সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসলামের সেবায় অনন্য অবদান রেখেছেন বঙ্গবন্ধু

এম এ মান্নান

ইসলামের সেবায় অনন্য অবদান রেখেছেন বঙ্গবন্ধু

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাংলা ভাষী। বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু স্বাধীনতার মহানায়কই নন বাংলাদেশে ইসলামের খেদমতেও অসামান্য অবদান রেখেছেন।

স্বাধীনতা আল্লাহতায়ালার অপার নিয়ামত। যার দিকনির্দেশনায় আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া বঙ্গবন্ধুর মতো একজন অসাধারণ নেতাকে আমরা পেয়েছি। সহজ-সরল উদার মানবিক চেতনার অধিকারী ছিলেন তিনি। তাঁর পূর্বপুরুষ শেখ আউয়াল ইসলাম প্রচারের উদ্দেশে হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তাঁর সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন প্রথম। পরবর্তীতে তারই উত্তরপুরুষরা বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন ইসলাম প্রচারক শেখ আউয়ালের সপ্তম বংশধর। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন সুফি চরিত্রের অধিকারী।  বঙ্গবন্ধু কখনো ইসলামকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করেননি। তিনি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার ভাষণে বলেছেন : আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই, এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য আমরা লেবাস সর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশকে সব ধর্মের সব মানুষের জন্য শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি ছিলেন সদা সচেষ্ট। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিষ্ঠিত মদিনার রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তিনি অনুসরণ করেছেন। তিনি তাঁর শাসনামলে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তা মুসলিম বিশ্বে বিরল। ইসলাম ধর্ম প্রচার-প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদানসমূহ : ১) বঙ্গবন্ধু ইসলাম প্রিয় আওলিয়াভক্ত। ১৯৭৪ সালে তিনি ইরাকের বাগদাদে বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। ২) ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা : স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার, প্রসার এবং গবেষণার জন্য ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পাচ্ছে। ৩) মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন : ইসলামী আকিদাভিত্তিক জীবন গঠন ও দীনি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুই প্রথম মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে এর নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড।’ ৪) টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার স্থান বরাদ্দ : বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তুরাগ নদের তীরবর্তী জায়গাটি প্রদান করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি ওই স্থানে সারা বিশ্ব থেকে মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমা পালন করে আসছেন। ৫) পবিত্র হজ পালনের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা : পাকিস্তান আমলে হজযাত্রীদের জন্য কোনো সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে হজযাত্রীদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন। ফলে হজ পালনকারীদের আর্থিক সাশ্রয় হয়। ৬) রবিউল আউয়াল মাসে সিরাত মজলিশ প্রতিষ্ঠা : বঙ্গবন্ধুর দিক-নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সিরাত মজলিশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। সিরাত মজলিশ ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ধরায় আগমনের মাস রবিউল আউয়াল মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেছিলেন। ৭) বেতার-টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার : বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তারই নির্দেশে সর্বপ্রথম বেতার ও টেলিভিশনে গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার করার সুব্যবস্থা করেন।  ৮) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), শবেকদর, শবেবরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা : ধর্মীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। ৯) মদ জুয়া নিষিদ্ধকরণ ও শাস্তির বিধান : ইসলাম ধর্মে মদ জুয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ইসলামের এই বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারিভাবে এদেশে আইন করে এসব অপকর্ম নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং শাস্তির বিধানও জারি করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের হাতে সপরিবারে নিহত হন। বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে রক্ষাপান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে দেশ শাসন করেছেন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে একটানা প্রায় পনেরো বছর দেশ পরিচালনার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এ সময় কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদকে  উচ্চশিক্ষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার কাজ বাস্তবায়ন করছেন।  যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা হিসেবে  তিনি দেশ ও ইসলামের যে সেবা করছেন তা অনন্য। শোকের মাস আগস্টে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা। মহান আল্লাহ তাঁকে এবং ১৫ আগস্টের শহীদদের জান্নাতুল ফেরদৌসে ঠাঁই দিন। আমিন।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

সর্বশেষ খবর