শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল...

মো. আমিনুল ইসলাম

আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল...

তাওয়াক্কুল আরবি শব্দ। এর অর্থ আস্থা রাখা, নির্ভর করা কিংবা ভরসা করা। ইসলামের পরিভাষায় যে কোনো প্রয়োজনে, আপদ-বিপদে তার সমাধানের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করাকেই তাওয়াক্কুল বলে। পবিত্র  কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যদি আল্লাহতায়ালা তোমাকে কোনো দুঃখ-কষ্ট দেন তাহলে তিনি ছাড়া অন্য কেউই নেই তা দূরীভূত করার, আবার তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান তাহলে তাঁর সে কল্যাণ রদ করারও কেউ নেই। তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান তাকেই তা প্রদান করেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত ১০৭)। রসুল (সা.) থেকে বর্ণিত ‘যদি তোমরা আল্লাহর ওপর  যথাযথ ভরসা করতে তাহলে  আল্লাহ তোমাদের পাখির ন্যায় রিজিক দান করতেন। পাখি সকাল বেলায় ক্ষুধার্থ অবস্থায় বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় উদরপূর্তি করে ফিরে আসে।’ (মুসনাদে আহমদ ১/৩০)। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে দান করবেন রিজিক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা আত তালাক, আয়াত ৩)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তারপর আপনি কোনো সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওপর নির্ভরকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৫৯)। তাওয়াক্কুল হলো মানব হৃদয়ের একটি উন্নত অবস্থা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর ইমান ও পূর্ণ আস্থা আনার ফলে মানুষ তার মনে যখন আল্লাহর ভরসাকে সুদৃঢ় করে নেয় তখনই সে তাওয়াক্কুলের সাধ লাভ করে। তার মন তখন চিন্তামুক্ত হয়। আল্লাহ যে অতি উত্তম প্রভু ও অতি উত্তম কার্য নির্বাহক এ আয়াতের মর্ম তখন সে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে। যা কিছু পৃথিবীতে সংঘটিত হয় তা যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ করার ক্ষমতা রাখে না তা বোঝার জ্ঞান লাভ করে। আমাদের মনে রাখতে হবে তাওয়াক্কুলের নীতি অবলম্বনকারী ব্যক্তি কখনো হতাশ হয় না। বিপদে, মুসিবতে, সংকটে মুষড়ে পড়ে না। যে কোনো দুর্যোগ, সংকট, মুসিবতে আল্লাহতায়ালার ওপর দৃঢ় আস্থা রাখে। যত রকমের বিপদ, মুসিবত, কষ্ট, জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন এলেও কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না। সব ক্ষমতার উৎস হলেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি ছাড়া মানুষকে কেউ কোনো কিছু দিতে পারে না। তাই সব কাজে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করার কোনো বিকল্প নেই। তাওয়াক্কুলের প্রকৃত অর্থই হচ্ছে দীন ও দুনিয়ার কাজে কল্যাণ পাওয়া এবং অনিষ্টতা থেকে দূরে থাকার জন্য আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা করা। কেননা আল্লাহতায়ালা ছাড়া কেউ কিছু দিতে পারে না, ক্ষতি ও উপকারও করতে পারে না। সুতরাং বান্দা যখন আল্লাহর ওপর কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ভর করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেসব বান্দাকে সেভাবেই উত্তম রিজিক দান করেন। প্রতিটি মুসলমান নরনারীর অন্তরে সর্বদা এ বিশ্বাস থাকা উচিত যে, আমার সুখ-দুঃখ ইজ্জত সম্মানের মালিক একমাত্র আল্লাহতায়ালা। সুতরাং আমাকে সবসময় তার ওপরই তাওয়াক্কুল করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আসমানসমূহ ও জমিনের গায়েব আল্লাহরই। এবং সবকয়টি বিষয় তাঁর দিকেই ধাবিত হবে, অতএব তুমি তাঁরই ইবাদত কর এবং একান্তভাবে তাঁরই ওপর ভরসা কর।’ (সুরা হুদ, আয়াত ১২৩)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তুমি বরং সর্বোচ্চ পরাক্রমশালী দয়ালু সত্তা আল্লাহতায়ালার ওপরই ভরসা কর। (সুরা আশ শোয়ারা, আয়াত ২১৭)।

সুতরাং একজন প্রকৃত মুমিন হিসেবে আমাদের সবার উচিত সর্বদা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা। তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকা নয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ওপর ভরসা করে জীবনের সব বিপদে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর