বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

কোন পথে হাঁটছে বিএনপি

আলম রায়হান

কোন পথে হাঁটছে বিএনপি

দৈনিক কালের কণ্ঠে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি প্রকাশিত আমার একটি কলামের শিরোনাম ছিল, ‘গল্পের বোকা কুমির এবং বিএনপি’। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে বিএনপির অবস্থান এবং চৌদ্দের নির্বাচনে বর্জনে বিএনপির অর্জনের প্রসঙ্গ ছিল এ লেখার উপজীব্য। সে সময় মনে হয়েছে, পরপর দুটি নির্বাচনেই বিএনপির পরিণতি হয়েছে শিশুতোষ গল্পের বোকা কুমিরের মতো। যে গল্পে যৌথভাবে প্রথমবার ধান এবং পরেরবার আলু চাষ করে কুমিরের প্রাপ্তি ছিল কেবলই বঞ্চনার। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির কী হবে? গল্পে কুমিরের তৃতীয়বারের প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তির বিষয় কিছু বলা নেই। ফলে শিশুতোষ গল্পের আলোকে আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্তির বিষয়টি মেলানো যাবে না। তবে কী হতে পারে সে বিষয়ে মোটামুটি ধারণা করা চলে। আর এ জন্য চলমান ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন মোটেই পুরনো দিনের গান নয়। সুখের স্মৃতি জাগানিয়া সোনালি দিন তো নয়ই, বলতে গেলে এই তো সেই দিনের ঘটনা। ফলে মোটামুটি সবারই জানা, ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করার খেলায় মেতেছিল বিএনপি। সঙ্গে ছিল তারেক রহমানের ভাষায় ‘যমজ ভাই’ জামায়াত। বলা হয়, চৌদ্দের সংসদ নির্বাচন ঠেকাবার লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াত প্রায় দুই বছর যে তান্ডব ও অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে তার পুরোধা কুশীলব ছিল জামায়াত। আর রাজনীতির এই নিষ্ঠুর খেলায় তৃতীয় পক্ষ থাকাও বিচিত্র কিছু নয়। তবে তৃতীয় পক্ষ ছিল কী ছিল না, তা নিয়ে সংশয় থাকতেই পারে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বর্জনের রাজনীতিতে বিএনপির কোনো অর্জন হয়নি। যার প্রমাণ সংসদ ও সরকারের পুরো মেয়াদ পূরণ এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। এই সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ধরা খেয়েছে বিএনপি অন্য রকম খেলায়। এ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনকে বানানো হয়েছিল জোটের কান্ডারি। যাকে ক্রেন দিয়ে টানার মতো করে রাজনীতির মহাসড়কে স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাজনীতিতে ওই টুকুই তাঁর প্রতিষ্ঠা ও সাফল্য। আন্তর্জাতিক মানের এই আইনজীবীর রাজনীতিতে আর কোনো অর্জন নেই। পরে অবশ্য বিএনপি প্রকাশ্যেই বলেছে, নির্বাচনী লড়াইতে ড. কামাল হোসেনকে নেতা বানানো ভুল ছিল। কিন্তু রাজনীতিতে ভুলের ফল ভোগ না করে কি কোনো উপায় থাকে? নাকি ক্ষমা আছে? নেই। শুধু তাই নয়, রাজনীতিতে ভুলের কারণে প্রাণ যাওয়ার উদাহরণও কিন্তু কম নয়। দেশে-বিদেশে এবং সেকাল, এ কালে এর অনেক দৃষ্টান্ত আছে। আর আঠারোর নির্বাচনে প্রার্র্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিএনপির এলোমেলো ব্যবস্থাপনা হোক, আওয়ামী লীগের অপকৌশলের তীব্রতায় হোক অথবা বিএনপির অভিযোগ অনুসারে রাতে ভোট গ্রহণ করার কারণেই হয়ে থাক- বিএনপি পরাজিত হয়েছে। এবং সেই সংসদও কিন্তু মেয়াদ পার করতে যাচ্ছে। আর এই পাঁচ বছরে যে উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে তাতে বিএনপি বললেই পঙ্গপালের মতো ভোটাররা আগামী নির্বাচনে দলে দলে গিয়ে ধানের শীষে ভোট দেবে- তা মনে করার কি বাস্তবসম্মত কোনো কারণ আছে! আর নির্বাচনের ফলাফল তো কেবল ভোটারের মাইন্ড সেটের ওপর নির্ভর করে না।

ভোটের রাজনীতিতে অনেক কলাকৌশল এবং খেলাধুলা আছে। ভোটের রাজনীতিতে খেলা আসলে খেলারামরাই খেলে। সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস আছে না, ‘খেলারাম খেলে যা’। উপন্যাসের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বাস্তবে রাজনীতি প্রসঙ্গে আসা যাক। রাজনীতি সহজ-সরল জনগণের নামে চললেও এর সামনে-পেছনে-ভিতরে-বাইরে মোটেই সহজ নয়। রাজনীতি অনেক জটিল ও কুটিল। খেলা আছে অনেক প্রকার। এই খেলায় মেধা-মনন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বাস্তবতায় বিএনপির রাজনৈতিক-মেধা মননের প্রসঙ্গ বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে, এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি যে মেধার পরিচয় দিয়েছে তার এক-দশমাংশও কিন্তু হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনে দেখাতে পারেনি দলটি। এরশাদের বিরুদ্ধে সেই সময় কেবল আন্দোলন প্রশ্নে সাফল্য নয়, পুরো শক্তি কেন্দ্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বেশ কৌঁসুলি খেলা খেলেছিল বিএনপি এবং এর নেপথ্য শক্তি কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রেও অভাবনীয় বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৭ সালে নূর হোসেন এবং ’৯০ সালের ১০ অক্টোবর জেয়াদসহ অসংখ্য মৃত্যুর প্রভাবে এরশাদ সরকার অথৈপাথারে ডুবুডুবু জাহাজের মতো হয়ে যায়। এ অবস্থায় জেয়াদের মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় ১৩ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে মারা যায় পলিটেকনিকের ছাত্র মনির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্রলীগ কর্মী মনিরের লাশের সামনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বক্তৃতা শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদলের মধ্যে গোলাম ফারুক অভিসহ এরশাদীয় এজেন্টরা হট্টগোল শুরু করে দেয়। এতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। এমনকি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ঐক্য টিকে থাকার বিষয়টিই সংকটে পড়ে যায়। এ সময় সর্বোচ্চ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। তিনি বলেছিলেন, ‘কে কোন স্লোগান দিয়েছে তাতে আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না, ঐক্য থাকবে।’ তাঁর এ প্রতিক্রিয়া নিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন সাংবাদিক আলী মামুদ। আর এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তা সামলানো যে কতটা কঠিন ছিল তার সাক্ষী হয়ে আছেন সেই সময়ের সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতা শফি আহমেদ। এরা দুজন এখনো নিজ নিজ পেশায় সক্রিয়।

এরপর বিএনপির সাফল্যের ঘটনা সবারই জানা। এরশাদ সরকারের পতনের পর ’৯১-এর সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতাসীন হয়। অথচ জনপ্রিয় ধারণা ছিল, ক্ষমতায় যাবে আওয়ামী লীগ। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলাকালে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মন্ত্রী হিসেবে কে কোন বাড়িতে থাকবেন তা বাছাই করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা গেল, নৌকা ডুবেছে! বিষয়টি হয়ে গেল, একসময়ের জনপ্রিয় বাংলা সিনেমার নামের মতো, ‘কার হাসি কে হাসে’।

’৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের পেছনে কেবল ভোটারদের ভোট নয়, ছিল অনেক খেলাধুলা। এমনকি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নিচে অনেকটা নৌকার আদলে জাহাজ প্রতীক থাকার বিষয়টিও ছিল চৌকশ এক খেলা। জাহাজ প্রতীককে বড় নৌকা মনে করে অনেক ভোটার জাহাজে সিল মেরেছেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে, নির্বাচনের ফলাফল কেবল ভোটারের মাইন্ড সেটের বিষয় নয়। আর ভোটের রাজনীতি থেকে লাগাতারভাবে দূরে থাকার বিরূপ প্রভাব থেকে বিএনপি আগামী নির্বাচনের সময় কতটা মুক্ত হতে পারবে তা এক বিরাট প্রশ্ন হয়েই আছে। নানান ঘটনাপ্রবাহ বলছে, সামনে জটিলতম এক নির্বাচন, চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে। এটি যেন বিএনপির জন্য সীতার অগ্নিপরীক্ষা! আমাদের দেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে সাফল্যের একটি প্রধান ইন্ডিকেটর হচ্ছে নির্বাচনের আগেই প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা। যেটি বিরোধী পক্ষ যৌথভাবে সফলভাবে করতে পেরেছে ১৯৯০ সালে। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারকে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য করা না গেলে আর যাই হোক, ভোটে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে পরাজিত করতে পারত না বিরোধী দল। একই রকমের বিজয় অর্জনের দৃষ্টান্ত আছে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ১৭৩ দিনের হরতালসহ নানান ঘটনায়। এর ফলে সারা রাত সংসদ চালিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আইন পাস করে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় ’৯৬-এর সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ। এ ঘটনাবলি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই। এবং এর সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছরে আওয়ামী বিরোধী রাজনীতির শিখ-ী বিএনপির সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গ সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এতে দেখা যাবে, ২০০৮ সালের নির্বাচনী খেলায় ক্ষমতাকেন্দ্রের নেপথ্য কুশীলবদের কাছে এনেও ধরে রাখতে পারেনি বিএনপি। ফলে ৩০ আসন পেয়ে ‘শক্তিশালী বিরোধী দলের’ তকমায়ই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বিএনপিকে। আর পরের দুটি নির্বাচনের ভোটের আগে সরকারকে পরাজিত করার খেলায় ছিটকে পড়েছে বিএনপি। বিধ্বস্ত হয়েছে। সে অবস্থা এখনো বিরাজমান। এরপরও আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে দলটি। তারা মনে করে, রাজ প্রায় হাতের কাছে। আর আলাদিনের প্রদীপ আমেরিকাসহ ইউরোপিয়ান শক্তি। কিন্তু রাজনীতির চোরাবালিতে আটকে পড়া বিএনপির মুক্তি মিলবে? এ প্রশ্নের উত্তর কিন্তু খুব বেশি গোলমেলে নয়। এদিকে কারও কারও বিবেচনায় অন্যরকম ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে শুরু থেকেই। আর ৩ আগস্ট প্রায় খোলাসা হয়েছে আমজনতার কাছেও। এই দিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। আর গোলাপির নীরবতা ভঙ্গ করে মুখ খুলেছে ভারত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে, সেটি নিয়ে ৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, ‘এটি রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়। আমাদের আগ্রহ শুধু সহিংসতামুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সরকার, মিডিয়া, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনীসহ অবশ্যই ভোটারদের ভূমিকা আছে। আওয়ামী লীগসহ সবাইকে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য বলেছি। যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি, যা বাংলাদেশের জনগণকে তাদের পরবর্তী সরকার বেছে নিতে সাহায্য করবে।’

আমেরিকার এই সুশীল উচ্চারণ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে একক এখতিয়ার প্রাপ্তির গ্রিন সিগন্যালের ফল কি না তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। তবে এ রকমই ধারণা করছেন অনেকে। আর এ নিয়ে অন্যরকম নেরেটিভও আছে কারও কারও। তারা মনে করেন, কূটনীতিতে ‘বলিবে উত্তরে, যাইবে দক্ষিণে, পূর্বেতে করিবে ঘোরাফেরা...’। এই কৌশল বেশ প্রচলিত। এদিকে একই দিন অর্থাৎ ৩ আগস্ট বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, বাংলাদেশে কী ঘটে- এর প্রভাব তাদের ওপর পড়ে। সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে চাইবে তার ভিত্তিতে নির্বাচন ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করতে হবে। আমার মনে হয় নির্বাচন ঘিরে ওই দেশে বহু ধরনের তৎপরতা চলছে। অনেকেই অনেক মন্তব্য করছেন। অবশ্যই ভারত এ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’ তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি নিয়ে অরিন্দম বাগচী কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, সেখানে নির্বাচন পরিকল্পনা মাফিক হোক। সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হোক।’

এ ব্যাপারে ৪ আগস্ট প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কী বলল, তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। জনগণ যা চায়, বিএনপি তাই করে।’ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কেবল মাথা ঘামানো নয়, একদিনে দুই পরাশক্তির কথায় বিএনপির মাথা কাঁপার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এমনটাই মনে করেন কেউ কেউ। এদিকে রাজনীতির প্রচলিত ধারায় গতি বাড়িয়ে আবার বিএনপি ধীরে চলো কৌশল অবলম্বন করেছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে করা হচ্ছে। তবে এটি মনে করা ঠিক হবে না, বিদেশিদের কারণে মাঠের আন্দোলনে পিছটান দিয়েছে বিএনপি। বরং প্রচলিত ধারায় আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপি নেতা-কর্মীরা জীবনানন্দ দাশের কবিতার ‘ক্লান্ত প্রাণ এক’ অবস্থায় পড়েছিল। তখন দেবদূতের মতো বাংলাদেশের রাজনীতির বলয়ে বিদেশিদের অনুপ্রবেশ ঘটে। এদের আবাবিল পাখি ভেবে উজ্জীবিত হয় সরকারবিরোধী পক্ষগুলো। যেমন- ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন সপ্তম নৌবহর আসার খবরে উজ্জীবিত হয়েছিল পাকিস্তানপন্থিরা। তখন বিধ্বস্ত পাকবাহিনী বলত ‘আতা হায়!’ কিন্তু হায়, শেষতক আসেনি আবাবিল পাখিসম মার্কিন সপ্তম নৌবহর। আবার সুনীলের কবিতা, কেউ কথা রাখে না।

ঘটনার গতিপ্রবাহ সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন তাদের কাছে ৩ আগস্ট একটি বিশেষ দিন হিসেবে ধরা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার সুযোগ নিয়ে লেনা-দেনার ইকোয়েশনে বিদেশি শক্তিগুলো তাদের প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে ধারণা করা হয়। এ প্রসঙ্গ বিবেচনার বাইরে রাখা হলেও শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হাসিল আর হবে না। ফলে নির্বাচনের আগে সরকারকে পরাজিত করার কোনো সুযোগ বিএনপি আর পাচ্ছে না। বরং এই লক্ষ্যে যে ডিমে তা দেওয়া হয়েছে তা সবই ‘বাওয়া’ গেছে বলে এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে অনেকের বিবেচনায়ই। আর বিদেশিদের ঝুড়িতে রাখা ডিমগুলো নিকট ভবিষ্যতে ফুটুক আর নাই ফুটুক, এখনো সরকার বিরোধীদের আশার আলো দেখাচ্ছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, বিদেশিদের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে অথবা ক্ষমতা বিএনপির পায়ের কাছে গুটিসুটি হয়ে বসবে বিড়াল ছানার মতো। এ রকম আশা করলে তা ‘মিছে আশা কুহকিনী’ হতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, ক্ষমতা প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভাগ্য নির্ধারিত হবে আগামী নির্বাচনে। এর আগে রাজপথে জয়-পরাজয় নির্ধারণে মরিয়া খেলা হলে দুই পক্ষেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এমনকি কোনো না কোনো ফরমেটে ‘গেটিস সরকার’ জেঁকে বসতেও পারে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনেও অনেক খেলা ক্লাইমেক্সে পৌঁছাবে। তবে বিএনপি-জামায়াত আর আগুনসন্ত্রাস করতে পারবে না, চৌদ্দ সালের মতো ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে পাস করার পথে হাঁটার সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ সরকার। খন্ডিতভাবে হোক অথবা অখন্ডভাবেই হোক, আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি আঠারো সালের মতো ছয়টি আসন পাবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।  তবে কে সরকার গঠন করবে তা অনেক ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভরশীল। যে বিষয় এখনই ধারণা করা রামের জন্মের আগে রামায়ণ রচনার মতো হয়ে যেতে পারে। ফলে বিষয়টি নিকট ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকুক আপাতত।

 

                লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর