রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

হালাল উপার্জনের ফজিলত

মো. আমিনুল ইসলাম

হালাল উপার্জনের ফজিলত

ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো- হালাল পথে জীবিকা অর্জন করতে হবে। সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, জুয়া, মদ বিক্রি, প্রতারণা, ধোঁকাবাজি ও অসামাজিক অনাচারে লিপ্ত হয়ে জীবিকা উপার্জন করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে মানুষ, তোমরা যারা ইমান এনেছ, তোমরা যদি একান্তভাবে আল্লাহতায়ালার দাসত্ব কর তাহলে আমি যেসব পাক পবিত্র জিনিস তোমাদের দান করেছি নিঃসংকোচে তা তোমরা খাও এবং নেয়ামতের জন্য তোমরা আল্লাহতায়ালার শোকর আদায় কর। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৭২)। এ আয়াতে যেমন হারাম খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে তেমনিভাবে হালাল ও পবিত্র বস্তু খেতে এবং তা খেয়ে শুকরিয়া আদায় করতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে রসুল (সা.) বলেছেন, হে মানুষ, নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতীত কোনো কিছুই কবুল করেন না। তিনি মুমিনগণকে সেটার নির্দেশ দিয়েছেন যেটার নির্দেশ রসুলগণকে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, হে রসুলগণ! তোমরা পবিত্র থেকে খাও এবং সৎ কাজ কর, নিশ্চয়ই আমি তোমরা যা কর সে ব্যাপারে সবিশেষ অবগত। (সুরা আল মুমিনুন, আয়াত ৫১)। হালাল খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের মনে একপ্রকার নূরের আলো তৈরি হয় যা তার মনে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাবোধ সৃষ্টি করে এবং সততা ও ন্যায়ের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করে।

আমাদের মনে রাখতে হবে মানুষের জন্য যা কল্যাণকর, পবিত্র, উত্তম ও উপাদেয়, তাই আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য হালাল করেছেন। রসুল (সা.) বলেছেন, ওই শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না যা হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত হয়েছে।

ইসলাম ধর্মে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। হালাল উপার্জন মানুষের জীবনে বরকত নিয়ে আসে। মনে প্রশান্তি এনে দেয়। অবৈধভাবে উপার্জনে অনেক রোজগার করা গেলেও সে সম্পদ হারাম হয়ে যায়। হালাল উপার্জন যেমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নেয়ামত তেমনি হারাম উপার্জনের প্রভাব অত্যন্ত বিপজ্জনক। হারাম উপার্জনের ফলে আল্লাহতায়ালা মানব জীবন থেকে সব ধরনের বরকত ছিনিয়ে নেন। বৃদ্ধি পায় রোগব্যাধি ও নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সমাজে নেমে আসে অশান্তি, আর্থিক সংকট ও অনটন। ব্যবসায়ীরা পণ্যে ভেজাল দিলে, ওজনে কম দিলে, নকল পণ্য বিক্রি করলে, মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিলে তার উপার্জন হালাল হবে না। ক্রেতাও যদি কোনোভাবে বিক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করে তবে তার রিজিকও হালাল হবে না।

হালাল সম্পদকেও প্রতি বছর হিসাব করে জাকাত প্রদানের মাধ্যমে পবিত্র করতে হয়। সঠিকভাবে জাকাত আদায় না করলে বৈধ সম্পদও হারাম হয়ে যায়। আমরা যেমন অজু, গোসল করে পবিত্র হই, বিশুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করি, ঠিক তেমনি হালাল উপার্জন দ্বারা অর্জিত জীবিকা ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য যে পবিত্র জিনিসগুলো হালাল করে দিয়েছেন তোমরা সেগুলোকে নিজেদের জন্য হারাম করে নিও না। (সুরা মায়েদা, আয়াত ৮৭)।

প্রকৃত মুমিন বান্দা হিসেবে দুনিয়ার বুকে জীবনযাপন করতে হলে হালাল রুজি উপার্জনের কোনো বিকল্প নেই। হালাল পথে উপার্জিত রিজিক ভক্ষণের মাধ্যমে মানুষের স্বভাব চরিত্র সুন্দর হয়। হালাল রুজি ব্যক্তিকে সত্যানুরাগী হতে সাহায্য করে। তাই আমাদের সবার উচিত দুই দিনের এ দুনিয়ায় লোভ-লালসা পরিহার করে হালাল রুজি উপার্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর