বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

হত্যা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইসলাম

আবদুর রশিদ

পৃথিবীতে প্রথম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে হজরত আদম (আ.)-এর আমলে। তাঁর পুত্র কাবিল ভাই হাবিলকে হত্যা করে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে। কারবালায় আহলে বাইতের নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল বিপথগামী ইয়াজিদ চক্র। উদ্দেশ্য ছিল ইসলামী চেতনা স্তব্ধ করা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্তব্ধ করার চেষ্টা চলেছিল। উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানের হত্যাকান্ড আল্লাহর কাছে সারা দুনিয়া ধ্বংসের চেয়ে বেশি মারাত্মক।’ তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কারও শরিক করা ও মানুষ হত্যা হলো জঘন্য কবিরা গুনাহ।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের হত্যা ছিল কবিরা গুনাহ। জঘন্য এক অপরাধ।

অনর্থক হত্যাকান্ড পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়জীবনে বারবার বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ইসলামের তিন মহান খলিফা হত্যার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। রসুল (সা.)-এর দুই দৌহিত্র হজরত হাসান (রা.) ও হোসাইনকে (রা.) প্রাণ হারাতে হয়েছে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে। ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী প্রতিটি মুসলমানের উচিত ষড়যন্ত্র ও হত্যার অপচর্চা থেকে দূরে থাকা। সুরা আন নিসার ৯৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘যে লোক ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বিশ্বাসী মোমিনকে খুন করবে তার পরিণাম হবে চিরকালীন দোজখবাস। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হন, তাকে অভিশাপ দেন এবং তার জন্য ভয়ংকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।’

সুরা আল মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘এ কারণেই আমি বনি ইসরাইলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, কেউ কোনো হত্যার বিনিময়ে অথবা পৃথিবীতে গোলযোগ সৃষ্টি করার অপরাধ ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবকুলকে হত্যা করল, আর যে কারও জীবন বাঁচাল সে যেন সমগ্র মানবকুলের জীবন বাঁচাল।’

রসুল (সা.)-এর হাদিসে বলা হয়েছে- ‘এক লোক রসুল (সা.) সমীপে নিবেদন করল আল্লাহর কাছে কোন পাপটি সবচেয়ে জঘন্য। তিনি বললেন, কাউকে আল্লাহর সমান মনে করা অথচ তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। লোকটি বলল, তারপর কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার জীবিকায় অংশীদার হবে এ ভয়ে তোমার সন্তানকে মেরে ফেলা। সে আবার আরজ করল তারপর কোনটি? তিনি জবাব দিলেন, পড়শীর স্ত্রীর সঙ্গে জেনায় লিপ্ত হওয়া। অনন্তর এর সমর্থনে আল্লাহ ঘোষণা দিলেন, ‘যারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদের ইবাদত করে না, আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না (তারাই প্রকৃত ইমানদার)’ (সুরা আল ফুরকান, আয়াত ৬৮)।’

যারা হত্যা ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় তাদের পরিণাম সম্পর্কে আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’ হত্যা ও ষড়যন্ত্রের কুশীলবদের পরিণাম কখনো ভালো হওয়ার কথা নয়। আমাদের এ যুগে যারা এ ধরনের গর্হিত কর্মকান্ডে জড়িত তাদের পরিণতি দেখলে স্পষ্ট হয় আল্লাহর বিধান কতটা অলঙ্ঘনীয়।

আল্লাহ আমাদের অসত্য পথ থেকে দূরে থাকার এবং শান্তি ও কল্যাণের পথে চলার তৌফিক দিন। হত্যা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যারা প্রাণ হারিয়েছেন দেশ ও জাতির সেসব সুসন্তানকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর