শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি ও একজন সিদ্দিকুর রহমান

ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার

১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি ও একজন সিদ্দিকুর রহমান

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সংঘটিত ইতিহাসের জঘন্যতম ট্র্যাজেডির প্রায় অনুচ্চারিত এক অকুতোভয় চরিত্র হচ্ছেন সিদ্দিকুর রহমান। সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন এএসআই (অ্যাসিসট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর)। ওইদিন তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এবং ঘটনার সময় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঘাতকদের অতর্কিত আক্রমণে প্রাথমিক পর্যায়ে হতচকিত হলেও চটজলদি প্রস্তুতি নিয়ে তিনি অন্যান্যদের সঙ্গে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। কিন্তু ঘাতকদের ভারী অস্ত্র ও অপেক্ষাকৃত বেশি লোকবলের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। এক পর্যায়ে এই অকুতোভয়, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্য ঘাতকদের আক্রমণে কর্তব্যরত অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন। এএসআই সিদ্দিকুর রহমানের এই আত্মাহুতির তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথমত, তিনি মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার লক্ষ্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কাপুরুষের মতো কর্তব্যস্থল ত্যাগ করেননি। তৃতীয়ত, এই আত্মাহুতি তাঁর দেশপ্রেম এবং বঙ্গবন্ধু ও তাঁর আদর্শের প্রতি ভালোবাসা ও অঙ্গীকার প্রমাণ করে।

এক্ষণে একটি প্রশ্ন মনকে স্বভাবতই আন্দোলিত করে। বাংলাদেশ পুলিশের এই নির্ভীক সদস্যের বর্ণিত চরম আত্মত্যাগের পেছনে কারণ কী? এ ঔৎসুক্যের জবাব দিতে হলে এএসআই সিদ্দিকুরের পেশাগত জীবনের কিছুটা রেখাপাত করা প্রয়োজন। এএসআই সিদ্দিকুর রহমান ১৯৬১ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। সে সময় অর্থাৎ ষাট দশকের প্রায় পুরোটায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার। একের পর এক আন্দোলনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগণ ক্রমান্বয়ে ধাবিত হচ্ছিল ১৯৭১-এর চূড়ান্ত পরিণতির দিকে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের দিকে। ১৯৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে পুলিশ বাহিনীর একজন একনিষ্ঠ পেশাদার সদস্য হিসেবে নিবিড়ভাবে তাঁর দেখার সুযোগ হয়েছিল। এ সময় প্রতিটি আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দেশপ্রেম, ব্যক্তিত্ব, নিরাপোস রাজনৈতিক অবস্থান, বজ্রকণ্ঠের বাণী আর সবার মতো সিদ্দিকুর রহমানের মনকেও প্রচ-ভাবে আন্দোলিত করেছিল। তাঁর মনোজগতে এই অভাবনীয় অনুরণন ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার পরও অব্যাহত ছিল বরং অন্যভাবে বলা যায় তা আরও গভীর হয়। এ ক্ষেত্রে সদ্য স্বাধীন দেশের মূল স্থপতি বঙ্গবন্ধুর পুলিশের একাধিক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণের কিছু অংশ প্রাসঙ্গিক মনে হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছিলেন, ‘যেদিন আমি জেল থেকে বের হয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসি, সেদিন দেখেছিলাম আমাদের পুলিশ বাহিনীর না আছে কাপড়, না আছে জামা, না কিছু। অনেককে আমি ডিউটি করতে দেখেছি লুঙ্গি পরে। এক দিন রাতে তারা আমার বাড়ি গিয়েছিল। তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি, গায়ে জামা, হাতে বন্দুক।’ সদ্য স্বাধীন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এ নিদারুণ অসচ্ছলতা জাতির অভিভাবক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে কতটা বিচলিত করেছিল এবং তাদের প্রতি তিনি কতটা আবেগ ও স্নেহপ্রবণ ছিলেন তা উল্লিখিত বক্তব্য থেকে অনুভব করা যায়। পুলিশ বাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর এ অকৃত্রিম আবেগ, অনুভূতি ও ¯েœহ এই বাহিনীর সদস্যরা সেদিন গভীর শ্রদ্ধায় ও মমতায় হৃদয়ে ধারণ করে সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠা ও অঙ্গীকার নিয়ে পালন করেছিল। এএসআই সিদ্দিকুর রহমান সেই সব নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ণ, দেশপ্রেমিক সদস্যদের অন্যতম একজন। সংসার, স্ত্রী, দুটি শিশুপুত্র, জাগতিক সুখ, ভয়ভীতি কোনো কিছুই তাঁকে দায়িত্ব পালনে অবদমিত করতে পারেনি। সিদ্দিকুর রহমান জানতেন বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে রাজারবাগে হানাদার বাহিনীর প্রতি প্রথম বুলেটটি ছুড়েছিল পুলিশ বাহিনী। তিনি নিজেকে এই গৌরবের অংশীদার ও উত্তরাধিকারী মনে করতেন। ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের ওয়্যারলেস অপারেটর মো. শাহজাহান মিয়া ও অন্যদের বীরত্বের কথা সিদ্দিকুর রহমান শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে উদ্দীপ্ত হতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওইদিন মো. শাহজাহান মিয়া ছিলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ওয়্যারলেস বেস স্টেশনের ওয়্যারলেস অপারেটর। সেদিন শহরে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন বিচ্ছিন্ন ছিল। ওয়্যারলেসই হয়ে উঠেছিল তথ্য আদান-প্রদানের একমাত্র মাধ্যম। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেনাসহ ৩৫ থেকে ৩৭টি ট্রাক ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার খবরটি ওয়্যারলেসে প্রথম তাঁর কাছেই আসে। আর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হানাদার বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার খবরটি তিনিই ওয়্যারলেসের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন সারা দেশে। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘তাৎক্ষণিকভাবে ইউনিফর্ম পরে ২০-২৫ জন সবাই দৌড়ে রাজারবাগে চলে আসি। তখন নাইট রোল কল চলছিল। আমরা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে আছি। সিদ্ধান্ত নিই অস্ত্রাগার খুলে অস্ত্র নেওয়ার। অস্ত্রাগারের রিজার্ভ ইন্সপেক্টর মফিজউদ্দিন তখন চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমরা তাঁর বাসা ঘেরাও করি; অস্ত্রাগারের চাবি চাই। কিন্তু উনি দেবেন না। এক পর্যায়ে জোর করে চাবি নিয়ে অস্ত্রাগার খুলি। ৩০০/৩৫০ ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেল আর ২০টি করে গুলি নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিই। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এবং এর আশপাশের রাস্তায় সবাই সশস্ত্র অবস্থান নেয়।’ শাহজাহান মিয়ার ভাষ্যমতে আরও জানা যায়, পাগলা ঘণ্টা বাজানোর পরপর সবাই ছুটে এসে ‘রাইফেল চাই, গুলি চাই’ বলে চিৎকার শুরু করেন। তখন দ্বিতীয় অস্ত্রাগার শাবল দিয়ে খুলে ফেলেন তাঁরা সবাই মিলে। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’। এসব স্লোগান দিতে দিতে অস্ত্র নিয়ে সবাই বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অবস্থান নেন। জানা যায়, রাত আনুমানিক পৌনে ১২টা থেকে গোলাগুলি শুরু হয়। এই যুদ্ধ থেমে থেমে প্রায় সারা রাতই চলে। পরবর্তীতে বন্দি হয় প্রায় দেড় শ বাঙালি পুলিশ। পুলিশ সদস্যদের একটা অংশ অস্ত্র, গোলাবারুদসহ রাজারবাগ ত্যাগ করে। মুক্তিযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে। সেই যুদ্ধে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন হাজারো দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের এই আত্মত্যাগের কথা বঙ্গবন্ধু ভোলেননি। ১৯৭২ সালের ৮ মে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘সামান্য কিছু ট্রেনিং নিয়ে আপনারা কাজকর্মে যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, তাতে সত্যিই আনন্দে ও গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। ...স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনাদের এই ত্যাগের কথা আমি ভালো করেই জানি। ...রাজারবাগে আমার বীর ভাইয়েরা ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেল নিয়ে ছয় ঘণ্টা মেশিনগান, মর্টারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। দুনিয়ার ইতিহাসে তাঁরা এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন।’

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তরুণ এএসআই সিদ্দিকুর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর বাণী ও মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের বীরত্বের কাহিনি সতত নাড়া দিত। তিনি দেখতে পান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু কত গভীর মমতায় পুলিশের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা অনুভব করছেন। তিনি তাঁকে বলতে শোনেন, ‘আমি বুঝি আপনাদের কষ্ট হচ্ছে। আমাদের দেশে কাপড় নেই। কাপড় বাইরে থেকে আনতে হয়। এখন দেশে জুতো তৈরি হচ্ছে না। তাই, জুতোও বাইরে থেকে আনতে হয়। আমাদের এখন নতুন করে বন্দুক তৈরি করতে হবে। পাকিস্তানিরা এমনই দস্যু যে, যা হাতের কাছে পেয়েছে, লুট করে নিয়ে গেছে।’ এতদসত্ত্বেও সিদ্দিকুর রহমান অবাক হয়ে দেখেন বঙ্গবন্ধু কত দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে পুলিশের লোকবল ১৫ হাজার বাড়িয়ে ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার করেন। ১৯৭৪ সালে প্রথম নারী এএসআই নিয়োগ করেন। আইজিপির পদকে তিন তারকা জেনারেলের পদমর্যাদায় উন্নীত করে গুরুত্বপূর্ণ এই বাহিনী প্রধানকে যথাযথ স্বীকৃতি দেন। এএসআই সিদ্দিকুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রথম পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে দেখেন। এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ত্রিশ লাখ লোকের সঙ্গে পুলিশের অনেক লোকও আত্মত্যাগ করেছিলেন। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।’

বঙ্গবন্ধুর এই অমোঘ বাণী থেকে এএসআই সিদ্দিকুর রহমান কখনোই বিস্মৃত হননি। তাই তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নরক থেকে উঠে আসা অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত মনুষ্যরূপী হায়েনাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য থেকে জানা যায়, ঘাতকের দল গুলি ছুড়তে ছুড়তে যখন এগিয়ে এলো, তখন প্রথমেই তারা প্রবল বাধা পেল ফটকে। হাতে সামান্য অস্ত্র, তবুও দমলেন না এএসআই সিদ্দিকুর রহমানসহ মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন অকুতোভয় সৈনিক। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ে প্রাণ দেন বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসআই সিদ্দিকুর রহমান। অপ্রিয় হলেও সত্য এই অকুতোভয়, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগ নিয়ে বিদগ্ধজনদের তেমনভাবে সরব হতে দেখি না। তবে এই আত্মত্যাগের ২৩ বছর পর ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে সিদ্দিকুর রহমানের সন্তানদের ২ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০১২ সালে পুলিশ সপ্তাহে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ এএসআই সিদ্দিকুর রহমানকে মরণোত্তর বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) প্রদান করেন। সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতির ঝুমুর গ্রামে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ফিরোজা বেগম ও দুই সন্তানের জন্য অনিশ্চয়তা ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারেননি। স্বভাবতই কিছু না বোঝার বয়সে সেই সময়ের বৈরী পরিবেশে বাবাকে হারিয়ে কঠিন জীবনযুদ্ধে নামতে হয় তাঁর দুই ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মাহফুজুর রহমানকে। স্বামীর মৃত্যুর ১৭ বছর পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ফিরোজা বেগম।

১৫ আগস্টের নারকীয় ঘটনায় ঘাতক হায়েনাদের গুলিতে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পুলিশের আরও একজন কর্মকর্তা। তিনি ডিএসপি নুরুল ইসলাম খান। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম খান ১৯৫৩ সালে পুলিশ বাহিনীতে সাব ইন্সপেক্টর পদে যোগ দেন। ওইদিন তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ঘাতকদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। আহতাবস্থায় তিনি থানায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন। এ কারণে ১৯৯৮ সালে তিনি আক্রমণের শিকার হন। দুর্বৃত্তরা ইট দিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলে দিয়েছিল। এবারও তিনি বেঁচে যান এবং আদালতে সাক্ষী দিয়ে মহান দায়িত্ব পালন করেন। এ বছর ৭ জুন বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ণ, দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সার্বিক বিচারিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ পুলিশ এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। ঘটনার ২০ বছর পর রুজু হওয়া মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ, আলামত এবং প্রমাণাদি সংগ্রহসহ তদন্ত ও বিচারিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা শুধু দুরূহ ছিল না বরং বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। পুলিশ এ চ্যালেঞ্জ সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করে এক মহান দায়িত্ব পালন করেছে।

১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদের প্রতি অতল শ্রদ্ধা।

তথ্যপুঞ্জি :

চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর কর্তৃক সংকলিত ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ’।

বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ গ্রন্থ।

পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস শাখায় সংরক্ষিত তথ্যাদি।

                লেখক : সাবেক আইজিপি ও রাষ্ট্রদূত

সর্বশেষ খবর