শিরোনাম
শনিবার, ২২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাসিম খান চিশতি

কাসিম খান চিশতি (১৬১৪-১৬১৭) মুঘল আমলের সুবেদার। তিনি সুবেদার ইসলাম খান চিশতির ছোট ভাই।

ইসলাম খানের পরেই কাসিম খান বাংলার সুবেদার হয়ে আসেন। ১৬১৩ সালে তাকে নিয়োগদান করা হলেও কার্যত তিনি ১৬১৪ সালের মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তায় তিনি তার বড় ভাইয়ের চেয়ে ভিন্ন ছিলেন এবং ভাইয়ের তুলনায় তার সাহস, উদ্যম, সততা ও অধ্যবসায় কম ছিল। তিনি ছিলেন কলহপ্রবণ, স্বেচ্ছাচারী ও ঔদ্ধত্য স্বভাবের এবং কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁর আচরণে সৌজন্য ও মর্যাদাবোধের অভাব ছিল।

কাসিম খান কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য ব্যতিরেকেই প্রায় তিন বছর (মে ১৬১৪ থেকে এপ্রিল ১৬১৭) বাংলা শাসন করেন। তিনি দিউয়ান মির্জা হুসাইন বেগের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন।

তার অন্যায় আচরণে বখশি ও ওয়াকিয়ানবিশদের বৈরী ভাবাপন্ন করে তোলে। তিনি কোচবিহারের রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ ও কামরূপের রাজা পরীক্ষিৎ নারায়ণকে বন্দি করে তাদের ধর্মে আঘাত দেন। মুঘল গভর্নরের এ কার্যক্রমের প্রতিবাদে কোচবিহার ও কামরূপে বিদ্রোহ দেখা দেয়। কাসিম খান কাছাড়ের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন এবং তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

পরবর্তী সময়ে বীরভূম, পাচেট, হিজলি ও চন্দ্রকোনার জমিদার যথাক্রমে বীর হামির, শামস খান, বাহাদুর খান ও বীরবাহুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক অভিযান প্রেরিত হয়েছিল। এরপর কাসিম খান তার সময়ের প্রথম ও প্রচণ্ড বহিরাক্রমণের সম্মুখীন হন। আরাকানের রাজা মং খামৌংগ (হাসাইন খান) এবং পর্তুগিজ স্বেচ্ছাসৈনিক সিবাস্টিয়ান গঞ্জালেস বাংলায় মুঘলদের সীমান্ত থানায় সম্মিলিত আক্রমণ পরিচালনা করেন।

প্রথমদিকে আরাকান রাজা ও পর্তুগিজ হামলাকারীরা সাফল্য অর্জন করে। তাদের সম্মিলিত সেনাদল বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদী অতিক্রম করে ভুলুয়া অধিকার করে এবং দেশীয় রাজ্যগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ ও লুণ্ঠন চালিয়ে উত্তরদিকে অগ্রসর হয়। মুঘলদের পরাজয় অত্যাসন্ন হলে আকস্মিকভাবে তাদের ভাগ্যের মোড় ঘুরে যায়। আরাকানি ও পর্তুগিজ বাহিনীর মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয় এবং এতে তাদের মৈত্রীর অবসান ঘটে। তাদের পারস্পরিক সংঘর্ষকালে মুঘলরা আরাকানিদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে। ফলে আরাকানিরা অধিকৃত অঞ্চল থেকে পশ্চাৎপসরণ করে। আরাকানিরা মুঘল অধিকৃত অঞ্চলে দ্বিতীয়বার প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

আরাকান রাজা ও তার ভ্রাতুষ্পুত্র চারদিক থেকে মুঘল বাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত হন এবং নিরাপদে পশ্চাৎপসরণের নিশ্চয়তা লাভের জন্য মুঘলদের সঙ্গে অপমানজনক চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। কাসিম খান কর্তৃক আসাম আক্রমণকালে তার শোচনীয় পরিণতি ঘটে এবং এতে তার সৈন্য ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

আবদুর রশিদ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর