বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশের পরিস্থিতি কি অবনতির দিকে?

আলম রায়হান

দেশের পরিস্থিতি কি অবনতির দিকে?

বাংলাদেশের জন্য ২০২৩ সালের সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক ঘটনাবলির ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে বাংলাদেশ কি অধিকতর গণতান্ত্রিক ধারায় আগাবে নাকি ল্যাংড়া পা খাদে পড়বে আবার? এদিকে যে আলামত দেখা যাচ্ছে তা খুব একটা স্বস্তির নয় বলে মনে করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- আগামী নির্বাচন ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশ যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের উন্নতি না হলে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি হতে পারে। যার স্পষ্ট ইন্ডিকেটর হচ্ছে সম্প্রতি ১৪ জন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের সুপারিশ। যা পাবলিস করা হয়েছে। মনে করা হয়, নানান কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ আছে। যে কারণে তারা সরব ও তৎপর। এদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নিকটতম প্রতিবেশী এবং ৭১-এর বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের মোটেই উচ্চবাচ্য নেই। তবে গভীর পর্যবেক্ষণ আছে তা সহজেই অনুমেয়। এদিকে বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক শক্তি মরণপণ চেতনায় মুখোমুখি। যে কোনো সময় যুদ্ধ দৃশ্যমান হতে পারে। আর কবর যেন একটাই। সামগ্রিক অবস্থার আলোকে আমরা বিশেষ এক পরিস্থির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। তা হতে পারে সর্বনাশা খাদ অথবা উত্তরণের স্বর্ণদ্বার।

বিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নানান প্রশ্ন দেখা দেয়। এ ধারায় সম্প্রতি প্রধান প্রশ্ন, দেশ আসলে কোনদিকে যাচ্ছে? ক্যালেন্ডার হিসাবে দেশ নির্বাচনের দিকে যাওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, স্থানীয় এবং কয়েকটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠান করেই গলদঘর্ম নির্বাচন কমিশনের প্রধান হাবিবুল আউয়াল ৩০ জুলাই আগ বাড়িয়ে বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার এ বক্তব্য জনমনে কোনো আশা জাগায়নি। বরং প্রশ্ন গভীর হয়েছে, আসলে কী হবে? সমাধান কি নির্বাচনে নাকি সমাধান সহিংস সংঘাত, রক্তপাত ও জীবন নাশে। কপালের লিখন কী হয়ে গেছে, আমাদের রাজনীতি এবং ক্ষমতার পালাবদল মানেই ‘রক্তগঙ্গায় স্নান’?

সুদূর ও নিকট অতীত বলে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদলের সময় সহিংসতা যেন এক ধরনের ট্র্যাডিশন। ইতিহাস বলে, মুঘল সাম্রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের সময় প্রতিবারই সিংহাসন নিয়ে যুদ্ধ হতো। ভাইয়ের নির্দেশে ভাইয়ের চক্ষু উৎপাটন থেকে শুরু করে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, পিতাকে আমৃত্যু বন্দি রাখা- মুঘল সাম্রাজ্যের বলতে গেলে এক ধরনের ট্র্যাডিশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ ধারা কেবল মুঘল নয়, সব সাম্রাজ্যেরই ইতিহাসের অংশ। যা একবিংশ শতাব্দীতে স্বাভাবিক নয়। কিন্তু ঘটছে। ভিন্নমাত্রায়, অন্যভাবে। বাংলাদেশেও যা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে একাধিকবার ঘটেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবারই রাজনৈতিক আন্দোলন ক্লাইমেক্সে গিয়েছে রক্তের সিঁড়ি মাড়িয়ে। সম্প্রতি পালে হাওয়া লাগা রাজনৈতিক আন্দোলনে মহা আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এখানেই!

টানা তিন মেয়াদের শাসনকালের সাড়ে ১৪ বছরের মাথায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ এক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। যাকে অতি কঠিন বললে সম্ভবত মোটেই বেশি বলা হবে না। ১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে-পরের প্রায় দুই বছরের রাজনৈতিক সংকট, সংঘাত এবং আগুনসন্ত্রাস মোকাবিলার সময়ও আওয়ামী লীগ সরকার আজকের মতো সংকট অনুভব করেনি বলে অনেকের ধারণা। কারণ হচ্ছে- তখন বিরোধী পক্ষের পেছনে বিদেশি শক্তি সরাসরি ছিল না। বরং বলা হয়, বিদেশি শক্তি প্রকাশ্যে ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পেছনে। ১৪ সালের সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-এর বৈঠকের ঘটনায় যা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। কিন্তু ১০ বছর পর ২০২৩ সালের সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে ভারত দৃশ্যত নিশ্চুপ। যেন মুখে কুলুপ এবং এটাই হওয়া উচিত। কিন্তু সবাই তো উচিত কাজটি করছে না। বরং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা শক্তিগুলো বেশ সরব ও তৎপর। তারা বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে ‘ব্যাকুল’। এতটাই ব্যাকুল যে, ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের শেষলগ্নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম কিলঘুসির শিকার হওয়ায় জাতিসংঘ প্রতিনিধির টুইট এবং ১৩ দূতাবাসের বিবৃতির ধাক্কায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দু-তিন দিনে ব্যস্ততম সময় কাটিয়েছে। তবে কোনো ফলোদয় হয়েছে কি না তা আলিমুল গায়েবই জানেন। আমজনতা জানে না।

কোনোই সংশয় নেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা খুবই ন্যক্কারজনক। কিন্তু এটি এতটাই বড় নয় যে, গোটা বিশ্ব কেঁপে যাবে! একটা গান আছে না- ‘আকাশটা কাঁপলো কেন, জমিনটা কাঁপলো কেন!’ হিরো আলমের বিষয়টি তো গানের মতো নয়। বরং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনায় বিশ্ববিবেক কেঁপে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেঁপেছে শোনা যায়নি। ধরা যাক, ওই ঘটনাগুলো অনেক আগের এবং তা নির্বাচন অথবা মহান গণতন্ত্রকেন্দ্রিক ছিল না। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার সময়ও তো পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। টকশোতে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের দেওয়া তথ্যমতে সেই নির্বাচনের প্রাক্কালে ৩৯ জন প্রার্থী হামলার শিকার হয়েছেন এবং অভিযোগের এ তীর যথারীতি দল বিশেষের বিরুদ্ধেই। তা হলে সাড়ে চার বছরের মাথার এমন কী ওলটপালট হলো যে, উপনির্বাচনে এক প্রার্থী কিল-ঘুসির শিকার হওয়ায় একেবারে চায়ের কাপে সুনামি হওয়ার মতো ঘটনা ঘটল? তবে পরিস্থিতি খুবই জটিল সেটি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আমজনতার প্রশ্ন, জটিল এ পরিস্থিতিতে কোন দিকে যাচ্ছে দেশ। অনেকেই বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর অনেক গভীরে এবং জটিল। যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটতে পারে জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে। বিরোধী দলের কর্মসূচির ধরন এবং সরকারি দলের কর্মসূচির ধারা যে বার্তা দিচ্ছে তাতে কেউ কেউ মনে করেন পরিস্থিতি ক্রমে অবনতির দিকে যাবে। আর তখন সরকার জরুরি অবস্থা জারির দিকে গেলে খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ সরকার দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখতে চায় বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ৩১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর একটি উক্তি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আন্দোলন যে কেউ করতে পারে কিন্তু মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কাউকে মনমরা অবস্থায় দেখতে চাই না। জ্বালাও-পোড়াও দেখে ভয় পাবেন না। আমরা আর এটা করতে দেব না।’

পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী রাজনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী এবং বিচক্ষণ। বিপরীতে দৃশ্যবান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নানান মানদন্ডে বেশ মাজুর দশায় আছে। একটি বড় দলের নেতৃত্বের যে কী দৈন্যদশা তা ২৯ জুলাই ডিবি কার্যালয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ভোজন পর্বে বেশ পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিত নিরাপদ অবস্থানে আছে এবং এ সংকট যত না অভ্যন্তর থেকে উৎসারিত তার চেয়ে অনেক বেশি বিদেশ থেকে আগত, বজ্রপাতের মতো। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবজারভেশনের কথা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক।

বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দিকে যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে সিভিল সোসাইটি গ্রুপগুলো ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক গ্রুপগুলোকে যেভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে সেটি নিয়েও সিভিল সোসাইটি চিন্তিত।’ উল্লেখ্য, একটি দেশের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার মাধ্যমে আমেরিকার কোম্পানিগুলো যাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেজন্য ১৬৫টির বেশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামগ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে সেসব দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের দিকেও আলোকপাত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মার্কিন এ বার্তা নিঃসন্দেহে সরকারবিরোধী শক্তিকে উজ্জীবিত করেছে। যার সূচনা হয়েছে র‌্যাবের ওপর স্যাংশনের ধারায় আমেরিকার ভিসানীতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে। আমেরিকার ভিসানীতি ঘোষণার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে  যে পরির্তনের ধারার সূচনা হয়েছে তারই একটি হচ্ছে বিএনপি এবং তার মিত্রদের উজ্জীবন। মৃতসঞ্জিবনী সুরা যেন। শুধু তাই নয়, সাবেক শাসক দল বিএনপি এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। তা হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তা না হলে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকেই দেশে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি ও মিত্ররা ১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রার পর রাজধানীতে বিশাল সমাবেশ করেছে। অবস্থান কর্মসূচি করেছে রাজধানীর প্রবেশমুখে। সারা দেশে সমাবেশ করছে। বোঝাই যাচ্ছে, বিএনপির কর্মসূচি লাগাতার। এদিকে বিএনপি যা করে আওয়ামী লীগও প্রায় তা-ই করে। যেন যমজ ভাই! যমজদের ক্ষেত্রে আহার-নিদ্রা-হাগু-মুতু প্রায় এক সূত্রে গাঁথা। কিন্তু যমজরা কখনোই নিজের মধ্যে মারামারি আথবা সংঘাত করে না। এখানেই হচ্ছে সাম্প্রতিককালের ‘যমজ ভাই’ প্রবণতার আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে মৌলিক ব্যবধান। এরা নিজেদের কেবল সংঘাত নয়, বিনাশের খেলায় মত্ত। এক্ষেত্রে তারা অনেকটা আটোমান সাম্রাজ্যের ভাইদের মতো। বাংলাদেশে যার ন্যক্কারজনক মনুমেন্ট হয়ে আছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। যেদিন আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন অনেকটা অলৌকিকভাবে। বিনাশের রাজনীতিতে আর একটি ঘটনা ঘটেছে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টন-বায়তুল মোকাররম এলাকায়। সেদিন ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি এবং লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা খুবই আলোড়ন তৈরি করেছিল। এর আগের দিন এবং পরের দিনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে- তিন দিনের সহিংসতায় দেশে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। তিন দিনের তুমুল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কার্যত রাজপথ দখলে নিয়েছিল। তারপর ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে মোড় নেয়। এ ধারায় আসে জরুরি অবস্থা এবং জেঁকে বসে অদ্ভুত ধরনের এক অসাংবিধানিক সরকার। বিগত কয়েকদিনে চলমান পরিস্থিতি যেখানে গেছে তাতে সহসাই সংকটের বরফ গলবে বলে মনে হয় না। ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল নিশ্চিত করার সর্বসম্মত কোনো ঐকমত্য শক্তিশালী পক্ষগুলোর মধ্যে এখনো দানা বাঁধেনি। বরং সবাই যেন দানবীয় শক্তি নিয়ে মাঠে নামার অধীর অপেক্ষায় আছে। এরপরও সময়ের দাবি সমঝোতা। কিন্তু এ দাবির কতটুকু বিবেচনায় নেবে সরকার এবং বিরোধী পক্ষ- সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। আর এরই মধ্যে পরিস্থিতি যেখানে পৌঁছেছে তাতে সমস্যার সমাধান কেবল কঠিন নয়, অনেকের বিচারে প্রায় অসম্ভব।

একটি কথা আছে- নদী দিয়ে এক জল দুবার প্রবাহিত হয় না। সঙ্গে স্বীকৃত বিষয় হচ্ছে- ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। আশা এবং আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এখানেই। দেশের রাজনীতির ধারা সমঝোতার দিকে প্রবাহিত হলে রক্ষা। তা না হলে বিপর্যয় ঘটতেই পারে। স্মরণ করা যেতে পারে, আগস্ট মাস আওয়ামী লীগ এবং সমমনাদের জন্য শোকের মাস। আর কাকতালীয় হলেও এ মাস বিরুদ্ধ পক্ষকে অন্যরকম জোশ জোগায়। এমনকি এ মাসে ঘটা করে জন্মদিন পালনের তান্ডবও দেশবাসী দেখেছে। সাধারণভাবেই বলা হয়- ৭১-এ পরাজিত শক্তি আগস্ট মাসে মরিয়া হয়ে ওঠে। তখন তাদের চেতনায় ১৫ আগস্ট রংধনু হয়ে ধরা দেয়। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চলমান আগস্ট মাস কঠিন বার্তা দিচ্ছে। এমনটাই আশঙ্কা মুক্ত চিন্তার মানুষদের। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ জুলাই বলেছেন, ‘মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’ কিন্তু খেলা কি আসলেই সহজে ঠেকানো যায়? আবার তা যদি হয় পরাশক্তির প্রকাশ্য ইন্ধনে! সাম্প্রতিক আশঙ্কার বিষয় এখানেই অত্যন্ত গভীর।

 

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর