শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

কেমিক্যাল গুদাম

স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি পূরণ হোক

কেউ কথা রাখেনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি অতি বিখ্যাত কবিতা। সুনীল বেঁচে থাকলে দেখতেন আমাদের কর্তাব্যক্তিরা তাঁর কবিতার উদাহরণ হওয়ার জন্য কীভাবে উঠেপড়ে লেগেছেন। পুরান ঢাকার নিমতলীর পর চুড়িহাট্টার কেমিক্যাল গুদামের অগ্নিকান্ড কেড়ে নেয় বিপুল মানুষের প্রাণ। যে ঘটনাকে গণহত্যা বলেও অভিহিত করেন অনেকে। এ দুই মহাবিপর্যয়ের পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদামগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও কেউ কথা রাখেননি। মনে হচ্ছে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল প্রতিশ্রুতি ভাঙার জন্য। আইওয়াশের উদ্দেশে। স্মর্তব্য, ২০১০ সালের ৩ জুন রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীর ৪৩ নম্বর বাড়িতে রাত ৯টায় রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করে। ওই সময় সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে ১ হাজার ৯২৪ ব্যবসায়ীর তালিকা করে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কাছে হস্তান্তরও করে। পরে ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার স্থায়ীভাবে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের তুলসীখালীতে কেমিক্যাল পার্ক নির্মাণ করার দায়িত্ব দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিককে। এরপর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিকের গুদামে আগুনে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় প্রশাসন কঠোরভাবে সিদ্ধান্ত নেয় পুরান ঢাকার সব রাসায়নিকের গুদাম কেরানীগঞ্জের নির্দিষ্ট একটি স্থানে স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু দেখেশুনে মনে হচ্ছে পুরান ঢাকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে ফেলার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নের কোনো কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে নেই। সবাই কানে দিয়েছে তুলো আর পিঠে বেঁধেছে কুলো নীতি অবলম্বন করে মানুষের ক্ষোভ পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। আর সে কারণেই পুরান ঢাকার মানুষ বারুদের স্তূপের ওপর বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। কেমিক্যাল গুদাম অপসারণের প্রতিশ্রুতি দ্রুত পালিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর