বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিস্তার বিপন্ন অবস্থা

নদী বাঁচাতে প্রয়োজন সাহসী পদক্ষেপ

আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্লোগান ছিল ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’। বাংলাদেশ নদ-নদীর দেশ। স্লোগানে না থাকলেও এ দেশের প্রধান নদ-নদীর একটি তিস্তা। তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা এ নদীর ওপর নির্ভরশীল। উজানে পানি প্রত্যাহারের পরিণতিতে শুষ্ক মৌসুমে ভাটির দেশের তিস্তা নদীকে লড়তে হচ্ছে অস্তিত্বের সংগ্রামে। মাত্র তিন দশক আগেও যে নদীর এ কূল থেকে ও কূলের কিছু দেখা যেত না, সে নদী আজ বিপন্ন হয়ে উঠছে ক্রমান্বয়ে। উজান থেকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা পলি আর ভয়াবহ ভাঙনে তিস্তার গভীরতা কমে গেছে। এ নদীর বুকজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন চর। সংস্কার বা খননের অভাবে গত ৩০ বছরে নদী তার মূল প্রবাহ থেকে সরে প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। ফলে তিস্তায় অল্প পানিতেই বন্যা ও ভাঙনের মতো ক্ষতি অনিবার্য হয়ে ওঠে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয় তিস্তাপাড়ের হাজারো মানুষ। আতঙ্ক, কান্না আর হতাশার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। নদী গবেষকদের অভিমত, যদি অচিরেই তিস্তা খনন করা না হয় তাহলে এ অঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবনজীবিকা হুমকিতে পড়বে। মরুভূমিতে পরিণত হবে তিস্তা অববাহিকা। তিস্তা ঘিরে প্রতিদিনই নানা সংকট তৈরি হবে। এখন ভরা বর্ষার মৌসুম- অথচ তিস্তায় পানি নেই। কখন ভারত থেকে পানি আসবে সে আশায় রয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। ভরা বর্ষায়ও তিস্তার বুকজুড়ে বিরাজ করছে অসংখ্য চর। কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও জেগে ওঠা চরের দীর্ঘশ্বাস, কান্না। নদী সুরক্ষার আন্দোলনকারীরা বলছেন, তিস্তা পরিচর্যায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া না হলে বিশাল এক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিতে তিস্তা-তীরবর্তী লালমনিরহাট, রংপুর ও নিলফামারী জেলার মানুষ। তিস্তা নদীর অবস্থা বিপন্ন প্রায় হয়ে ওঠায় উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার জীববৈচিত্র্যে তার অপপ্রভাব পড়বে। এক সময়কার মঙ্গা উপদ্রুত জেলাগুলোর প্রান্তিক মানুষের অবস্থা আবারও ফিরে যাবে আসা কালো দিনগুলোতে। যে কারণে নদী রক্ষায় সরকারকে অনতিবিলম্বে নিতে হবে সাহসী সিদ্ধান্ত। নদী খনন ও পানি সংরক্ষণে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণের কথা ভাবতে হবে।

সর্বশেষ খবর