যাওয়া মন কখনো জোড়া লাগে না। আকাশের রাতের তারা সকালে হারিয়ে যায়। আস্থা সম্পর্কগুলো ভীষণ ক্ষণস্থায়ী। মানুষের চেয়ে দ্রুত খোলস আর কোনো প্রাণী বদলাতে পারে না। স্বার্থ আর হিংসা মানুষকে শেষ করে দেয়। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা একটি গান মনে পড়ছে। সতীনাথ দরদ দিয়ে গেয়েছেন, ‘সব কিছু ফেলে যদি তোমার আগেই চলে যাই, তুমি কেঁদো না/জীবনের ওপারেও আমি তব পথ চেয়ে রবো, তুমি ভেবো না।’ এমন সুরের আবেগ এখন আর নেই। হৃদয় দিয়ে চলাকে এখন সবাই বোকামি মনে করে। হুট করে মানুষ পাল্টে ফেলে চেহারা। পথ চলতে গিয়ে জীবনের বাঁকে অনেক স্তর থাকে। কোনোটির সঙ্গে কোনোটি মেলানো যায় না। মানুষের জীবনটা বড় অদ্ভুত! আজকের আপনজনই কাল হতে পারেন বিরাগভাজন। যার জন্য যত করবেন তিনিই হবেন তত বেশি পথের কাঁটা। নিজেকে প্রশ্ন করবেন কেন এমন হয়, উত্তর মিলবে না।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সারাটা জীবন বাম রাজনীতি করলেন। যে দলটির জন্য সবকিছু উৎসর্গ করেন, তারাই তাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে দিলেন না। ১৯৯৬ সালে ঝুলন্ত সংসদে সবাই বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারোদি গ্রামের ছেলে জ্যোতি বসুকে। তাঁরও আগ্রহ ছিল। দলের কাছে তিনি সব জানালেন। দল নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দিল। এ ঘটনার কিছু দিন পর জ্যোতি বসু হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন, ঢাকা সফর করবেন। যাবেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। কিশোরবেলায় যেখানে গিয়ে নিজেকে হারাতেন, সেখানে নিজের মাঝে কিছু সময় কাটাবেন। জ্যোতি বাবুর বাবা নিশিকান্ত ছিলেন চিকিৎসক। মায়ের নাম হেমলতা দেবী। ১৯২০ সালে কলকাতায় বাড়ি কেনেন তাঁরা। পুত্রকে বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে পাঠান নিশিকান্ত। ভেবেছিলেন ছেলে বড় আইনজীবী হয়ে দুই হাতে অর্থ আয় করবে। দেশে ফিরে পুত্র জড়িয়ে পড়লেন রাজনীতিতে। বামধরার রাজনীতিতে থেকে জড়ালেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ২৩ বছরের বেশি সময় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। বিধান চন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের উপনেতা ছিলেন। টানা রাজনীতি করেছেন। জেলে গেছেন। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। একচেটিয়া জনপ্রিয়তা ছিল। দলে তাঁর ধারেকাছে কেউ ছিলেন না। ২০০৬ সালের নভেম্বরে অসুস্থ হন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়েন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। সময়টা ২০০৬ সালের নভেম্বর। তারপর রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৭ জানুয়ারি, ২০১০ সালে মারা যান।

জ্যোতি বসু ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে। দলের আপত্তির কারণে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। ভোটে সেবার বিজেপি পেয়েছিল ১৬১ আসন। আর কংগ্রেস ১৩৬। বাকি আসনগুলো পায় ছোট ছোট দল। কংগ্রেস কোনোভাবে বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। আর বিজেপি কংগ্রেসকে। কঠিন এক পরিস্থিতি। ভিপি সিং, মুলায়েম সিং, লালুপ্রসাদ যাদব, করুণানিধি সবাই বৈঠকে বসলেন। তাঁরা বিজেপিকে সমর্থন দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। সবাই প্রস্তাব করলেন জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করা হোক। এ প্রস্তাবে কংগ্রেস সম্মত হলো। সবাই বললেন, জ্যোতি বসুর মতো ব্যক্তিত্ব ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে সব দলে একটা ভারসাম্য আসবে। তিনি নিজের ব্যক্তিত্ব ও ক্যারিশমা দিয়ে সরকার চালাতে পারবেন। সংসদ ভাঙবে না। সরকার চালাতেও সমস্যা হবে না। জ্যোতি বসুর দল সিপিআইএম আদর্শের কথা বলে রাজি হলো না। পরে প্রমাণ হলো তাদের সেই সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। সেই ভুলের খেসারত সিপিআইএমকে এখনো দিতে হচ্ছে। জ্যোতি বসু নিজেও অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর দলের সেই সিদ্ধান্ত ছিল ঐতিহাসিক ভুল। একবার নয়, তিনবার জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার অনুরোধ করা হয়েছিল সে সময়। ভিপি সিং দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা অনুরোধ করেন। সে অনুরোধ রাখেনি সিপিএম। পরে দেবগৌড়া হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর দেবগৌড়ার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে ঢাকায়। কথা হয়েছিল। তিনি ঢাকার ধানমন্ডির শেরে খাজার মেয়ের বিয়েতে আসেন। শেরে খাজা আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। আমার পুত্রকন্যাকে নিয়ে দেবগৌড়ার সঙ্গে তোলা ছবিটি এখনো আছে স্মৃতি হয়ে।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হতে না পেরে জ্যোতি বসু কি মন খারাপ করেছিলেন? বাম রাজনীতির অতি গবেষণায় পশ্চিমবঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একজন বাঙালি সুযোগ পেয়েও দিল্লিতে পাননি রাষ্ট্রক্ষমতা। জীবনের সেই কঠিন সময়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন জ্যোতি বসু। মনের কষ্ট লুকাতে তিনি কি পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ঘুরে গিয়েছিলেন? অজানা এমন অনেক প্রশ্ন আছে। তখন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। জ্যোতি বসুকে ঢাকায় ব্যাপক সংবর্ধনা জানানো হয়। আগে থেকে তিনি জানিয়েছিলেন বারোদিতে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত জ্যোতি বসুর গ্রামের বাড়ি রং করা হলো। সামনের গেট হলো মেরামত। বিশাল বাড়ির চারপাশের সীমান্তে দেওয়া হলো কাঁটাতারের বেড়া। বারোদিতে তখন কোনো সড়কপথ ছিল না। ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে তিনি ভরদুপুরে নামলেন বারোদিতে। কিশোরকালে কলকাতা থেকে এখানে তিনি ছুটে আসতেন। পূজার সময় আসা হতো বেশি। বিশাল এই বাড়িতে ধুমধাম করে পূজার আয়োজন হতো। জ্যোতি বসু পাশের মাঠে খেলতে যেতেন। ভালো লাগত। দিদির বাড়ি ছিল সাভারে। অনেক আগেই দিদি ও জামাইবাবু মারা গেছেন। জ্যোতি বসুর ’৯৬ সালের সফর ছিল পুরোপুরি নস্টালজিক। স্থানীয় ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসের সামনে হেলিকপ্টার থেকে নামলেন জ্যোতি বসু। সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ। একটি রিকশা আগে থেকে তৈরি ছিল। তিনি বললেন, ছোটবেলায় নদীর ঘাটে নৌকা থেকে নেমে হেঁটেই বাড়ি যেতাম। তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। পেছনে হাজার হাজার মানুষ। সবাই আবেগে আপ্লুত। বারোদি গ্রামের সন্তান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তার দুই ধারে মানুষ দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানাল। তিনি হাত নেড়ে অভিবাদনের জবাব দিলেন। তাঁর চোখে-মুখে উচ্ছলতা। বাড়িতে পৌঁছে সবাইকে নিচে বসিয়ে তিনি দোতলার সেই ঘরটিতে গেলেন। কলকাতা থেকে বাড়ি এলে এ ঘরেই তিনি ঘুমাতেন। জানালা খুলে দেখতেন দূরের মাঠ। শুনতেন রাখালের বাঁশি। বিকালে ছুটে যেতেন মাঠে খেলতে। জীবনের শেষ দিনে বুকভরা কষ্ট নিয়ে তিনি এলেন বারোদিতে। নিজের হাতে জানালা খুললেন। তাকিয়ে থাকলেন দূরের সেই মাঠের দিকে। এক ঘণ্টা পর নিচে নামলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এবার রিকশায় চড়লেন। এক কিলোমিটার পথ পার হয়ে এলেন বারোদি ইউনিয়ন পরিষদের মাঠের হেলিপ্যাডে। বিশাল জনস্রোতে বক্তৃতা করলেন। স্মৃতিচারণা করলেন ছোটবেলার। তারপর ফিরে এলেন ঢাকায়।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর