বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পরীক্ষায় ভালো ফলাফল এবং ভালো মানুষ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

পরীক্ষায় ভালো ফলাফল এবং ভালো মানুষ

দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা এসএসসির  ফল প্রকাশ পেয়েছে। পত্রিকার পাতায় দেখলাম অনেকে হেসেছে আনন্দে, আবার অনেকের চোখে বিষাদের অশ্রু। এই হাসি-কান্নার পেছনে অকৃতকার্য হওয়া নিয়ে যতটা ভাবনা ছিল তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল জিপিএ-৫ না পাওয়ার অনুশোচনা। অনেক ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকের একমাত্র পাওনা যেন জিপিএ-৫। ভালো ফলাফল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভালো মানুষ হওয়া। বর্তমান সমাজের অনেকে এ বিষয়টি ভুলে যাচ্ছে। সবাই ছুটছে জিপিএ-৫ নামক পাগলা ঘোড়ার পেছনে। অথচ বর্তমান সমাজে শিক্ষার্থীদের এক বিরাট অংশ মাদক, নেশা, ইভ টিজিং, অনৈতিক কার্যক্রম ও কিশোর গ্যাং ইত্যাদি অপকর্মে জড়িত। তাদের অনেকেই ভালো শিক্ষার্থী। কিন্তু তারা যে ভালো মানুষ হচ্ছে না, তা অভিভাবকদের বুঝতে হবে। তাদের সঠিক মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। সুনাগরিক হিসেবে তাদের গড়ে তুলতে হবে। নৈতিক শিষ্টাচারের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি একটি বর্বর জাতিকে শিক্ষিত জাতি রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। প্রতিটি মানুষকে তিনি একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ছিলেন। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের নিকট রসুল প্রেরণ করেছেন, যে তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করে, তাদের পরিশোধন করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও তারা পূর্বে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে ছিল” (আলে ইমরান-১৬৪)। এ বছর এসএসসি পরীক্ষার পাসের হার বিগত বছরের তুলনায় অনেক কম। জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যাও কম। আমার মেয়ে দুজন এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তারা দুজনই সায়েন্স থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আল হামদুলিল্লাহ। তারাসহ এ বছর পরীক্ষায় যারা সফল হয়েছে তাদের আমরা শুভেচ্ছা জানাই। তাদের অনাগত ভবিষ্যৎ আরও সুন্দর হোক, হেসে উঠুক আনন্দের ঝলমলে প্রভাত। আর যারা কোনো কারণে অকৃতকার্য হয়েছে তাদের প্রতিও আমাদের অনেক ¯ন্ডেœহ-মমতা। তাদের ভবিষ্যৎ আনন্দময় হোক। আল্লাহ তাদের সহায় হোক। পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পর যারা অকৃতকার্য হয় তাদের মন খারাপ হয়। মা-বাবার অবস্থা আরও বেশি বিষণ্ণ হয়। মা-বাবার অবস্থা দেখে সন্তান ভেঙে পড়ে। সন্তানের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। ভবিষ্যতে আরও খারাপ ফলাফলের আশঙ্কা বেড়ে যায়। অতএব, মন খারাপ করার বিষয়টি গঠনমূলক হতে হবে। তাই অভিভাবকদের কর্তব্য হলো, ফলাফল খারাপ হওয়ার সঠিক কারণ বোঝা এবং এর সমাধানের ব্যবস্থা করা। ধমক দেওয়া, তিরস্কার করা ইত্যাদি পরিহার করে উপদেশমূলক সমাধান অবলম্বন করতে হবে। অন্য কারও সঙ্গে তুলনা বা কাউকে দোষারোপ না করে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। অভিহিত করতে হবে তার মূল কাজ এবং বাস্তব দায়িত্ব সম্পর্কে। তাকে আদর্শ, সৎ ও ভালো মানুষ হওয়ার প্রতি অনুপ্রাণিত করতে হবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, “তোমরা সরলতা ব্যবহার কর, কঠোরতা ব্যবহার কর না, সান্ত্বনা প্রদান কর, ঘৃণা সৃষ্টি কর না” (সহিহ বুখারি)। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা অবশ্যই সবার প্রত্যাশা। ভালো ফলাফল মনোবল বৃদ্ধি করে। জীবনে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা বয়ে আনে। তবে সন্তানকে এর জন্য সাধ্যাতীত চাপের মধ্যে রাখা যাবে না। যাবে না তাকে হীনমন্যতা বা অন্য কোনো ক্ষতির পথে ঠেলে দেওয়া। জিপিএ-৫ এর তুলনায় তার শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ বেশি জরুরি। জরুরি তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধ সম্পর্কে অবগত হওয়া। মানবিক মূল্যবোধ, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, ছোটদের প্রতি সহমর্মিতা করা, নাগরিক সচেতনতা এবং ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় তাকে সমৃদ্ধ হতে হবে। এসব বিষয়ে সন্তানকে সচেতন করা বুদ্ধিমান অভিভাবকদের কর্তব্য এবং সুখী পরিবার ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সহায়ক।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর