বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যবসা মর্যাদার প্রতীক

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

ব্যবসা মর্যাদার প্রতীক

হালাল জীবিকা উপার্জন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। ব্যবসা-বাণিজ্য জীবিকা উপার্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম। বর্ণিত আছে, ‘দশ ভাগের নয় অংশ জীবিকা ব্যবসা থেকে উৎপাদিত হয়।’ (জামেয়ে সগির, জায়িফ) মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত জীবিকার তুলনায় উত্তম জীবিকা কেউ আহার করেনি। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে জীবিকা উপার্জন করতেন। (সহিহ বুখারি)। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) ব্যবসা করেছেন। সাহাবি আবু বকর, উসমান (রা.) এবং অগণিত সাহাবি ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসায়ী ছিলেন আবু হানিফা (রহ.) এবং বড় বড় উলামায়ে কেরাম ও ইমামগণ। ব্যবসা হলো উলামায়ে কেরামের শান ও মর্যাদার প্রতীক। ইহ ও পরকালে কল্যাণ লাভের অন্যতম উপায়। কোরআন হাদিসে ব্যবসার প্রতি দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। মহান প্রভুর ঘোষণা, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান কর।’ (সুরা জুমুআহ-১০)।

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বিশ্বস্ত ও নীতিবান ব্যবসায়ী নবী, সিদ্দিক ও শহীদগণের সঙ্গী হবেন’। (তিরমিজি)।

দুই হাজার ইংরেজির কথা। মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে বিদায়কালে জনৈক বন্ধু তার উপদেশে বলেছিলেন, ধর্মীয় খিদমতকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম করবেন না। বরং দীনি খেদমতের অবসরে ব্যবসার মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করবেন। বস্তুত বিষয়টা নিয়ে চিন্তাভাবনা সময়ের দাবি। কোনো নবীই ধর্মীয় কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের ওপর নির্ভর ছিলেন না। তাই ধর্মীয় কাজের ওপর জীবিকা নির্বাহের প্রতি নির্ভর না হয়ে ধর্মীয় কাজের ফাঁকে হালালভাবে জীবিকা উপার্জনের আত্মনির্ভর উপায় বের করা বর্তমানে খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন জীবিকা উপার্জনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা। যারা এ পথে অগ্রসর হচ্ছেন তাদের আমরা স্বাগত জানাই। কয়েকদিন আগের কথা। আগারগাঁও নোবেল কেয়ার হসপিটালে অনুষ্ঠিত এক সৌজন্য সভায় উপস্থিত হয়েছিলাম। শতাধিক আলেম, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও ধর্মভীরু ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়েছিলেন। কিছু নীতিবান ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে অত্যন্ত সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদানের প্রশংসনীয় প্রতিষ্ঠান তারা গড়ে তুলেছেন। এতে রয়েছে নিজেদের স্বাবলম্বী হওয়ার সম্ভাবনা। রয়েছে জনগণের সেবায় অংশগ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ। দুর্নীতিমুক্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গড়ে উঠেছে কর্মসংস্থানের মর্যাদাপূর্ণ পথ ও পন্থা। ইসলাম ধর্মে আকিদা-বিশ্বাস ও ইবাদতের মতো ব্যবসা-বাণিজ্যও দীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতেও বৈধ-অবৈধ এবং পাপ-পুণ্যের বিষয় সংশ্লিষ্ট আছে। অনেক মুসলমান নামাজ, রোজা গুরুত্ব সহকারে আদায় করেন, তবে উপার্জন ও জীবিকার ক্ষেত্রে হালাল হারাম ও বৈধ-অবৈধ বাছ-বিচার করেন না। জানেনও না। সৎ লোক ব্যবসায় না থাকার কারণে একটি বৈধ কর্মক্ষেত্র আজ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হতে চলেছে। যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হারাম জীবিকায় গঠিত শরীর বেহেশতে প্রবেশ করবে না। এর জন্য আগুনই শ্রেষ্ঠ।’ ইসলামী ফিকহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ক্রয়-বিক্রয়। আমরা তা পড়ি এবং পড়াই। কিন্তু এর বাস্তব নমুনা সমাজে নেই। নেই আমাদের মধ্যে এর চর্চা।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর