মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আগস্টের নির্মম ঘটনা না ঘটলে আমাদের কেমন হতো

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

আগস্টের নির্মম ঘটনা না ঘটলে আমাদের কেমন হতো

আগস্ট আমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য বড় বেশি দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মাস, যন্ত্রণার মাস। দেশের জন্যও মাসটি খুব একটা ভালো না। ছোটবেলায় ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে রাস্তা সাজাতাম, বাড়ির চারদিকে মোমবাতি জ্বালাতাম, কত কিছু করতাম। পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে স্কুলে স্কুলে পাকিস্তান দিবস উদযাপিত হতো। আমরা বাচ্চারা প্রায় উন্মাদ পাগল হয়ে যেতাম। কিন্তু যতই বড় হচ্ছিলাম ততই পাকিস্তানের প্রতি মোহ ভাঙছিল, উন্মাদনা কমছিল। বড় বেশি হতাশবোধ করতাম। ’৬৫-এর পরে কীভাবে কীভাবে যেন পাকিস্তানের প্রতি আর বুকে তেমন জায়গা ছিল না। অনেক দিন জেল খেটে বঙ্গবন্ধু বের হন ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি। সেই গণআন্দোলন এখনকার দিনে কল্পনার বাইরে। আমরাও ভাবতে পারি না কী করে পাকিস্তানি পশুশক্তির বিরুদ্ধে অতটা দুর্বার হয়েছিলাম। কোনো কিছুকে ভয় করিনি। দেশকে মনে হতো সবকিছু, হৃদয় ভরে যেত দেশের কথা ভাবতে। কোনো মানুষের কষ্টে সামান্য একটু পাশে দাঁড়াতে পারলেই মনে হতো অনেক কিছু করেছি। শুধু মানুষ আর মানুষ। জনগণ ছাড়া কিছুই ভাবনায় ছিল না। একইভাবে জীবনের অনেকটা সময় পার করে এনেছি। তাই এখন আর ছোটখাটো অনেক কিছুই মনে তো দূরের কথা গায়েই লাগে না। ছেলেবেলায় একেবারে লাগামহীন-জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেচনাহীন এক অসার মানুষরূপী অপদার্থ ছিলাম। রাজনীতি আর দেশপ্রেম আমাকে মানুষ করেছে। বাড়ির পাশে এক বিরাট বটগাছ কেটে সাফ করে ফেলেছিলাম। মাটির চুলায় মা রাঁধতেন। তখন প্রত্যেক মায়ের জন্য খড়ি ছিল এক মারাত্মক প্রয়োজনীয় জিনিস। খুব ভালো খড়ি ফাঁড়তে পারতাম। সে জন্য মা আমাকে বড় বেশি আদর করতেন। টাঙ্গাইলের এক শ্রেষ্ঠ ডাকাত কইছা দেওয়ান আসাম থেকে বিক্রমপুর এমনকি সমুদ্রের পাড় পর্যন্ত তার ডাকাতির আওতা ছিল। পাকিস্তান আমলে যাবজ্জীবন জেল খেটেছে। বুড়ো বয়সে তিনি হুজুর মওলানা ভাসানীর অনুরক্ত ভক্ত হয়েছিলেন। তিনি মাঝেসাজে আমাদের বাড়িতে সেই বটগাছ কাটতেন, খড়ি বানাতেন। বলতে গেলে আমরা দুজনেই বিরাট বটগাছ না হলেও ৫-৭’শ মণ খড়ি হয়েছিল। সেটা আমরা দুজনেই শেষ করে ফেলেছিলাম। এমনতিইে আমার চোর-ডাকাতের ভাগ্য ভালো। ছোট সময় অনেক চোর-ডাকাত টাউন জামিনে আমাদের বাড়িতে থাকত। কুতুবপুরের আনতা ডাকাতের সঙ্গে সে সময়ই আমার পরিচয় হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে বাটাজোরের মহু ডাকাতের সঙ্গে পরিচয় হয়। জুলাই-আগস্টের দিকে সে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। ’৬৯ সালের গণআন্দোলনের সময় সংগ্রামী ছাত্ররা সখীপুরে ধরে এনে তাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। চারদিকে কাঠ দিয়ে মাঝখানে মস্তবড় এক কাঠ মাটিতে পুঁতে তার সঙ্গে বেঁধে মহুর গায়ে আগুন দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। সেদিন পাকিস্তানে মার্শাল ল’ জারি হয়। ঘোষণা শুনে মহুকে বাঁধা অবস্থায় ফেলে সবাই পালিয়ে যায়। মহু বেঁচে যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বড়চওনা এবং দুর্গাপুরে মহুর সঙ্গে আমার দেখা হয়। সে বলে, ‘আমি এক দুর্দান্ত ডাকাত। আমি নাটোর জমিদারবাড়িতে ডাকাতি করেছি, জয়দেবপুরে করেছি, আসামের গৌরীপুরে হায়ারে ডাকাতি করতে গেছি। নিজের এলাকায় কোনো দিন ডাকাতি করিনি। টাকা-পয়সা সোনাদানা যা পেয়েছি সব এলাকায় গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে তাই যুদ্ধ করতে চাই। আপনে রাখলে যুদ্ধ করব। না রাখলে একাই লড়ব। এরকম অবস্থায় একজন জওয়ান মানুষ হিসেবে কিছু করতে না পারলে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।’ আস্তে আস্তে সে আমাদের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। তাকে মুক্তিবাহিনীর অর্থ দফতরে রাখা হয়। তখনকার দিনে টাকা-পয়সার অনেক মূল্য। এক টাকায় এক কেজি মাংস পাওয়া যেত, এক কেজি একটা ইলিশ পাওয়া যেত। সে সময় আমাদের হাতে ২-৪ লাখ টাকা থাকত। তার মূল পাহারায় থাকত মহু ডাকাত। একদিন অর্থ দফতরে গেছি। কয়েকটা টিনের ভাঙা সুটকেস। তার মধ্যে এক টাকা, দু’টাকা, পাঁচ-দশ-পঞ্চাশ টাকা কাগজের নোট। কয়েক মণ কাঁচা টাকা এক আনা, দু’আনা, চার আনা, আট আনা অত সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা যায় আমার জানা ছিল না। কাঁচা টাকা এলোমেলো থাকলেও এক আনার জায়গায় দু’আনা নেই, আট আনার জায়গায় টাকা নেই। সব আলাদা আলাদা। আর সেই অর্থ ভান্ডারের মূল পাহারাদার মহু সরদার। তাকে রাইফেল দেওয়া হয়েছিল। আমাকে কাছে পেয়ে একসময় মহু সরদার বলেছিল, ‘স্যার, এই রাইফেলটা না আমার কাছে বাজা বাজা লাগে। আমার হাতে একটা লাঠি থাকলে কেউ আমার গায়ে গুলি লাগাতে পারবে না। লাঠি দিয়ে গুলি ফিরিয়ে দিতে পারব।’ তারপর তার রাইফেল নিয়ে লাঠি দেওয়া হয়েছিল। একজন ডাকাত তাকে দেওয়া হয়েছিল অর্থ সম্পদের পাহারার দায়িত্ব। তার কারণে একটা পাই পয়সাও নষ্ট হয়নি। ১৬ আগস্ট হাতে-পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসার জন্য সীমান্তে গিয়েছিলাম। সে সময় কে কোন দিকে গিয়েছিল কারও তেমন খবর ছিল না। কিন্তু আমাদের যা টাকা-পয়সা ছিল তার একটা পয়সাও এদিক-ওদিক হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে মানুষজনের কী যে হয়েছিল বিশেষ করে গরিব মানুষের কোনো লোভ-লালসা, ঘুষ-দুর্নীতি কোনো কাজ করেনি। সে জন্য আগস্ট মাস আমার কাছে বড় বেদনাদায়ক। এর মধ্যে আবার ১৪ আগস্ট আমার স্ত্রী নাসরীনের জন্মদিন। পাকিস্তানের জন্মদিনে আমার স্ত্রীর জন্মদিন আগে জানলে হয়তো বিয়েই হতো না। ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার জন্মদিন। অন্যদিকে আমার জীবন আমার অস্তিত্ব আমার ভালোবাসা সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে আমার রাজনৈতিক পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডে। সেই ১৫ আগস্ট আবার মহান ভারতের স্বাধীনতা দিবস। কেমন যেন সবকিছু একটা এলোমেলো ব্যাপার।

করোনার কারণে গত তিন বছর ধলাপাড়ার মাকড়াইয়ে যেতে পারিনি। ১৬ আগস্ট ’৭১-এ ১.২০ মিনিটে আমার হাতে-পায়ে হানাদারদের গুলি লেগেছিল। আমার পাশেই এক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী শহীদ হন। এবার ১৬ আগস্ট সেখানে গিয়েছিলাম। ১৬ আগস্ট মাকড়াই দিবসে অনেক বড় বড় নেতা উপস্থিত হয়েছেন, বক্তৃতা করেছেন। সংবিধানপ্রণেতা প্রখ্যাত আইনবিদ ড. কামাল হোসেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের প্রবাদপুরুষ আ স ম আবদুর রব, মোস্তফা মহসীন মন্টু এরকম আরও অনেকেই হাজির হয়েছেন। কোনো কোনো সময় ২-৩ লাখ লোক হয়েছে। কিন্তু এবার ১৬ আগস্ট সকালের দিকে প্রবল বৃষ্টি থাকার কারণে কয়েক হাজার লোক হয়েছিল। মনে হলো তার শতকরা ৮০ ভাগই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছার কর্মী। জাহাজমারা কমান্ডার হাবিবুর রহমান, বীরবিক্রমের ছেলে আতিক, আষাইরাচালার বাদশা, হালিম, আকরাম, সাবেক মেম্বার সেলিম, সালাম, সোবহান, মিলন, রায়হান, আলতাফ, মান্নান, মোহাম্মদ খুব খেটেছে। তার ফলও পেয়েছে। সভায় লোকজনের উপস্থিতি এবং উৎসাহ ছিল আশাব্যঞ্জক। ঘাটাইল উপজেলার মানুষ খুবই কষ্টে আছে। একদিকে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে বিএনপি বড় দুই দলের ৪-৫টা করে উপদল। মারামারি, কাটাকাটি লেগেই আছে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তান হানাদাররা একমাত্র আমার নামে লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। মৃত অথবা জীবিত ধরে দিতে পারলে লাখ টাকা পুরস্কার। তখনকার লাখ টাকা বাজারমূল্যে এখন শতকোটিরও বেশি। ঠিক তেমনি ১৬ আগস্ট গুলি লাগার পর হানাদাররা প্রচার করেছিল পাকিস্তানের দুশমন কাদের সিদ্দিকী মাকড়াইয়ে নিহত হয়েছেন। দুই দিন পর তারাই আবার বলে নিহত নন, গুরুতর আহত হয়েছেন। তার আর যুদ্ধ করার কোনো ক্ষমতা নেই। যে কারণে পাকিস্তানিরা প্রচুর মিষ্টি খাওয়া-খাওয়ি করেছিল। কিন্তু তাদের সাধ পূর্ণ হয়নি।

আমি মরেও যাইনি, যুদ্ধ করার ক্ষমতাও হারিয়ে যায়নি। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার হয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। তবে কেন যে ’৭১-এর ২৩ আগস্ট বারাঙ্গাপাড়ায় ভারতীয় সীমান্তে গিয়েছিলাম। আমাকে রওশন আরা মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্যাম্প কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার সানসিং। তিনি বাবাজি নামেই সমাধিক পরিচিত ছিলেন। ’৭৫-এ সেই ২৩ আগস্ট ভারত সীমান্ত মহেন্দ্রগঞ্জ তন্তরে গিয়েছিলাম। কেন যেন জীবনের অনেক কিছু মিলে যায়। আবার কখনো-সখনো কোনো কিছুই মিলে না। আমি কাউকে কখনো শত্রু মনে করিনি। কত ঝড়-ঝাপটা, কত উত্থান-পতন কারও প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করিনি, করতে মন সায় দেয়নি। কত বিরোধীরা পরম নিরাপদে কাদেরিয়া বাহিনীতে যুদ্ধ করেছে, সফল হয়েছে। এখন তো আর কাউকে শত্রু ভাবতে ভালো লাগে না। কিন্তু নীতি-আদর্শের বাইরে গিয়ে এখনো কোনো কাজ করি না। আমার বোচকা টানা কতজন হাজার কোটির মালিক হয়েছে, আমরা মাসিক খরচ না দিলে যারা অনেকেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরোতে পারত না। তারা অনেকেই হাজার কোটি টাকার মালিক। আল্লাহর ওপর ভরসা করে, রসুলে করিম (সা.)-কে ভরসা করে এতটা পথ চলেছি। কখনো কোনো অসুবিধা হয়নি। কখনো নীতি বদলাইনি। জীবনের শুরু থেকে যারা ছিলেন নেতা তারা এখনো আছেন। সত্যিই জাতির জন্য আগস্ট একটি মারাত্মক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মাস। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বিকাল ৪টায় এক সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে ১৩ নম্বর তালকাটরা রোডের শ্রী প্রণব মুখার্জির বাড়িতে গিয়েছিলাম। অফিস থেকে বাড়িতে এসেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ কেমন হলো?’ বলেছিলাম, ভালো, বেশ ভালো। শ্রী প্রণব মুখার্জির মুখমন্ডল ছিল কেমন যেন উ™£ান্তের মতো। তিনি বললেন, ‘বাঘা, তুমি ঢাকার খবর জান?’ বললাম, না, তেমন কিছু জানি না। তিনি আবার বললেন, ‘হাসিনার সভায় আক্রমণ হয়েছে। তুমি খোঁজ কর ঢাকার সর্বশেষ খবর জানতে পার কি না।’ এক-দেড় ঘণ্টায় প্রায় ৪০-৫০টা ফোন করেছিলাম। অনেককে পাওয়া গেল, আবার কাউকে কাউকে পাওয়া গেল না। বোন হাসিনা কেমন আছেন জানার চেষ্টা করছিলাম। পরে নিশ্চিত হলাম তিনি ভালো আছেন। শেখ হাসিনার ভালো থাকার কথা শুনে তিনি অনেকটাই স্বস্তিবোধ করছিলেন। অনেককে ফোন করে ঢাকার খবর জানানোর সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘ঢাকার আরও খবর নিয়ে তুমি কাল সাউথ ব্লকে এসো কথা বলব।’ পরদিন গিয়েছিলাম সাউথ ব্লকে। দেশের কল্যাণ ও শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। সেখানে আরও অনেকেই ছিলেন। শ্রী প্রণব মুখার্জি এবং আরও ৮-১০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে অনেকক্ষণ কথাবার্তা হয়। সেদিন তাদের সবার প্রচন্ড উদ্বিগ্নতা দেখে বেশ ভালো লাগছিল। এর ৩ বা ৪ দিন পর দিল্লি অ্যাপোলো হসপিটালে ২১ আগস্টের আহতদের অনেককে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে রাজ্জাক সাহেব ছিলেন, ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়নি। ওবায়দুল কাদের, বাহাউদ্দিন নাছিম আরও অনেকেই বড় উদ্বিগ্ন ছিলেন। ওবায়দুল কাদের হাত ধরে বলেছিলেন, ‘কাদের ভাই, আমরা কি শেষ হয়ে যাব?’ আজও সে আকুতি আমার দেহমনে স্পর্শ করে। সত্যিই আগস্ট মাস বাঙালি জাতির জন্য বড় দুর্ভাগ্যের মাস। সেদিন ১৬ আগস্ট রক্তবিধৌত মাকড়াইয়ে একসময় কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। বক্তৃতা শেষ করতে পারিনি। আর কবার মাকড়াই দিবসে সেখানে যেতে পারব জানি না। মাকড়াইয়ে গুলি খাওয়ার পর ২৪ ডিসেম্বর ’৭১ টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে লাখো জনতার সভায় বলেছিলাম, কাদের সিদ্দিকী ধলাপাড়া মাকড়াইয়ের যুদ্ধে মারা গেছেন। আজ যাকে দেখতে পাচ্ছেন সে শুধু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং নির্দেশ। সারা জীবন সেভাবেই চলার চেষ্টা করেছি। কখনো সফল হয়েছি, কখনো বা ব্যর্থ। ‘কিন্তু নেতাকে ভুলি নাই, পিতাকে ত্যাগ করি নাই’। বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে যখন কথা হয় তখন সবকিছু ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধু সারা হৃদয় মনজুড়ে থাকে। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুকে সর্বজনীন করতে পারিনি। স্বাধীনতা সর্বজনীন হয়নি। এখনো অনেকের পাকিস্তানি সাজার খায়েশ দেখা যায়। কী দুর্ভাগ্য! স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় তাদের দেহমনে সে আলোড়ন তুলে না কখনো। পৃথিবীর কোনো স্বাধীন দেশে মনে হয় না স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি থাকে এত রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে মা-বোনের সম্মান দিয়ে অর্জন করা বাংলাদেশ ছাড়া। আল্লাহ আমাদের শুভবুদ্ধি দিন। বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস থেকে আগস্টের অভিশাপ দূরীভূত হোক।

আজ বেশ কিছুদিন মনটা বড় ছটফট করছে। পারিবারিকভাবে ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে আগামী ২৪ আগস্ট, বৃহস্পতিবার টুঙ্গিপাড়া যেতে চেয়েছি। মনে হয় কিছু দলীয় লোকজনও যাবে। তাদের না করে ফিরাতে পারছি না। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীকেও বলব তিনি যাবেন কি না। আগামী ৩০ আগস্ট টাঙ্গাইলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গামছার দলের পক্ষ থেকে শোকসভা। শুধু জামায়াত ছাড়া সবাইকে দাওয়াত করেছি। লতিফ ভাইকেও দাওয়াত করব। মুরাদ, আজাদ, রহিমা, শুশু, শাহানা কেউ যাতে বাদ না থাকে তার চেষ্টা করছি। আওয়ামী লীগের সব ক’জন নেতাকে দাওয়াত দিয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও দাওয়াত করব। দেখা যাক কতটা কী হয়।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর