শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
ভেষজ

সরিষা শাক খান, শরীরকে রোগ থেকে বাঁচান

সরিষা শাক হাঁপানির কষ্ট লাঘবে দারুণ ভূমিকা পালন করে। ফুসফুসকে সুস্থ রাখে এ শাক। হার্টকে সুস্থ রাখে। হার্টের অসুখে ব্যাপক উপকারী এ সরিষা শাক। সরিষা শাকে প্রচুর খাদ্যআঁশ মেলে। এ শাক তাই নাড়িভুঁড়ির অসুস্থতা আটকাতে পারে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে। সরিষা শাকে প্রোটিন ও আয়রন আছে অনেকটা। মেনোপজ অধ্যায় পেরিয়ে যাওয়া মহিলাদের হাড়ের জন্য খুব উপকারী এ শাক। হাড় ক্ষয়ে গিয়ে ক্যালসিয়াম শূন্যতার রোগ অস্টিওপোরোসিসে যারা ভুগছেন তাদের জন্য খুব উপকারী সরিষা শাক। বেশি বয়সী পুরুষ, মহিলা, কম বয়সী ছেলেমেয়ে সবার হাড়ের সুস্থতার জন্য সরিষা শাক জরুরি। এ শাকের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আছে। এসব অত্যন্ত উপকারী এবং জরুরি খাদ্য উপাদান। সরিষা শাক নানা ধরনের প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। অক্সিজেনের মৌলিক অণুগুলো শরীরে নানা ধরনের রোগভোগ বাঁধায়। এ মৌলিক অক্সিজেন অণুগুলোর টুঁটি চেপে ধরার মতো তিন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে সরিষা শাকে। সেগুলো হলো- ভিটামিন ই, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। এরা মৌলিক অক্সিজেন অণুগুলোর তৎপরতাই শুধু রুখে দেয় না, তাদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। ক্যারোটিন তথা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই শরীরে দ্রবীভূত হয়ে মৌলিক অক্সিজেন অণুগুলোকে শায়েস্তা করে। ভিটামিন সি শরীরের সব জলীয় অংশ, ফ্যাট তথা চর্বিতে দ্রবীভূত হয়ে একই কাজ করে। পেশি সংকোচন, প্রসারণ যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়, সে কাজে ভিটামিন সির ভূমিকা রয়েছে।

হাঁপানি রোগীদের জন্য উপকারী সরিষা শাক। হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে যেটা হয়- বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান অতিরিক্ত মাত্রায় তৈরি হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এসব রাসায়নিকের অন্যতম হলো হিস্টামিন। ভিটামিন সি এ হিস্টামিনকে ভেঙে দিয়ে প্রদাহ হওয়া আটকায়। শুধু হাঁপানি নয়, প্রতিরোধী ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে আরও অনেক ধরনের রোগভোগ হয় আমাদের। সেসবের বাড়াবাড়ি কমায় ভিটামিন সি। তবে সরিষা শাক থেকে ভিটামিন সি তারা পাবেন যারা প্রেসার কুকারের স্টিমে মানে ভাপে সিদ্ধ করে ঢাকা অবস্থায় ঠান্ডা হতে দিয়ে খাবেন। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, ভিটামিন ই হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে যেটা করে যেমন টানের বাড়াবাড়ি তো রোধ করেই পাশাপাশি যা করে তা হলো ফুসফুসের সক্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। সরিষা শাকের ভিটামিন ই থেকে শুরু করে সবুজ শাকসবজিতে পাওয়া ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কর্মতৎপরতাকে উজ্জীবিত করে। সরিষা শাকে থাকা ম্যাগনেসিয়াম নামের খনিজ পদার্থটি শ্বাসনালি এবং ফুসফুসের গাত্র আবরণীকে বিশ্রাম দেয়, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট লাঘব করে। বহু হাঁপানি রোগী জানেন না তাদের শরীরে যতটুকু ম্যাগনেসিয়াম থাকা দরকার, ততটুকু তো নেই অনেকের ক্ষেত্রে এমনও হয় ম্যাগনেসিয়োমের পরিমাণ খুব কম থাকে। ফলে কষ্ট বাড়ে। ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দিয়ে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা হ্রাস করে। এ ফাঁকে একটা কথা জানিয়ে রাখি- যারা ধূমপান করেন বা ধূমপায়ীদের আশপাশে থাকতে হয়, তাদের সবার জন্য সরিষা শাকসহ ভিটামিন এ সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবার-দাবার খুব জরুরি। কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যারা সিগারেট বা বিড়ি পান করেন তারা ধূমপানের মাধ্যমে ক্যান্সার সৃষ্টিতে সাহায্যকারী কারসিনেজেন উপহার পান। এর প্রভাবে শরীরে ভিটামিন এ-এর কমতি ঘটে। তাই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার- দাবার না খাওয়া মানে ফুসফুসে প্রদাহ, শ্বাসকষ্টের মতো রোগকে থাবা বসানোর সুযোগ করে দেওয়া। আমরা অনেক সময় বলে থাকি মানুষটি সিগারেট-বিড়ি খাচ্ছেন সেই কবে থেকে, এ ৯৩ বছর বয়সেও দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ধূমপান চালিয়ে যেতে তারা পারেন যারা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার প্রচুর খান। অন্যদিকে খাবার-দাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি পেলে যেটা হয়, রক্ত সঞ্চালনব্যবস্থায় চর্বির আস্তরণ জমে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, যার জোরে হার্ট অ্যাটাক ঘটে তা রোধ করা যায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কাঁচা ফলমূল বা সবজি খেতে পারা বেশি উপকারী। সরিষা শাকে ভিটামিন বি সিক্স মিলে যা রক্তের অণুচক্রিকাগুলোকে স্বাভাবিক তৎপর রাখে, রক্তকে জমাট বাঁধতে দিয়ে থ্রম্বোসিস হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস করে। ভিটামিন বি সিক্সের ঘাটতি যে হার্টের নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ ঘটার কারণে বহু চিকিৎসাবিজ্ঞানীরই সে রকম অভিমত।         আফতাব চৌধুরী

সর্বশেষ খবর