বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইবাদতের মাস মহররম

মুহম্মদ আশরাফ আলী

আশুরা আমাদের মাঝে সমাগত। হিজরি সনের প্রথম মাসের ১০ তারিখ আশুরা। হিজরি সাল গণনা করা হয় রসুল (সা.)-এর হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা কেন্দ্র করে। ইসলামের বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগি যেমন রোজা, হজ, কোরবানি, শবেকদর, শবেবরাত, আশুরা ইত্যাদি হিজরি সনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ফলে সঠিক সময়ে ইবাদত-বন্দেগি পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হয়। এজন্য তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে হিজরি সন বা চান্দ্রমাস গণনাকে ফরজে কিফায়া গণ্য করা হয়েছে। যদি উম্মতের একজনও এর ব্যবহার না করে তাহলে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ গুনাহগার সাব্যস্ত হবে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনার মাস ১২টি, আসমানগুলো ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার কোরো না।’ (সুরা তওবা-৩৬)

এ আয়াতে চারটি সম্মানিত মাসকে চিহ্নিত করতে গিয়ে নবী করিম (সা.) বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং অন্যটি হলো রজব (তাফসির ইবনে কাসির) হিজরি সন অনেক কারণেই গুরুত্ব বহন করে।

আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, লোকেরা আপনাকে নবচন্দ্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, তা হলো মানুষের এবং হজের জন্য সময় নির্ধারণকারী। (সুরা বাকারা-১৮৯) এ আয়াত থেকে স্পষ্ট আল্লাহতায়ালা বান্দাদের হিসাবনিকাশের সুবিধার্থে চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন। এজন্য চন্দ্র মাস তথা হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম।

হিজরি সন গণনা ইসলামী সংস্কৃতির অনুসরণ। এজন্য চান্দ্রমাস হিসেবে হিজরি সন গণনা করা মুসলমানদের জন্য কর্তব্য। হিজরি সন ইসলামী ঐতিহ্যের বাস্তব নমুনা; যা নিজ ঐতিহ্য অনুসরণ, অনুকরণ করতে শেখায়।

১০ মহররমকে আশুরা বলা হয়। ইসলামে এ দিনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এ দিনে ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আশুরার বিশেষ তাৎপর্য লাভ করেছে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর হাতে রসুল (সা.)-এর প্রিয় নাতি হজরত হোসাইন (রা.) ও তাঁর বিপুলসংখ্যক অনুসারীর শাহাদাত-বরণের ঘটনায়। তবে আগে থেকেই দিনটি অসামান্য মর্যাদার অধিকারী। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবী (সা.) কিছু ইহুদির পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, যারা আশুরার দিনে রোজা রেখেছিল। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কীসের রোজা? উত্তরে তারা বলল, এদিন আল্লাহ হজরত মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (অন্য বর্ণনায় আছে ফিরাউনের নির্যাতন থেকে মুক্ত করেছিলেন) এবং ফিরাউনকে দলবলসহ নিমজ্জিত করেছিলেন। আর এদিনেই হজরত নুহ (আ.)-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল। ফলে এদিনে হজরত নুহ (আ.) ও হজরত মুসা (আ.) কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এ দিন রোজা রাখি। তখন নবী (সা.) বললেন, মুসা (আ.)-এর অনুসরণ এবং এদিন রোজা রাখার ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। এরপর তিনি সেদিন (আশুরার দিন) রোজা রাখেন এবং সাহাবিদেরও রোজা রাখতে আদেশ করেন। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ) হজরত আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আশাবাদী যে আশুরার দিনের রোজার অসিলায় আল্লাহ অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি) ইবাদতের মাস মহররমে আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর