শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসলামে বৈরাগ্যবাদ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে

আবদুর রশিদ

ইসলাম সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিশ্বাসী। মানব সত্তার চাহিদা অস্বীকার করাকে সেহেতু ইসলাম অনুমোদন করে না। মানব স্বভাবের পরিপন্থী হওয়ায় এ পবিত্র জীবন বিধানে বৈরাগ্যবাদকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলামে বৈরাগ্যবাদ নেই এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে পবিত্র কোরআনের ভাষ্যে। মহান আল্লাহ বলেন, আর বৈরাগ্য সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে। আমি এটা তাদের ওপর ফরজ করিনি (সুরা হাদিদ, আয়াত ২৭)। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসেও বলা হয়েছে ইসলামে বৈরাগ্যবাদ নেই। বৈরাগ্যবাদ মানে হিন্দু খ্রিস্টান সন্যাসীদের মতো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র বাদ দিয়ে শুধু ধর্মকর্ম নিয়ে পড়ে থাকা। যত নবী, রসুল দুনিয়ায় এসেছেন তাঁদের অনেকেই সমাজনেতা বা রাষ্ট্রনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় সর্বজনীন রাষ্ট্র গঠন করে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মে বৈরাগ্যবাদের চর্চা থাকায় মুসলমানদের অনেকেই জৈবিক চাহিদা অগ্রাহ্য করে শুধু আল্লাহর ইবাদতেই মগ্ন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিরুৎসাহিত করেন। তিনি তাদের বৈবাহিক জীবনের পাশাপাশি আল্লাহর ইবাদতের হুকুম দেন। এক হাদিসে বলা হয়েছে- রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কসম। নিশ্চয়ই আল্লাহর ডর-ভয় তোমাদের চেয়ে আমার বেশি, তবুও আমি নফল রোজা কখনো রাখি কখনো রাখি না। রাতের কিছু অংশ নফল ইবাদতে কাটাই আর কিছু অংশে ঘুমাই এবং বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ি। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার সুন্নত (অর্থাৎ বিবাহ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার অনুসারী নয়। (বুখারি)।

হজরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বর্ণিত আরেক হাদিসে বৈরাগ্যবাদের ধারণাকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উসমান ইবনে মাজউন (রা.) স্ত্রীকে ছাড়া জীবনযাপনের অনুমতি প্রার্থনা করলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা প্রত্যাখ্যান করেন। বর্ণনাকারী বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত উসমানকে অবিবাহিতভাবে জীবনযাপনের অনুমতি দিলে আমরা আল্লাহর ইবাদতে এমনভাবে মনোনিবেশ করতাম যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমাদের নপুংশক বলে মনে হতো। (বুখারি, মুসলিম)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈরাগ্যবাদের ভুল প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করতে অবিবাহিত থাকাকে বিবাহিতদের তুলনায় নিকৃষ্ট বলে অভিহিত করেছেন।

এমনকি তাদের শয়তানের ভাই বলেও ভর্ৎসনা করেছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবি আক্কাফ ইবনে ওয়াদাকে সম্বোধন করে বলেন, তোমার কি স্ত্রী আছে? তিনি বলেন, না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দাসীও নেই? তিনি বলেন, না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অথচ তুমি সামর্থ্যবান! তাহলে তো তুমি শয়তানের ভাই! আমার সুন্নত হলো বিবাহ করা। তোমাদের অবিবাহিতরা তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট। (মুসনাদে আহমদ)।

উপরোক্ত হাদিসসমূহের আলোকে বলা যায়, বৈরাগ্যবাদ ইসলামের পথ নয়। ইসলাম জীবনবিমুখ হওয়াকে সমর্থন করে না। বরং সুস্থ সমাজ গঠনে পারিবারিক জীবনকে ইসলামে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

 লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর