রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সড়ক ছাড়াই সেতু

জনগণের অর্থ অপচয় বন্ধ হোক

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তথা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের শুরুতে কোম্পানির এদেশীয় কর্মচারীদের একাংশ বিদেশি শাসকদের মতোই লুটেরা হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষের ওপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা বিদেশি বেনিয়াদের চেয়েও বেশি নিপীড়ক হিসেবে আবির্ভূত হন। কোম্পানির অর্থের অপচয় ও দুর্নীতিতেও তারা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সে সময় এই লুটেরা গোষ্ঠীর অনুকরণীয় নীতিবাক্য হয়ে দাঁড়ায় ‘কোম্পানিকা মাল দরিয়া মে ঢাল।’ তারপর পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি গড়িয়েছে। দেশভাগ, অসভ্য পাকিস্তানি শাসন এবং পরিশেষে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাঙালির জাতিরাষ্ট্র স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু আমলা-কামলাদের একাংশের মনোভাবে পরিবর্তন হয়নি। জনগণের অর্থ লুটের জন্য তারা প্রায়শই প্রণয়ন করে তুঘলকি প্রকল্প। ঘোড়ার আগে জুড়ে দেয় গাড়ি। তাই দেখা যায়, নেই কোনো সংযোগ সড়ক, অথচ নদী বা খালের ওপর বছরের পর বছর দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য ব্রিজ বা কালভার্ট। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব সেতু মানুষের কোনো কাজে আসছে না। এমন কালভার্টও রয়েছে, যা দিয়ে ২২ বছরেও পারাপার হয়নি কোনো মানুষ। কালভার্টে জন্মেছে ঘাস, নিচ দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। কোথাও দুই পাশে নেই রাস্তা বা বাড়িঘর, তবুও দ্বীপের মতো দাঁড়িয়ে আছে সেতু। কিছু সেতুর নির্মাণকাজ চলছে ১০ বছর ধরে। উদ্বোধনের আগেই পুরনো হয়ে যাচ্ছে স্থাপনা। অনেক স্থানে সেতুতে উঠতে হচ্ছে ৩০ ফুট মই বেয়ে। কোথাও আবার বন্যার পানিতে সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ার পর দুই বছর পার হলেও হয়নি মেরামত। সেতু নির্মাণ হলেও অর্থের অভাবে সংযোগ সড়ক না হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট যার কোনো কোনোটি নির্মাণের প্রয়োজনই ছিল না। সাধারণ মানুষের কাজে না লাগলেও প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত চোর-মহাচোরদের পকেট স্ফীত হয়েছে যথানিয়মে। যারা কোম্পানির মাল ভেবে দেশবাসীর ট্যাক্সের টাকা অপচয় করছে সেই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। এটি তাদের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর