বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আশ্রয়ণ : মর্যাদাহীন মানুষের শান্তিনিকেতন

মনজুরুল আহসান বুলবুল

আশ্রয়ণ : মর্যাদাহীন মানুষের শান্তিনিকেতন

১. অভিধানে বলছে ‘আশ্রয়ণ’ শব্দের অর্থ : কারও আশ্রয় বা সাহায্য গ্রহণ করা বা কাউকে আশ্রয় বা সাহায্য প্রদান করার ক্রিয়া বা ভাব। বাংলাদেশে এই ‘আশ্রয়ণ’ দৃশ্যমান হয়েছে ঠিকানাবিহীন মানুষের ‘জমিসহ ঘরের মালিকানা’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।

কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন লিখেছিলেন : ‘গৃহ বলিলে একটা আরাম বিরামের শান্তিনিকেতন বুঝায়- যেখানে দিবাশেষে গৃহী কর্মক্লান্ত শ্রান্ত অবস্থায় ফিরিয়া আসিয়া বিশ্রাম করিতে পারে। গৃহ গৃহীকে রৌদ্র বৃষ্টি হিম হইতে রক্ষা করে।  পশুপক্ষীদেরও গৃহ আছে। তাহারাও নিজ নিজ গৃহে আপনাকে নিরাপদ মনে করে।’

বেগম রোকেয়া এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি। তিনি দেখিয়েছিলেন গৃহ আরাম বিরামের শান্তিনিকেতন হলেও বৈষম্যমূলক সমাজে বিশেষত নারীদের চিত্রটি আরও করুণ। তাই তিনি লিখছেন : ‘আমাদের সামাজিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে দেখি, অধিকাংশ ভারত নারী গৃহসুখে বঞ্চিতা। যাহারা অপরের অধীনে থাকে, অভিভাবকদের বাটীকে আপন ভবন মনে করিতে যাহাদের অধিকার নাই, গৃহ তাহাদের নিকট কারাগারতুল্য বোধ হয়। পারিবারিক জীবনে যে সুখী নহে, সে নিজেকে পরিবারের একজন গণ্য বলিয়া মনে করিতে সাহসী নহে, তাহার নিকট গৃহ শান্তিনিকেতন বোধ হইতে পারে না।’

খেয়াল রাখতে হবে বেগম রোকেয়া যে ভারত নারীদের কথা বলছেন তা অবিভক্ত ভারত, সে সময় বাংলাও তার অংশ।

২. সময় তো আর স্থির থাকে না, প্রতিনিয়ত বদলায়। এটাই প্রগতি। বেগম রোকেয়ার আরাম-বিরামের শান্তিনিকেতনের চিত্রটি ম্লান হয়ে যায় গৃহ সুখে বঞ্চিতা নারীদের দিকে তাকিয়ে দেখি। বিশেষত বাংলার দরিদ্র নারীদের চেয়ে কে আর বেশি এই সত্যটি বুঝতে পারেন। কিন্তু ওই যে, বললাম সময় পাল্টায়। আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে মহীয়সী বেগম রোকেয়াও হয়তো বিস্মিত হতেন। বিস্মিত হতেন এ কারণে যে, বাংলার ঠিকানাবিহীন মানুষগুলো আজ ঠিকানা পাচ্ছেন, গৃহসুখ বঞ্চিতা নারীরা আজ নিজে জমির মালিক হচ্ছেন, গৃহের মালিক হচ্ছেন।

কীভাবে এটি সম্ভব হলো?

জবাব : প্রজ্ঞাবান, দেশপ্রেমিক, মানবপ্রেমিক রাজনীতির কারণে। রাজনীতি অনেকেই করেন, কিন্তু সবার মাথায় দেশ ও মানুষের বিষয়টি থাকে না, যতটা থাকে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা। বহু অপশাসনে উৎপীড়িত এই বাংলা সেই রকম প্রজ্ঞাবান, দেশপ্রেমিক, মানবপ্রেমিক রাজনীতিক পেয়েছে বলেই এ কথা উচ্চকণ্ঠে বলা যায়, এদেশের লক্ষ কোটি সবহারা নিঃস্ব মানুষ আজ তাদের নিজ ঠিকানায় গড়ে তুলতে পেরেছেন তাদের শান্তিনিকেতন।

৩. সব শুরুরও শুরু থাকে। সেই শুরুর আগের শুরুর কথাটি বলি। শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে এই বঙ্গে তিনি এসেছিলেন, যার মননে, মেধায়, কাজে পুরোটাই ছিল বাংলা নামের দেশ আর বাংলার মেহনতী মানুষের মুক্তির স্বপ্ন। তিনি এই জাতির পিতা, এই স্বাধীন দেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রক্তস্নাত যুদ্ধে জয় পাওয়া স্বাধীন বাংলার মাটিতে পা রেখেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আজীবন স্বপ্নের বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথাটিই দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ৩ জুন বাংলাদেশ সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেছিলেন : ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।’

তিনি স্বপ্ন দেখার কথা বললেন বটে কিন্তু আসলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছেন আরও আগে থেকেই। ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান সে সময়কার নোয়াখালী, বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির চরপোড়াগাছা গ্রামে যান। এ সময় তিনি সেখানকার ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল-অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। সেই থেকে শুরু।

৪. ১৯৭৫ সালে কালো হায়েনার ছোবলে অন্ধকারে ঢেকে যায় গোটা দেশ। কিন্তু সব অন্ধকার এক সময় দূর হয়। অবারিত সূর্যের আলো রুদ্ধ করে রাখে সাধ্য কার? অবশেষে সেই সূর্য নতুন আলো ফেলে। অন্ধকার চিরস্থায়ী নয়, আলোই চিরস্থায়ী, এই বাংলায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জাতির পিতার শুরু করা কাজ আবার শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে ১৯৯৭ নতুন শুরুর নতুন অভিযাত্রী দলের নেতা জাতির পিতারই কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁরই চিন্তা ও দর্শনের হাত ধরে শুরু হয় আশ্রয়ণ। এই পর্যায়ে ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল-অসহায় মানুষের পুনর্বাসন শুধু নয়, শুরু হয় তাদের সবাইকে স্থায়ীভাবে ঠিকানা গড়ে দেওয়ার নতুন উদ্যোগ। বেগম রোকেয়ার ‘গৃহ’-এর হতাশা কাটিয়ে মূর্ত হয়ে ওঠে শেখ হাসিনার ‘আশ্রয়ণ’। বেগম রোকেয়ার হতাশা কাটে যখন এই আশ্রয়ণে জমির মালিকানা পায় গৃহের নারীও। রামগতির চরপোড়াগাছার সেই স্বপ্ন যাত্রা আজ ছুঁয়েছে বাংলাদেশের সব প্রান্তর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পথরেখায় তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা হাঁটছেন দৃপ্ত পদভারে।

আশ্রয়ণ আজ বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বেরই এক অনন্য প্রকল্প। পৃথিবীর নানা দেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে সহায়তার নানা উদ্যোগ আছে, কিন্তু একেবার ঠিকানাবিহীন মানুষকে, তাদের নামে সরকারি জমির মালিকানা দিয়ে সেখানে সরকারি খরচে বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন সুবিধাসহ ঘর বানিয়ে স্থায়ী শান্তিনিকেতন গড়ে তুলে দেওয়ার নজির পৃথিবীতে নেই। এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ সুবিধাসহ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ২ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা একক গৃহের মালিকানা প্রদান করা হয়। লক্ষ্য করার বিষয়, প্রকল্পটি একজন মানুষ ও তার পরিবারকে মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ সৃষ্টির জন্যই নয় শুধু, স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রীকেও জমির মালিকানা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নেরও অনন্য এক দৃষ্টান্ত। গবেষকরা খুঁজে দেখতে পারেন, এমন একটি অনন্য উদাহরণ আরেকটি মিলবে না।

৫. এই কর্মযজ্ঞটি কত বিশাল ও ব্যাপক কিছু পরিসংখ্যানেই তা বোঝা যাবে। সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে : ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হওয়া শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পেই ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭টি পরিবারকে ঠিকানা গড়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫ জনের। আশ্রয়ণের পাশাপাশি প্রায় একই ধরনের প্রকল্প হচ্ছে বীরনিবাস, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, গুচ্ছগ্রাম, দুর্যোগ সহনীয় ঘর, গৃহায়ণ তহবিলের ঘর। এসব প্রকল্প মিলিয়ে এ যাবৎ জমির মালিকানাসহ ঘরের মালিক হয়েছে ৪১ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ। শুধু বসতবাড়ির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৮ হাজারেরও বেশি একর জমি। দৃশ্যমান ফলাফল হচ্ছে : দেশের ২১টি জেলার সব উপজেলাসহ ৩৩৪টি উপজেলা আজ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত।

পরিসংখ্যান আর না বাড়িয়ে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ৩৩৪টি উপজেলায় আশ্রয়ণের পাশাপাশি সমধর্মী প্রকল্পের দিকে একটু যদি চোখ বুলাই, লাল সবুজে বর্ণিল ঘরগুলো দৃষ্টিনন্দন এক নতুনের দিকে নিয়ে যাবে আমাদের। এর মধ্যেই আমরা দেখব অন্য রকম সৃজনশীলতা এবং ভূ-প্রকৃতি অনুযায়ী টেকসই প্রকৌশল চিন্তার নান্দনিক ছাপ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই গৃহনির্মাণ শৈলীর মধ্যে আমরা দেখি : সাধারণভাবে প্রতিটি পরিবারের জন্য টয়লেট, রান্নাঘর ও একটি বারান্দাসহ দুই কক্ষের সেমিপাকা একক ঘর, নদীসংলগ্ন এলাকার জন্য বিশেষ ডিজাইনের সিআই সিট ঘর, পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর, অন্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ডিজাইনের টং ঘর, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বহুতল ভবন, উপকূলীয় মানুষের জন্য পাকা ব্যারাক, সমতল এলাকার জন্য সেমিপাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলের জন্য সিআই সিট ব্যারাক, ভিক্ষুকদের জন্য সিআই সিটের একক ঘর। গৃহনির্মাণের এই নানা বৈচিত্র্য প্রমাণ করে, এই উদ্যোগ কোনো দায়সারা উদ্যোগ মাত্র নয়। উপকারভোগী জনগোষ্ঠী প্রকৃতই যাতে তাদের অঞ্চলভেদে সর্বোচ্চ ব্যবহারিক সুবিধা পায় সেটিই বাস্তবায়ন করা হয়েছে অত্যন্ত নিবিড় চিন্তাভাবনা করে। এক টুকরা জমিতে একটি বাড়ি বা একটি পরিবারের আবাসন সুবিধা নয় শুধু আশ্রয়ণ দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। আশ্রয়ণ ও সমধর্মী উদ্যোগগুলো পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন করেছে যেমন, তেমনি জমির মালিকানায় অসহায় নারীদের সুযোগ করে দিয়ে এই নারীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে সামাজিক মর্যাদার অনন্য উচ্চতায়, তাদের সহায়তা করেছে মূলধারায় ফিরে আসতে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মোচনে, স্থায়ী আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, সামাজিক সমতা নিশ্চিত করা, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে এ উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে এনেছে ব্যাপক ও দৃশ্যমান পরিবর্তন।

৬. দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব এবং মৌলিক এই দর্শন শুধু তাত্ত্বিকভাবে বা কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এই দর্শনের ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিকও শক্তিশালীভাবেই দৃশ্যমান। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’-এর একটি দৃশ্যমানরূপ আশ্রয়ণ ও সমধর্মী প্রকল্পগুলো। এই মডেলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে : একেবারে হতদরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর উপার্জন ক্ষমতা বৃদ্ধি, তাদের সম্মানজনক জীবিকা ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, জমিসহ ঘরের মালিকানায় নারীর ক্ষমতায়ন, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ তৈরি, দক্ষতা ও উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, গ্রামেই শহরের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

এই মডেলের পরিবর্তনের সূচক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে : আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের মধ্যে আগের জীবনের চেয়ে এই প্রকল্পে আসার পর নিরাপত্তাবোধ বেড়েছে ৯৮ দশমিক ৮৭ ভাগ, তাদের সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে ৯৮ দশমিক ৫ ভাগ, জীবনযাপনের মান বেড়েছে ৯৫ দশমিক ২ ভাগ, ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে ৯২ দশমিক ৯৫ ভাগ, ধর্মীয় জীবনে ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে ৭৮ দশমিক ৭৭ ভাগ, নতুন আসবাবপত্র কেনার সক্ষমতা বেড়েছে ৭০ দশমিক ২২ ভাগ, ইতিবাচক আচরণে উন্নতি হয়েছে ৬০ দশমিক ৭৮ ভাগ, সামাজিক সম্প্রীতি বেড়েছে ৬০ দশমিক ২১ ভাগ, ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেনার সক্ষমতা বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ ভাগ, সঞ্চয়ের হার বেড়েছে ৪৪ ভাগ এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৫ ভাগ। ১৯২২ সালের জুলাই ২২ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে : প্রকল্পের আঙিনায় কৃষিজ পণ্য উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টন, মাছ উৎপাদন ৭২০ টন, গবাদিপশু পালন করা হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার এবং হাঁস-মুরগি-কবুতরের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ [সূত্র : আইএমইডি পরিবীক্ষণ, ২০২২]। আর কোনো পর্যালোচনা না করেই বলি, এটিই হচ্ছে দৃশ্যমান উন্নয়ন, এটিই হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। এর সঙ্গে যে কথাটি উল্লেখ করতেই হবে : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরও কয়েকটি উদ্যোগের মতো আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পুনর্বাসন প্রকল্প হিসেবে বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি কেড়েছে। UN Habitat বলে পরিচিত জাতিসংঘের United Nations Human Settlements Program এ এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘আশ্রয়ণ : অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের পদস্থ নীতিনির্ধারকরা।

৭. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই যে পথযাত্রা তা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের পথরেখা ধরেই। বঙ্গবন্ধুই হচ্ছেন তাঁর আত্মবিশ্বাস ও সাহসের উৎস।

আমরা নিশ্চয়ই বিস্মৃত হইনি, ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশে পা রেখেই বলেছিলেন : ...কবিগুরু তুমি বলেছিলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি। কবিগুরু, আজ তুমি এসে দেখে যাও বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে...।

আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে বেগম রোকেয়া তাঁর ‘গৃহ’ প্রবন্ধে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন বিশেষত নারীদের নিজগৃহ না থাকার জন্য।

আশ্রয়ণসহ সমধর্মী প্রকল্পগুলোর দৃশ্যমান সাফল্য হাতে নিয়ে শেখ হাসিনাও আজ বুঝি বলতে পারেন, হে মহীয়সী বেগম রোকেয়া, আজ আপনি এসে দেখে যান, বাংলার হতদরিদ্র, সম্মানহীন, মর্যাদাহীন নারীরাও আজ জমির মালিক হয়েছে, স্বামী পরিজন নিয়ে গড়ে তুলেছে একেবারে নিজস্ব ‘আরাম বিরামের শান্তিনিকেতন’। এ প্রকল্প তাদের দিয়েছে সম্মান, মর্যাদা, জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে জয়ী অমিত শক্তি ও আত্মবিশ্বাস।

                লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

সর্বশেষ খবর