রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

জিনজিরা প্রাসাদ

জিনজিরা প্রাসাদ

ঢাকার বড় কাটরা প্রাসাদ-দুর্গের প্রায় দক্ষিণ বরাবর বুড়িগঙ্গার অপর তীরে অবস্থিত। বাংলার মুঘল সুবেদার দ্বিতীয় ইবরাহিম খান (১৬৮৯-১৬৯৭) তাঁর প্রমোদকেন্দ্র হিসেবে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পারিপার্শ্বিক এলাকাসহ প্রাসাদস্থলটি তখন ছিল চতুষ্পার্শ্বে নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপের মতো। প্রাসাদটি নদীর তীর ঘেঁষে নির্মিত হয়েছিল এবং নদীর ওপর একটি কাঠের সেতু দ্বারা বড় কাটরার কাছে ঢাকা নগরীর সঙ্গে প্রাসাদটির সংযোগ স্থাপিত ছিল। এটি ছিল একটি প্রাসাদ দুর্গ। প্রাসাদটি এখন নিশ্চিহ্নপ্রায়। মূল প্রাসাদের সাতটি কক্ষ এখনো ভগ্নপ্রায় অবস্থায় টিকে আছে। অপরাপর টিকে থাকা স্থাপনার মধ্যে রয়েছে দুটি অষ্টভুজাকৃতির পার্শ্ববুরুজ, দক্ষিণ দিকের ভগ্নপ্রায় ফটক প্রাসাদের সুপ্রশস্ত ভিত এবং চতুষ্পার্শ্বস্থ পরিখা। প্রাসাদস্থলটি এখন স্থানীয় লোকদের কাছে হাওলি নামে পরিচিত। বর্তমানে এর চারপাশে গড়ে উঠেছে ঘিঞ্জি বসতি ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। মুর্শিদাবাদ নিযামতের শেষ বছরগুলোতে সংঘটিত বেদনাবিধুর ঘটনার নীরব সাক্ষী ছিল জিনজিরা প্রাসাদ। নবাব সরফরাজ খানের (১৭৩৯-১৭৪০) পতনের পর তাঁর মাতা, স্ত্রী, ভগ্নি, পুত্রকন্যা এবং তাঁর হারেমের কতিপয় মহিলাকে এ প্রাসাদে অন্তরীণ রাখা হয়। মুর্শিদাবাদের রাজপথে হোসেন কুলি খানের হত্যাকাণ্ডের (১৭৫৪) পর এ প্রাসাদে বসবাসরত তাঁর পরিবার পরিজনকেও বন্দি জীবনযাপন করতে হয়।

অদৃষ্টের এ এক নির্মম পরিহাস যে, সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর আলীবর্দী খানের মহিষী শরীফুন্নেসা, কন্যা ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগম, সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা বেগম ও তাঁর কন্যা কুদসিয়া বেগম ওরফে উম্মে জোহরাকে জিনজিরা প্রাসাদে এনে কড়া পাহারায় রাখা হয়। এরূপ জনশ্রুতি আছে যে, ১৭৬০ সালের জুনে নবাব মীরজাফর আলী খানের পুত্র মীর সাদেক আলী খান ওরফে মিরনের নির্দেশে জমাদার বকর খান মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে প্রাসাদ থেকে নৌকায় তুলে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করেন।

মোহাম্মদ সোহেল

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর