সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সৌরবিদ্যুৎ : উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা

মেজর আখতার (অব.)

সৌরবিদ্যুৎ : উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা

বর্তমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দিয়ে পিডিপি সর্বোচ্চ ১৭,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম যদি জ্বালানির প্রাপ্যতা নিয়ে কোনো সমস্যা না হয়। এ উৎপাদন ২০২৩ সালের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। কিন্তু অনেক সময় ডলার সংকটের কারণে সময়মতো জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি করা যায় না। যার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিভ্রাট সৃষ্টি হয় এবং  জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। নিম্নে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব একটি ছকে দেওয়া হলো :

ওপরের ছক থেকে দেখা যাচ্ছে, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে খুবই অনুকূল ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে ত্বরিত সমাধান দিতে সক্ষম। বিভিন্ন কারণে এটি একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো : (১) সহায়ক সরকারের নীতি : বাংলাদেশ সরকার সৌরবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়নে বেশ কিছু নীতি ও প্রণোদনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে করছাড়, শুল্কমুক্ত সৌর সরঞ্জাম আমদানি এবং সৌর প্রকল্পের জন্য অনুকূল শুল্ক। ফলে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি একটি স্থিতিশীল এবং সহায়ক বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। (২) ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা : বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবহারও বাড়ছে, যার ফলে চাহিদাও বাড়ছে এবং এই চাহিদা মেটাতে সৌরশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সৌর প্রকল্পে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত সম্প্রসারিত বাজারে প্রবেশ করতে এবং দেশের জ্বালানি শক্তির চাহিদাকে পুঁজি করতে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠছে। (৩) অনুকূল সৌর সম্পদ : বাংলাদেশে সারা বছর প্রচুর সূর্যালোক থাকে, এটি সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য একটি অনুকূল অবস্থান তৈরি করেছে। উচ্চ সৌর বিকিরণ মাত্রা উন্নত ও দক্ষ এবং উৎপাদনশীল সৌর প্যানেল স্থাপনের বাড়তি সুযোগ করে দিয়েছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের ওপর সৌরশক্তির উৎপাদন ক্ষমতা এবং তা থেকে সর্বাধিক আয় করতে এই অনুকূল সৌর প্যানেল ব্যবহার করতে সবাই উৎসাহী হয়ে উঠছে। (৪) শক্তির নিশ্চয়তা এবং গ্রিড স্থিতিশীলতা : সৌরশক্তিতে বিনিয়োগ নিরাপদ। এটি জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে ঈন্ধন শক্তির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে। উপরন্তু সৌরশক্তি গ্রিডের স্থায়িত্ব এবং নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যখন শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থার সঙ্গে মিলিত হয়। এই কারণগুলো বিনিয়োগকারীদের তাদের বিনিয়োগে আরও স্থিতিশীল এবং নিরাপদ আয় প্রদানে নিশ্চয়তা দেয়। (৫) অফ-গ্রিড বাজারের সম্ভাবনা : বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য অফ-গ্রিড বাজার রয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে। অফ-গ্রিড সোলার সলিউশনে বিনিয়োগ করা, যেমন সোলার হোম সিস্টেম এবং মিনি-গ্রিড, এই পিছিয়ে থাকা বাজারের চাহিদা পূরণ করার সুযোগ এনে দেয়। অফ-গ্রিড সৌর বিনিয়োগ গ্রামীণ বিদ্যুতায়নে অবদান রাখে, জীবিকা উন্নত করে এবং ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব ফেলে। (৬) আর্থিক কার্যকারিতা এবং খরচ প্রতিযোগিতা : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌর প্যানেল এবং সম্পর্কিত সরঞ্জামের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, সৌরশক্তিকে আরও বেশি খরচ-প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে। উপরন্তু নেট মিটারিং বা ফিড-ইন ট্যারিফের মাধ্যমে রাজস্ব উৎপাদনের সম্ভাবনা সৌরশক্তি বিনিয়োগের আর্থিক কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। (৭) জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন : বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং সৌরশক্তিতে বিনিয়োগ দেশের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করতে এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আরও বেশি করে অবদান রাখতে পারবে। আলোচিত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সৌরশক্তিতে বিনিয়োগ সম্ভাবনাময়। বিনিয়োগকারীরা অনুকূল সরকারি নীতি, ক্রমবর্ধমান বাজার, অফুরন্ত সৌর সম্পদের উপকৃত হতে পারে। সৌরশক্তি উন্নয়নে সরকারের রয়েছে ইতিবাচক অবস্থান যা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে না এবং সাশ্রয়ী মূল্যে সবসময় আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারব। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের কতগুলো ইতিবাচক অবদান রয়েছে। এটি নবায়নযোগ্য এবং টেকসই : সৌরশক্তি সূর্য থেকে পাওয়া যায়। যা অফুরন্ত এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদ। যতক্ষণ সূর্য থেকে আলো আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত সৌরশক্তি ব্যবহার করা যাবে, যা একটি টেকসই শক্তির চিরস্থায়ী উৎস। জীবাশ্ম জ্বালানির বিপরীতে সৌরশক্তি কোনো গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন করে না। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং বায়ুদূষণ হ্রাস করে এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখে। সৌর প্যানেল সংগ্রহ এবং স্থাপনা খরচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা সৌরশক্তিকে আরও সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করে তুলেছে। তাছাড়া সৌরশক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সঞ্চয়ে অবদান রাখে। সৌরশক্তি ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়কে তাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা দেয়। এটি কেন্দ্রীভূত পাওয়ার গ্রিডের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে এবং শক্তি নিরাপত্তা বাড়ায়, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ফলে লোডশেডিংয়ের ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়। সৌরশিল্প যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করে অসংখ্য কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে, উদ্ভাবনকে উদ্দীপিত করে এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বাড়ায়। (৬) কম সৌর প্যানেলগুলোর সাধারণত কোনো চলমান অংশ পরিবর্তন করার দরকার পড়ে না এবং ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। সৌর প্যানেলের দীর্ঘ জীবনকাল থাকে যা সাধারণত ২৫-৩০ বছর বা তার বেশি স্থায়ী হয়। সৌরবিদ্যুৎ একটি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে। সৌরশক্তি সিস্টেমগুলো বিভিন্ন আকার এবং স্কেল অনুসারে তৈরি করা যেতে পারে। ছোট আবাসিক স্থাপনা থেকে শুরু করে বড় আকারের সৌর খামার পর্যন্ত ও সৌরশক্তি বিভিন্ন শক্তির চাহিদা মেটাতে নমনীয়তা এবং অভিযোজনযোগ্যতা প্রদান করে, ফলে যে কোনো আকারে তা নির্মাণ করা যেতে পারে।

গবেষণা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি অব্যাহত থাকায়, সৌরশক্তির সম্ভাবনা আরও বেশি আশাব্যঞ্জক হয়ে উঠছে, যা একটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই শক্তি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমাদের সৌরশক্তির সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য। এখানে কিছু কারণ রয়েছে; যা এর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে অবদান রাখে। যেমন : বাংলাদেশ সারা বছরই পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায়, যা সৌরশক্তি উৎপাদনের উপযোগী করে তোলে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশে উচ্চ সৌর বিকিরণ স্তর রয়েছে, যা কার্যকরভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নিরিখে শক্তির চাহিদা বাড়ছে। সৌরশক্তির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে গ্রিড সংযোগ সীমিত। এটি বিদ্যুতের প্রাপ্যতা প্রসারিত করা এবং অনেক লোকের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সুযোগ প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার সৌরবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে। এটি সোলার হোম সিস্টেম প্রোগ্রামের মতো সৌর ইনস্টলেশনের প্রচারের জন্য নীতি, প্রণোদনা এবং ভর্তুকি প্রয়োগ করেছে। এই উদ্যোগগুলো সৌরশক্তি বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। সৌরশক্তি আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর দেশের নির্ভরতা কমাতে এবং শক্তির স্বাধীনতাকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। শক্তির মিশ্রণে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে বাংলাদেশ শক্তির নিরাপত্তা বাড়াতে পারে, মূল্যের অস্থিরতা প্রশমিত করতে পারে এবং ঐতিহ্যগত শক্তির উৎসের পরিবেশগত প্রভাব কমাতে পারে। সৌরশক্তি অফ-গ্রিড অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের যেখানে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করে সেখানে সৌরশক্তি একটি বিকেন্দ্রীকৃত সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে। ফলে সৌরবিদ্যুৎ পরিবার, স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলোর জন্য নির্ভরযোগ্য শক্তির প্রাপ্যতার সক্ষমতা তৈরি করতে পারে। সৌরশক্তি সেক্টরের বৃদ্ধি আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে। এটি বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সৌর-সম্পর্কিত শিল্প স্থাপনকে উৎসাহিত, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সৌরশক্তি গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সাহায্য করে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করে এবং দেশের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

সৌর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা বহুবিধ সুবিধা অর্জন করতে পারি; যার মধ্যে রয়েছে শক্তির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি, পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ শক্তি ব্যবস্থা। সৌর অবকাঠামো, সহায়ক নীতি এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে ক্রমাগত বিনিয়োগ আমাদের সৌরশক্তির সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে ও অর্থবহ করে তুলবে।

সৌরশক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা খুবই অল্প। যেখানে ২০২০-২১ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ৬.৬১ টাকা, যা ২০২১-২২ সালে ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৮.৮৪ টাকা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ সম্ভবত আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে সৌরবিদ্যুতের দাম ক্রমান্বয়ে কমে আসবে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিবাচক ও সৌরবিদ্যুৎবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রমে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যাবে না। তাহলে আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি শোষণের মধ্যে পড়ে যাব। সৌরবিদ্যুতে মৌমাছির মতো বিদেশি বিনিয়োগ আসার চেষ্টা করছে। এটি একটি ঝুঁকিমুক্ত, দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই ও লাভজনক বিনিয়োগ। এখানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের জন্য সর্বনাশ বয়ে আনবে।

মার্কিন ডলারে বিনিয়োগ করে ২৫ বছরে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে ১৫৮১ টাকা নিয়ে যাবে। বর্তমান অবস্থায় ১ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে সাকুল্যে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ লাগে যা দিন দিনই কমের দিকে যাচ্ছে। আমরা যদি আমাদের চলমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে আগামী ১০ বছরে ১০ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করতে চাই তাহলে আমাদের কমবেশি প্রায় ১০ হাজার মিলিয়ন বা ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে; যা টাকায় হবে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি। যদি বিদেশি বিনিয়োগ নিই তাহলে ২৫ বছর শেষে সুদ, আসল ও মুনাফাসহ আমাদের ৬.৫০ গুণ বেশি মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু আমরা যদি নিজেদের টাকায় আগামী ৫-৮ বছরে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করি তাহলে আমাদের কাউকে কোনো টাকা ফেরত দিতে হবে না এবং তখন পুরোটাই আমাদের জাতীয় সম্পদ তথা জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আমাদের নিজেদের অর্থায়নে সৌরশক্তি উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তখন ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাগবে না। ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেই হয়ে যাবে। বাকিটা টাকায় বিনিয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকার যদি আগামী ৫-৮ বছর প্রতি বছর ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করে রিজার্ভ থেকে এবং ১১ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকায় ২-২.৫০% হার সরল সুদে ঋণ সুবিধা প্রদান করে তাহলে দেশে একটি টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি এবং আগামী ৫-৮ বছরে ঝুঁকিমুক্ত ১০ হাজার মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে জনগণকে স্বল্পমূল্যে লোডশেডমুক্ত নির্ঝঞ্ঝাট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক মনোভাব ও সিদ্ধান্ত এবং সরকারের সদাশয় ইচ্ছা সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া আমাদের এই স্বপ্ন সফল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

পরিশেষে একটি প্রস্তাব রাখতে চাই। সৌরবিদ্যুৎ শক্তির  টেকসই উৎপাদন ক্ষমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সৌরশক্তি বিনিয়োগ ব্যাংক নামে একটি বিশেষায়িত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।  এই ব্যাংক শুধু বিনিয়োগই করবে না, তারা একই সঙ্গে নির্মাণ, সব ধরনের ক্রয়, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিবিড়ভাবে তদারক করবে। যেহেতু সৌরবিদ্যুতের বিক্রয় ও আয় নিশ্চিত কাজেই এই ব্যাংকের বিনিয়োগের খেলাপি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এ ব্যাংকটি কেন্দ্রীভূত একটি ব্যাংক হবে; যেখানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের সঙ্গে অন্যান্য পেশার সমদক্ষতা ও অভিজ্ঞতার লোকবলও থাকবে। ব্যাংকটি সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি স্বশাসিত ব্যাংক হবে।        

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

সর্বশেষ খবর