সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

চিকিৎসা বিড়ম্বনা

বিদেশে চলে যাচ্ছে দেশের টাকা

বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। দেশে একের পর এক সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওষুধের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আস্থার নাম হিসেবে বাইরের দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। প্রতি বছর চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তবে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা সেভাবে নিশ্চিত হচ্ছে না। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর উচ্চবিত্ত শুধু নয়, নিম্নমধ্যবিত্তদেরও রয়েছে আস্থার সংকট। এ সংকটের কারণে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে ছুটে যাচ্ছেন দেশের নাগরিকরা। প্রতি বছর যারা ভারত সফরে যান তাদের ৯০ শতাংশই যান চিকিৎসার জন্য। দেশের সরকারি হাসপাতালে রয়েছে অব্যবস্থাপনা, সংকট ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা। বেসরকারিতে রয়েছে আস্থার সংকট, প্রতারণার ফাঁদ। উচ্চবিত্তের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাকে এসব কারণ আরও উসকে দিচ্ছে। ভালো সেবার আশায় মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষও ছুটছে বিদেশে। জুনে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, একক দেশ হিসেবে ভারতেই ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছেন বাংলাদেশিরা। বস্তুত দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে মোট খরচের ৪ ভাগের ১ ভাগ হয় ভারতে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৭৩ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন। মার্চে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৩ কোটি টাকা। এর বড় একটি অংশ খরচ হয়েছে চিকিৎসা খাতে। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। একই চিকিৎসা বাংলাদেশে করতে যে ব্যয় হয়, তা করতে ভারতে খরচ প্রায় দ্বিগুণ। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে ৩ থেকে ১০ গুণ। তারপরও মানুষ ছুটছে চিকিৎসার জন্য বিদেশে। গত বছর ভারত ভিসা দিয়েছে ১৫ লাখ বাংলাদেশিকে। এ ১৫ লাখ মানুষের সিংহভাগ চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ায় কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। দেশের চিকিৎসা সম্পর্কে আস্থা না থাকায় নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। দেশপ্রেমের স্বার্থেই বিদেশমুখী রোগীর স্রোত রুখতে হবে। এটি রোখার একমাত্র উপায় দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখা যায় এমন পরিবেশ গড়ে তোলা।

সর্বশেষ খবর