আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করবে, এরপর তোমাদের কৃতকর্মের পাওনা কেয়ামতের দিন পুরোপুরি আদায় করে দেওয়া হবে। যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই সফলতা পাবে। মনে রেখ, এই পার্থিব জীবন ছলনার মালসামানা ছাড়া আর কিছুই নয়’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫) পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায় সবাই। কেউ মৃত্যুর স্বাদ পেতে চায় না। অথচ মৃত্যুই সত্য। মানুষ পৃথিবীতে সব সময় সফলতা কামনা করে। সফলতা একেকজন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারণ করে। কেউ দুনিয়ার বুকে প্রচুর সম্পদ, নারী, গাড়ি, বাড়ি, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদির মাধ্যমে নির্ধারণ করে। কেউ আবার সুঠাম দেহ বা অন্য কিছুকে মনে করে। অথচ প্রকৃত সফলতা কীসে তা আল্লাহ রব্বুল আলামিন এ আয়াতে সুন্দরভাবে বলে দিয়েছেন। রসুল (সা.) বলেছেন, জান্নাতে ১ বিঘত পরিমাণ জায়গা দুনিয়া ও তাতে যা আছে তার থেকে উত্তম’ (তিরমিজি) যে ব্যক্তি সত্যিকারের কৃতকার্য, সে জাহান্নাম থেকে অব্যাহতি লাভ করবে এবং জান্নাতে দাখিল হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ দুনিয়ার জীবন ধোঁকা বই কিছুই নয়।
মৃত ব্যক্তিকে কবরে দাফন করার পর যখন তার নিকটজনেরা ফিরে আসে তখন কবরে দুজন ফেরেশতা এসে তাঁর সওয়াল-জওয়াব শুরু করে। এটাই মৃত ব্যক্তির মৃত্যুপরবর্তী প্রথম ধাপ। এখানে সে উত্তীর্ণ হলে পরের ধাপগুলো সহজ হয় এবং সে জান্নাতি বান্দা হিসেবে গণ্য হয়। মৃত ব্যক্তির সব সৎকর্মের (নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরোপকার, হালাল-হারাম ইত্যাদি) জন্য সে কবরের আজাব থেকে পরিত্রাণ পায়। আল্লাহ বলেন, ‘যিনি মৃত্যু ও জন্ম সৃষ্টি করেছেন এজন্য যে, তিনি তোমাদের পরীক্ষা করবেন কে তোমাদের মধ্যে আমলের বিবেচনায় উত্তম?’ (সুরা মুলক : ২) মৃত্যুপরবর্তী জীবন হলো কেয়ামত পর্যন্ত। কারণ কেয়ামত দিবসে সব মৃত ব্যক্তি (পুরুষ ও নারী) পুনরুজ্জীবিত হবে। মৃত্যুর পর দেহ কবরে মাটির সঙ্গে মিশে গেলেও আত্মা জীবিত থাকে। আত্মা সবার কথা শোনে, আবেগ-অনুভূতি পোষণ করে, আনন্দ ও দুঃখ অনুভব করে এবং দুনিয়াবাসীর ব্যাপারেও আগ্রহ অব্যাহত থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘এরা হচ্ছে তারা- ফেরেশতারা, যারা মৃত্যু ঘটায়, যখন তারা নিজেদের ওপর জুলুম করতে থাকে, এরপর তারা আত্মসমর্পণ করে বলে, আমরা তো কোনো মন্দ কাজ করতাম না, তখন ফেরেশতারা বলবে হ্যাঁ, তোমরা যা কিছু করতে আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত রয়েছেন।’
রসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন বান্দার আমলগুলোর মধ্যে প্রথমে নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। সুতরাং নামাজের হিসাব যদি সঠিকভাবে পাওয়া যায় তাহলে সে সাফল্য লাভ করে জান্নাতি হিসেবে গণ্য হবে। এরপর বান্দার জাকাতের হিসাব গ্রহণ করা হবে। আর এভাবেই গ্রহণ করা হবে অন্য আমলগুলো। (মিশকাত)
আল্লাহ বলেন, ‘কেয়ামতের দিন কান, চোখ ও অন্তরের ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ ‘আল্লাহর জমিনে কখনো তোমরা দম্ভভরে চলাফেরা কোরো না, কেননা তুমি কখনো এ জমিন বিদীর্ণ করতে পারবে না, আর উচ্চতায় তুমি কখনো পাহাড়সমানও হতে পারবে না’ (সুরা বনি ইসরায়েল : ৩৬-৩৭)
আমাদের মনে রাখতে হবে, মৃত্যুপরবর্তী জীবনের শেষ নেই। অনন্তকালের জীবন। এ জীবনের দুটি অবস্থান। একটি জান্নাত, আরেকটি জাহান্নাম। তারাই হবে জান্নাতি যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে দুনিয়ার বুকে জীবনযাপন করেছে। আর যারা তা অমান্য করেছে তারাই জাহান্নামি। আর জাহান্নাম আগুন দ্বারা পরিবেষ্টিত। সুতরাং জাহান্নামের আগুন এবং কবরের আজাব থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবার উচিত সময় নষ্ট না করে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আদেশ -নিষেধ মেনে দুনিয়ার জীবন পরিচালিত করা। তা হলেই আমরা হব সফলকাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।