সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি

মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ

পদ্মা সেতু, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল লাইন-৬ ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেপ্টেম্বরে। এটিই হবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল। ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেলসংযোগও চালু হতে যাচ্ছে সেপ্টেম্বরে। এর মাধ্যমে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াত ব্যবস্থা আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশও খুলবে সেপ্টেম্বরে। অক্টোবরে চালু হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের একাংশ। এ টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত লন্ডনের হিথ্রো, নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি, আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দরের আদলে। ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হবে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্প। যার মাধ্যমে জাতির আরেকটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটবে। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের দ্বাদশ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে। তার আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই আরও অন্তত চারটি মেগা প্রকল্পের দ্বার খুলে দেওয়ার ফলে শেখ হাসিনা সরকারের বিস্ময় সাফল্য জনগণের সামনে ধরা দেবে। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এবং অবকাঠামোর উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে পদ্মা সেতুসহ আটটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয় বর্তমান সরকার। পরে অবশ্য মেগা প্রকল্পের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ। তলাবিহীন ঝুড়ি বলে বাংলাদেশকে ব্যঙ্গ করত বিশ্বমোড়লদের কেউ কেউ। সে অবস্থা থেকে অর্ধশতাব্দীর ব্যবধানে উন্নয়নের সোপানে ওঠা এক বিশাল অর্জন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর ৭ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল। এ সময়ে আওয়ামী লীগের অনেক সাফল্য রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি : ২০২১ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশকে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের সাময়িক মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। আর এটি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে ২০২১ সালে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি বাংলাদেশের একটি বিরাট অর্জন এবং এমন সময় এই মাইলফলক অর্জন করে যখন বাংলাদেশে তার বিজয়ের ৫০ বছরপূর্তি করেছে। ৫০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন বিস্ময়কর। অগ্রগতির সবচেয়ে বড় সময়টা পার করেছি গত ১৪ বছরে। বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে যে উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা হয়েছে তা অতীতে কখনো হয়নি। এই সময়ে বাংলাদেশের গড় আয়ু বেড়েছে, আর্থ-সামাজিক সব ধরনের সূচকে বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। 

করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা : ২০২০ সাল থেকে সারা বিশ্ব করোনায় লন্ডভন্ড। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের চার বছরের দুই বছর কেটেছে করোনা মোকাবিলায়। করোনা মোকাবিলায় নানা রকম অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও বাংলাদেশ শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব এবং ত্বরিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কারণে করোনার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশগুলো যখন করোনায় বিপর্যস্ত হয়েছে তখন বাংলাদেশ করোনার প্রকোপ সহনীয় মাত্রায় রাখতে পেরেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে কখনোই করোনায় মৃত্যুর হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি।

দৃশ্যমান মেগা প্রকল্প : সরকারের বড় সাফল্যের একটি হলো বড় বড় প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হয়েছে এবং এটি বদলে যাওয়া বাংলাদেশের স্মারকচিহ্ন হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বড় বড় প্রকল্পগুলো বাংলাদেশকে এক নতুন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। বিশেষ করে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বিনির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে সম্মান এবং মর্যাদার এক জায়গা করে নিয়েছে।

অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া : চার বছরে সরকারের বড় সাফল্য হলো অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সম্পদ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়াও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, গার্মেন্টস রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতে একটি সচল এবং গতিশীল অবস্থা দেখা গেছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

গৃহহীনদের জন্য ঘর : তৃতীয় মেয়াদে সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল ‘থাকবে না কেউ গৃহহীন’ প্রকল্প। মুজিববর্ষ হিসেবে কোনো মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে, সে জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ এখন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। প্রতিটি গৃহহীন মানুষকে ঘর দেওয়া একটি বৈপ্লবিক কর্মসূচি যা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিদিনই নিজেকে অতিক্রম করছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেই ইতোমধ্যে হতদরিদ্র অবস্থা থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান শ্যাক্স বলেছে, ২০৭৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ১৬তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। আজ বাংলাদেশের মানুষ যেসব দেশে কাজ পাওয়াকে স্বপ্ন বলে ভাবছে সেসব দেশের অবস্থানও বাংলাদেশের পেছনে থাকবে। বাংলাদেশ গত দেড় দশকে যে ইন্দ্রজালিক অগ্রগতি লাভ করেছে তা সম্ভব হয়েছে দেশের শিল্প ক্ষেত্রে তথা ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য। যে দেশের রপ্তানি আয় ছিল স্বাধীনতার আগে মাত্র ২০০ কোটি টাকা সে দেশ ৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে চলতি অর্থবছরে। বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে উঠতে হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

লেখক : পরিচালক, বিজিএমইএ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর