সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু মোকাবিলায় চাই সমন্বিত উদ্যোগ

অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার

ডেঙ্গু মোকাবিলায় চাই সমন্বিত উদ্যোগ

ডেঙ্গু হলো ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি ভাইরাল সংক্রমণ। সংক্রমিত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। ফ্লাভিভাইরিডি ফ্যামিলির ফ্লাভি ভাইরাস জেনাস গ্রুপের ভাইরাস ডেঙ্গু আমাদের দেশে আগে ছিল না। এটি আফ্রিকার কিছু কিছু দেশে দেখা যেত। কিন্তু এ ভাইরাস এখন এতটাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যে, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এখন ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর আনুমানিক ১০০-৪০০ মিলিয়ন সংক্রমণ ঘটছে। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৪০০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ২২ হাজার মৃত্যু ঘটছে। বর্তমান পরিস্থিতি আধুনিক বিজ্ঞানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উন্নত অনুন্নত সব দেশের মানুষকে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। আনুমানিক ১৪১টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি তবে দেখতে পাব ডেঙ্গু প্রথম ১৯৬০-এর দশকে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) রেকর্ড করা হয়েছিল এবং এটি ‘ঢাকা জ্বর’ নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশে এটি বেশি পুরনো নয়, গত কয়েক দশক যাবৎ বাংলাদেশে এটির প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ৬২টি জেলায় এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এটি ২০০০-এর আগ পর্যন্ত কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়নি। ২০০০ সালের পর ডেঙ্গুজ্বর আবার দেখা দেয়। সে বছরে ৯৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যায়। তিন বছর পর মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে প্রায় শূন্যে নেমে আসে। তবে এটি আবার ২০১৮ সালে ফিরে আসে, ওই বছর ২৬ জন মারা যায় এবং ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে প্রতি বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত অঞ্চলের মধ্যে ঢাকা জেলা এবং ঢাকা বিভাগ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডেঙ্গুজ্বর এখন শীর্ষ ১০টি বিশ্ব স্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে একটি- এটি সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গত ৫০ বছরে ডেঙ্গু বিশ্বব্যাপী ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এক ধরনের মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ বছরের সাম্প্রতিক সময়ে যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সেটি অতীতের যে কোনো রেকর্ড ভেঙে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যা অতি দ্রুত একটি সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মোকাবিলা জরুরি হয়ে পড়েছে। আগের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে অনেকগুণ বেশি, যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মৃত্যুহারও একই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে। এই ক্রমান্বয়ে দ্রুত রোগী বৃদ্ধির যে পরিস্থিতি তা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর যে কোনো দেশের স্বাস্থ্য কাঠামোর পক্ষে মোকাবিলা করা দুরূহ। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দৃশ্যমান। এ বিশাল সংখ্যক রোগীকে জরুরি সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

জুন-জুলাই থেকে আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়টা থাকে বর্ষা-বৃষ্টি। এ সময় প্রায়ই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। বাসাবাড়ির আশপাশের জলাধারগুলোতে পানি জমে থাকে। আবার জলাধার ছাড়াও পানি জমে থাকতে পারে এমন অব্যবহৃত পাত্র বা পরিত্যক্ত সব জিনিসেই পানি জমে থাকতে পারে। যেমন ছাদের টবে, চৌবাচ্চায় পানি জমে, ফেলে দেওয়া বোতল, প্লাস্টিকের পাত্র, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদিতে অল্প বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। এসব জমে থাকা পানিতে জন্মায় ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা। এ সময়ের তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা ও বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। ডেঙ্গু মোকাবিলায় যেমন প্রিভেন্টেবল বা প্রতিরোধমূলক একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা রয়েছে, তেমনি চিকিৎসাও কার্যকরীভাবে দেওয়া সম্ভব। ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় রোগীকে নিরবচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ ও সহায়ক চিকিৎসা জরুরি। রোগীর লক্ষণ ও জটিলতা অনুয়ায়ী চিকিৎসা প্রদান করতে হয়। ডেঙ্গু চিকিৎসায় খুব নির্দিষ্ট কোনো ওষুুধ না থাকলেও যিনি আক্রান্ত হবেন তার লক্ষণ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা নিলে জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি কমানো যায়। ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও জটিলতা অনুযায়ী ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের। ক্লাসিক্যাল ও হেমোরেজিক। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুতে জ্বর সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মধ্যেই সেরে যায়। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে পাঁচ থেকে সাত দিন পর সংকটাপন্ন অবস্থা দেখা দেয়। অনেক সময় নাক, মুখ, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত, এমনকি মলের সঙ্গেও রক্তপাত হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে গিয়ে শরীরের চামড়ার নিচে অভ্যন্তরীণ অংশে রক্তক্ষরণ হবে যা বাইরে থেকে দৃশ্যমান হয় না। ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ হয়। পরিস্থিতি আরও জটিল হলে রোগীর হাত-পা দ্রুত ঠান্ডা হতে শুরু করে, রক্তচাপ কমে যায়। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচন্ড ঘামতে শুরু করে ও ছটফট করতে থাকে। বমিভাব বা বমি হতে পারে। এ সময় শ্বেতরক্তকণিকার স্বল্পতা, ইলেকট্রোলাইটের অসমতা, যকৃতের সমস্যা, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী শকে চলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। তাই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই ক্লোজড মনিটরিং দরকার। লক্ষণ ও জটিলতা অনুযায়ী তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা জরুরি। ডেঙ্গু তীব্র জ্বর, শরীরে লালচে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ, ঘাড়, পিঠ ও মাংসপেশিতে ব্যথা, অস্থিসন্ধি বা হাড়ে ব্যথা, চোখের পেছনে ও চারপাশে ব্যথা, খাবারে অরুচি ও স্বাদের পরিবর্তন, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি লক্ষণ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে। ডেঙ্গু সাধারণত ১. ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু, ২. হেমোরেজিক ডেঙ্গু, ৩. ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ডেঙ্গু জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসতে পারে।

ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসা : ডেঙ্গুজ্বরে শরীরের তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। এ সময় মাথায় পানি দেওয়া ও শরীর মুছে দেওয়ার মাধ্যমে জ্বর কমাতে হবে। ডেঙ্গুজ্বরে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলেও অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে ডেঙ্গুজ্বর জটিল আকার ধারণ করলে রোগীর শরীরে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।

ডেঙ্গুজ্বরের মূল চিকিৎসা হলো- শরীরে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থাপনা। পানির পাশাপাশি ফলের রস, স্যুপ, ওরস্যালাইন, ডাবের পানি, শরবত প্রভৃতি তরল খাবার খাওয়াতে হবে। ডেঙ্গু রোগী শারীরিকভাবে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর অন্তত সাত দিন ভারী কাজ করা থেকে বিরত থেকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বরের চার-পাঁচ দিন পর সিবিসি ও প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্লাটিলেট কাউন্ট লাখের কম হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর যে কোনো দেশের জন্যই এত বেশি সংখ্যক রোগীর ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমাদের চিকিৎসকদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণের পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অতি তৎপর হতে হবে অন্যথায় শুধু প্রতিকারমূলক হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে জটিল রোগীদের জীবন হুমকির হাত থেকে রক্ষা করা দুরূহ হবে। সুতরাং ব্যবস্থা করতে হবে যেন রোগীর সংখ্যা কম হয়। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সবাইকে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় কাজগুলো বাধ্যতামূলক করতে হবে।

ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এখন খুব ভয়ের বিষয় হলো- এডিস মশা এদের জীবনচক্র ও প্রজনন চক্রে পরিবর্তন আনছে। আবার ডেঙ্গু ভাইরাসও ডেঙ্গু রোগের ক্লিনিক্যাল লক্ষণগুলোতে পরিবর্তন আনছে। এডিস মশা আগে পরিষ্কার পানিতে প্রজনন কার্য সম্পাদন করত। কিন্তু এখন অপরিষ্কার জলাবদ্ধ স্থান ডোবা, নালা, নর্দমা ইত্যাদিতেও বংশবিস্তার করতে পারে। আবার ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো আগের তুলনায় ভয়াবহ হচ্ছে, অতি দ্রুত জটিলতা তৈরি করছে। ফলে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। তাই এ রোগের প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আমাদের বেশি জোর দিতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন থাকার ফলে এর বিরুদ্ধে এখনো কোনো কার্যকরী ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা যায়নি। তাই এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোর একটাই উপায়, তা হলো আক্রান্তের সংখ্যা কমানো।

এখন কথা হলো রোগীর সংখ্যা কী করে কমানো সম্ভব? রোগীর সংখ্যা কমাতে হলে প্রথম কাজ হলো ভেক্টর বা ডেঙ্গু ফিভার তৈরির বাহক ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত এডিস মশা যেন বংশবৃদ্ধি না করতে পারে এবং কামড়াতে না পারে। দিনে বা রাতে ঘুমালে মশারি ব্যবহার করতে হবে। বাসাবাড়িতে অ্যারোসল বা স্প্রে ব্যবহার করে মশার সংখ্যা কমাতে হবে। শরীরের অনাবৃত স্থানগুলোতে Mosquito repellent ব্যবহার করা। বাইরে গেলে হাত-পা ঢেকে থাকে এমন পোশাক পরিধান করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূলমন্ত্র এডিস মশার বিস্তার রোধ করা। তাই মশার প্রজনন কেন্দ্র বা ব্রিডিং প্লেসগুলো ধ্বংস করতে হবে। নিজ নিজ বাসভবনসহ আশপাশের সব জায়গা এলাকার সবাই মিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। পুকুর, ডোবা, নালা, নর্দমা, ড্রেন, বদ্ধ জলাশয় সবাই মিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বদ্ধ জলাশয়গুলোতে নিয়মিত লার্ভিসিডাল প্রয়োগ করতে হবে এবং নিজ নিজ কর্তব্যস্থলের চারপাশে সম্ভাব্য মশার প্রজননস্থল চিহ্নিতকরত (কর্তৃপক্ষকে অবগত করাসহ) তা ধ্বংসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নির্মাণাধীন ভবন, বহুতল ভবন, পার্কিং এলাকা, ছাদ, সানসেটে জমে থাকা পানি প্রতি ২-৩ দিন অন্তর পরিষ্কার করা এবং ওই স্থানগুলোতে লার্ভিসাইড (Larvicide) প্রয়োগ করতে হবে। সম্ভব হলে কর্তব্যস্থলে ভালো মানের মশা প্রতিরোধক (Repellent) সরবরাহ করা। মশক নিধন সরঞ্জামাদি (ফগার মেশিন/হ্যান্ড স্প্রে) দিয়ে মশক নিধন (পূর্ণাঙ্গ ও লার্ভা) কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা করতে হবে। এ রোগ সম্বন্ধে সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে (প্রেষণা, পোস্টার এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে)।

শুধু পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে এ দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব নয়। এ কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সবারই নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসে এ কার্য সম্পাদন করতে হবে। ব্যক্তি, পরিবার, কমিউনিটি লেভেলের সবারই মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সবার চেষ্টাতেই ডেঙ্গুর ব্রিডিং প্লেসের সংখ্যা কমানো সম্ভব। এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার করার ব্যাপারটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মশা নিয়ন্ত্রণ ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে ওষুুধগুলো মশা মারার জন্য ব্যবহার করা হয়, মশার প্রজনন কেন্দ্র ধ্বংসে বা মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয় তা বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিয়মিত ব্যবহার করা হয় তা যেন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষের স্বাস্থ্যহানির কারণ না হয়। হবে যেন ওষুধ প্রয়োগ কার্যকরী হয়। ডেঙ্গু মশা যেমন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে পাশাপাশি মশার ওষুুধের দ্বারা যেন মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণ করা শুধু সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের দায় নয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয় সামগ্রিকভাবে সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে এটি করতে হবে। কোনো বিচ্ছিন্ন কর্মসূচি একে সফল করবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিউরেটিভ ও প্রিভেন্টিভ দুভাবেই উদ্যোগ সামগ্রিকভাবে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সবাই যদি সচেতন হয় এবং সমন্বিত উদ্যোগ নেয় তবে সংক্রমণ কমবে সুস্থতা বাড়বে মৃত্যু কমবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই ডেঙ্গু নেই। আমাদেরও সেই অবস্থানে যেতে হবে ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ। ডেঙ্গু সম্পূর্ণ মুক্ত না করতে পারলেও অন্তত নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় যেন থাকে সেই পর্যায়ে যাওয়ার প্রত্যয় আমাদের সবার গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : সাবেক উপ-উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ খবর