শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

হিজরি নববর্ষের আহ্বান

আবদুল্লাহ আল মামুন আশরাফী

হিজরি নববর্ষের আহ্বান

দেখতে দেখতে আরেকটি হিজরি বর্ষ বিদায় নিল। মহাকালের অতল গর্ভে আরেকটি বছর হারিয়ে গেল। সূচনা হলো আরেকটি নতুন বর্ষের। ১৪৪৫ হিজরি। এই যে হিজরি বর্ষ আমাদের কাছে আসে, সময়ের আবর্তে দেখতে দেখতে আবার চলে যায়- এটা আমাদের মধ্যে কী চেতনা জাগায়। আমাদের কীসের আহ্বান জানায়? হিজরি নববর্ষের চেতনা ও আহ্বান নিয়েই বক্ষমান রচনার অবতারণা।

মাটি আর মানুষ-এই দুই মিলেই পৃথিবী। এর বাইরে যা কিছু আছে, যত কিছুই নজরে পড়ে সবই তার শোভাবর্ধক, প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তাই মাটি ও মানুষের সম্পর্ক এক আত্মিক সম্পর্ক। সব দেশে, সব যুগে এর প্রভাব দেদীপ্যমান। এর বিকাশ প্রতীয়মান। মাতৃভূমির প্রতি নিখাদ আকর্ষণ, বাপ-দাদার ভিটেমাটির প্রতি অম্লান মায়া কার না আছে? প্রবাসে যে জন কাঁদে না মায়ের দেশের টানে, শত ব্যস্ততার মাঝেও যে প্রবাসীর মন আমোদিত, আহ্লাদিত ও আন্দোলিত হয় না মাতৃভূমির স্মরণে, সে তো পাষাণ। দয়ামায়াহীন সীমার। হৃদয়হীন দুপেয়ো...।

মানুষ বিপদ-আপদে ধন-সম্পদ বিসর্জন দেয়। সহায় সম্বলের বিনিময়ে জীবন ঠেকাতে চায়। এটা মানুষের স্বভাব। এটা তার প্রকৃতি। কিন্তু ওই সম্পদের মধ্যেও মাটির মর্যাদা তার কাছে আলাদা। তাই মানুষ যথাসম্ভব নিজেকে ধরে রাখতে চায় এ মাটিতে। যখন তার সামনে মাটি বিক্রি ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না তখন সে মাটি বেচে। তবে এ কঠিন সিদ্ধান্ত তাকে জ্বালা দেয়, তাড়া করে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। সে মুষড়ে পড়ে এক অব্যক্ত যন্ত্রণায়। তাই তো প্রবীণরা বলেছেন, ‘মাটি ছাড়তে যার বুক কাঁপে না, সে বড়ই হতভাগা।’ মাটি থেকে মানুষের সৃষ্টি- এটাই হয়তো এ ভালোবাসার নেপথ্যে কাজ করে। মাটির সঙ্গে যে মানুষের এ গভীর ভালোবাসা, নিঃসীম প্রেম সে মাটিকেও মানুষ বিসর্জন দেয়। মানব জাতির ইতিহাস হাতড়ালে দেখা যায়, মানুষ সাধারণত দুটি কারণে মাটি ছাড়ে। আপন ভিটেমাটিও পরিত্যাগ করে।

এক. জীবন বাঁচানোর তাগিদে। আপন নিবাসে যখন জীবনের নিশ্চয়তা হারিয়ে যায়। দুই. আপন নিবাসে আরেকটু সুখে কাটানোর স্বপ্নে। সাময়িক প্রবাসের উদ্দেশ্যে। কাজকর্মের সন্ধানে। এ দুটি কারণে মানুষকে ভিটেমাটি বিসর্জন দিতে দেখা যায় প্রতিনিয়ত। মানবজীবনের দৈনন্দিন জীবনযুদ্ধের এ এক অখণ্ড চিত্র। কিন্তু আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে পৃথিবী প্রত্যক্ষ করল ভিটেমাটি বিসর্জনের আরেকটি কারণ। বড় কঠিন, খুনে খুনে লাল আরেকটি কারণে শিহরিত হয় সেদিনকার পৃথিবী। পৃথিবী দেখল, নীলাভ আকাশ দেখল, উন্মুক্ত বাতাস আর অগণিত সৃষ্টি দেখল একদল মানুষ অমানবিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে, আঘাতের পর আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরে চলে যাচ্ছে। আপন মাতৃভূমি, পরিবার-পরিজন ছেড়ে অজানার পথে হারিয়ে যাচ্ছে। তারা হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রাণের ভয়েও নয়, জীবিকার সন্ধানেও নয়। হারিয়ে যাচ্ছে একটি সত্যকে পৃথিবীর সবকিছুর ঊর্ধ্বে তুলে ধরার দৃপ্ত শপথে। তারা কাঁদছেন; এক মহাসত্যের কান্না। নয়নের সব পানিই তারা উৎসর্গ করছেন তার জন্য যিনি মানবতার অহংকার, যিনি দুজাহানের সরদার, যিনি রহমাতুল্লিল আলামিন, যিনি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর