বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সম্রাট নিরোর চোখের সামনে পুড়ল রোম

সম্রাট নিরোর চোখের সামনে পুড়ল রোম

রোমান সাম্রাজ্যের প্রতাপ ও অহংকার কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার নয়। ইতিহাস ও সভ্যতার যাত্রাপথে একসময় রোম সাম্রাজ্য ছিল সেরাদের সেরা। গোটা দুনিয়া শাসন করেছেন রোম সম্রাটরা। কেবল সম্রাট নিরোর বেলাতেই লেগেছে কালিমা। পরাক্রমশালী শাসকের রাজধানী রোমই কি না আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছিল। ৬৪ খ্রিস্টাব্দে রোমের অগ্নিকান্ড ছিল ভয়াবহ এক ঘটনা। আগুনে রোম নগরীর বেশির ভাগ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল এ নিয়ে সন্দেহ ও বিতর্ক রয়েছে। ইতিহাসবেত্তা টাসিটাসের মতে এ আগুন লাগিয়েছিল খ্রিস্টানরা। অনেক রোমান মনে করত নিরোর ইশারায়ই আগুন লাগানো হয়েছিল। এ তর্কের সমাধান নেই। কিন্তু আগুন যে ধ্বংসলীলা রেখে গেছে তা পৃথিবীর মানুষ আজও ভোলেনি। ভুলবেও না। রোম শহর এ ভয়ংকর অগ্নিকান্ডে পুড়েছিল টানা ছয় দিন। ছয় দিনে গোটা শহর এক আগুনের কূপে পরিণত হয়েছিল। আগুন একে একে গিলে খায় প্রাচীন রোমের ১৪ জেলার ১০টি। মাত্র চারটি জেলা আগুনের ধ্বংসলীলা থেকে বেঁচেছিল। তিনটি জেলা পুরোপুরি ছাই হয়ে যায়। বাকি সাতটিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। একটি চিঠির পাঠোদ্ধার করে পরে জানা যায়, ১৩০টি ঘর ও চারটি ব্লক ছয় দিনের মধ্যে পুড়েছিল। রোমের আগুন নিয়ে যত কথা শোনা যায় তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো, রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি (বা বেহালা) বাজাচ্ছিলেন। ক্যাসিয়াস দিও বলেছেন, নিরো বিশ্রামাগারে গান গাচ্ছিলেন।

তাঁকে যখন আগুনের খবর দেওয়া হয় তিনি বিশ্বাস করেননি। প্রচলিত আছে ‘রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল।’ যদিও এর ভিত্তি নেই। বরং জানা যায়, নিরো অগ্নিকান্ডের খবর পেয়েই রোমে ফিরে আসেন এবং দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। ত্রাণও পাঠিয়েছিলেন। হয়তো যে সময় আগুন লেগেছিল, তখন তিনি গান শুনছিলেন বা গাইছিলেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, সম্রাট তাঁর প্রাসাদের বিশালত্ব বাড়াতে জমি চেয়েছিলেন রোমবাসীর কাছে। কিন্তু তারা রাজাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, জমিগুলো তাদের বেঁচে থাকার সম্বল। এদিকে রাজার দরকার প্রাসাদের সৌন্দর্য বাড়ানো। এর মধ্যে আগুন লাগে রোম নগরীতে। দাউ দাউ করে আগুনে পুড়তে থাকে গোটা রোম। মানুষের আর্তনাদে আকাশবাতাস ভারী হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ভিড় জমায় রাজবাড়ির সামনে। রাজকর্মচারীরা তাদের তাড়িয়ে দেয়। সম্রাটের কানে যায়নি মানুষের আর্তনাদ। কারণ নিরো ব্যস্ত তখন বাজনা নিয়ে। সম্রাট জানতেন রোম পুড়ছে। আর আগুন লাগিয়েছে তারই লোকজন। আগুন নিভলে সম্রাটের বাজনাও থামে। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ঐতিহাসিক সুটেনিয়াস বলেন, রাজা হিসেবে নিরো ছিলেন খুবই নিষ্ঠুর। নিজ আত্মীয়দের সঙ্গেও তিনি ছিলেন খুব নির্মম। নিরো ছিলেন পঞ্চম রোমান সম্রাট। নিরোর জন্ম ৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর রোম সাম্রাজের অ্যান্টিয়ামে। তাঁর বয়স যখন দুই বছর, তখন তাঁর বাবা মারা যান। মায়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ বছরের তরুণ নিরো রোমান সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। সম্রাট নিরোর প্রধান উপদেষ্টা হন এগ্রিপিনা। মূলত ছেলের মাধ্যমে এগ্রিপিনা নিজেই সাম্রাজ্য শাসন করতে চেয়েছিলেন। পপেয়া সাবিনা নামে এক পরস্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত হওয়া এবং তাঁকে বিয়ে করতে চাওয়ার ঘটনায় মায়ের বিরোধিতার মুখোমুখি হন নিরো। নিরোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল ভয়াবহ। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তিনি দার্শনিক সেনেকাসহ ২৩ উপদেষ্টাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেন। ৬৮ খ্রিস্টাব্দে নিরোর অধীন এক রাজা নিরোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। এ সুযোগে নিরোর উপদেষ্টামন্ডলী ও প্রিটোরিয়ান বাহিনী নিরোকে জনগণের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করে। এর অর্থ হলো, তাঁকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই হত্যা করা হবে। নিরো শহরতলির একটি জায়গায় পালিয়ে যান এবং একটি ভিলায় আশ্রয় নেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে ৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন রক্ষীরা খুঁজে পাওয়ার আগেই তিনি আত্মহত্যা করেন।

সর্বশেষ খবর