সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

পবিত্র হজের শিক্ষা

যুবায়ের আহমাদ

পবিত্র হজের শিক্ষা

মুসলিম মাত্রই হৃদয়ের গভীরে লালন করেন হজের স্বপ্ন। সম্পদ থাকলে হজ ফরজ হয়, কিন্তু হজ করার সৌভাগ্য কেবল তিনিই লাভ করেন, যাকে আল্লাহ দয়া করে তৌফিক দান করেন। গরিব হয়েও আল্লাহর দয়ায় অনেকে হজের সুযোগ লাভ করেন। হজ নসিব হওয়া নিশ্চয় সৌভাগ্যের বিষয়। কারণ হজ একজন মুসলমানকে সদ্যোজাত শিশুর মাতো নিষ্পাপ করে দেয়। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়’ (সহিহ বুখারি)। হজের প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতায় মুসলমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। পবিত্র হজের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শিক্ষা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

ইবাদত হবে কেবলই আল্লাহর জন্য : ইবাদতে লোক দেখানোর মানসিকতা কিছুতেই কাম্য নয়। সব ইবাদতে ইখলাস (ইখলাস অর্থ একনিষ্ঠতা। একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইবাদত ও যাবতীয় কাজ করাই ইখলাস) অপরিহার্য। ইখলাস ব্যতীত কোনো ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের এ ছাড়া আর কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে’ (সুরা বাইয়্যিনাহ-৫)। এ ইখলাসের চর্চার মধ্য দিয়েই হজ শুরু করতে হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা আলে ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা হজের নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ নির্দেশ তিনি শুরু করেছেন ‘লিল্লাহি’ শব্দ দিয়ে। যে হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ ইমানদারকে নিষ্পাপ করে দেয় বলে ঘোষণা করেছেন, তার শুরুতেও রয়েছে ‘লিল্লাহ’ শব্দ। যার অর্থ হলো, ‘আল্লাহর জন্য’। অর্থাৎ হজ হতে হবে কেবলই আল্লাহর জন্য। সুরা বাকারার ১৯৬ নম্বর আয়াতেও আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন কর কেবলই আল্লাহর জন্য। অর্থাৎ হজ ও ওমরাহতে কোনো লৌকিকতা বা প্রদর্শনী কাম্য নয়। লোকে ‘হাজি’ বলবে- এ ধরনের প্রত্যাশা হতে পারবে না; বরং হজে কেবলই প্রত্যাশা থাকবে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি। এ জন্য হজ ও ওমরাহ প্রত্যাশীগণ ইহরামের কাপড় পরার আগেই তাদের নিয়ত ঠিক করে হজকে কেবলই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্ধারিত করেন। এভাবে হজ আমাদের ইখলাসের শিক্ষা দিয়ে যায়।

গুনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়া : একজন হজযাত্রী যখন ইহরামের কাপড় পরেন তখনই তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। স্বাভাবিকভাবে হালাল এমন কিছু কাজও ইহরাম পরিহিত অবস্থায় তার জন্য হারাম হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হজ হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে, অতঃপর এ মাসগুলোতে যে কেউ হজ করার মনস্থ করবে, তার জন্য হজের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয় এবং তোমরা যে কোনো সৎ কাজই কর, আল্লাহ তা জানেন এবং তোমার পাথেয়র ব্যবস্থা করবে আর তাকওয়াই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে জ্ঞানীরা, আমাকেই ভয় করতে থাকো’ (সুরা বাকারা : ১৯৭)। আল্লাহর নির্দেশে হাজিগণ সব ধরনের অশ্লীল কাজ ও কথাকে ‘না’ বলে এসব থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। আর একজন মানুষ যখন স্বাভাবিক সময়ে হালাল কাজগুলোকেও আল্লাহতায়ালা নিষেধ করার কারণে ইহরাম পরা অবস্থায় ত্যাগ করতে পারেন তখন তার জন্য হজের বাইরের নিষিদ্ধ কাজগুলো ছেড়ে দেওয়া তার জন্য সহজ হয়ে যায়। কারণ তিনি ইহরাম পরিহিত অবস্থায় আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগের প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। এভাবে হজ আমাদের আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজগুলো ছেড়ে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার শিক্ষা দেয়। শুধু হজের সময়ই নয়, বরং হজফেরত একজন মানুষকে হজ-পরবর্তী বাকি সারা জীবনেই আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজসমূহকে ‘না’ বলার এ প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে হবে। গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর