রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাবিশারদ টেভার্নিয়ার

বাংলাবিশারদ টেভার্নিয়ার

সতেরো শতকের ষাটের দশকে টেভার্নিয়ার ভারত ভ্রমণ করেন এবং ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে ট্রাভেলস ইন ইন্ডিয়া শিরোনামে তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রকাশিত হয়। বাংলার ওপর তাঁর বিবরণ, বিশেষ করে বাংলার তৎকালীন রাজধানী ঢাকার বর্ণনা অত্যন্ত জ্ঞানদীপ্ত। প্রকৃতপক্ষে তিনি দুবার ঢাকা ভ্রমণ করেন। প্রথমবার ১৬৪০ এবং দ্বিতীয়বার ১৬৬৬ সালের জানুয়ারিতে। দুর্ভাগ্যবশত তিনি তাঁর প্রথম ভ্রমণের কোনো বিবরণ রাখেননি, তবে দ্বিতীয় ভ্রমণের বিবরণ সর্বতোভাবে অত্যন্ত ব্যাপক। তাঁর বর্ণনায় দুই লিগ অথবা ৯.৫ কিলোমিটারের অধিক দৈর্ঘ্যরে ঢাকা একটি অসাধারণ শহর। তিনি উল্লেখ করেছেন, এখানে প্রায় সবাই নদীপাড়ে গৃহনির্মাণে আগ্রহী, ফলে শহরের বৃদ্ধিও ঘটেছে নদীবরাবর। আলাদা ব্লকে গড়ে ওঠা ঘরগুলো সাধারণত মাটি ও বাঁশ দ্বারা নির্মিত। নদীতীরে বসবাসকারী অধিবাসীদের অধিকাংশই ছিল ছুতার শ্রেণির। তারা যুদ্ধজাহাজ ও দেশি নৌকা প্রস্তুত করত। এখানকার সুবাহদার একটি উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত দুর্গে বাস করতেন।

টেভার্নিয়ার উল্লেখ করেছেন, শহরে বসবাসকারী ওলন্দাজ ও ইংরেজরা সুপ্রতিষ্ঠিত বাণিজ্য কেন্দ্র ও সুউচ্চ গির্জা নির্মাণ করেছিল। দেশে যদিও ইংরেজ ও ওলন্দাজদেরই বৃহৎ বাণিজ্যিক অবকাঠামো ছিল এবং সুবাহদারের ওপর ওলন্দাজদের প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশি, তথাপি পর্তুগিজরাও দরবারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করত। টেভার্নিয়ার ইংরেজ বাণিজ্যকুঠির প্রধান মি. প্রটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পাগলা ও কদমতলী নদীর ওপর ইটনির্মিত সেতু দেখতে পান।

১৬৬৬ সালের ১৪ জানুয়ারি টেভার্নিয়ার বাংলার তৎকালীন সুবাহদার শায়েস্তা খানে সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ১৬ জানুয়ারি তিনি শায়েস্তা খানের রাজকীয় অন্দরমহলে মূল্যবান পাথর ও অলংকার বিক্রি করেন। ঢাকায় ১৬ দিন অতিবাহিত করে ২৯ জানুয়ারি তিনি কাশিমবাজারের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এরপর মহান ইলেকটরের আমন্ত্রণে বার্লিন ভ্রমণ করেন। টেভার্নিয়ারের জীবনের শেষ দিনগুলো সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। একজন প্রটেস্ট্যান্টের জন্য সময়টা সুবিধাজনক ছিল না এবং সম্ভবত তিনি শেষ জীবনটা বাস্তিলে অতিবাহিত করেছেন। ১৬৮৭ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে প্যারিস ত্যাগ করেন এবং ১৬৮৯ সালে কোপেনহেগেন থেকে ইরান যাওয়ার পথে রাশিয়া অতিক্রমের সময় মস্কোয় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সর্বশেষ খবর