বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের মাপকাঠি

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের মাপকাঠি

বিয়েশাদি মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। ইসলাম বিয়ে করাকে ইমানের পূর্ণতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সুস্থ, সবল ও সামর্থ্যবান নারী-পুরুষকে যথাসময়ে বিবাহের প্রতি এই ধর্মে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং বংশীয় ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার জন্য ইসলাম ধর্মে বিবাহের কোনো বিকল্প নেই। সামাজিক অশ্লীলতা ও অনৈতিকতা থেকে মুক্তির জন্য বিবাহ পদ্ধতি খুবই প্রয়োজন। নারী-পুরুষ সামাজিক নিরাপত্তা ও আন্তরিক প্রশান্তি লাভের জন্য যথাসময়ে বিবাহবন্ধন একটি সর্বোত্তম পদ্ধতি। এই বিবাহের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ প্রত্যেকের পছন্দ-অপছন্দ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমরা বিয়ে কর সেই স্ত্রীলোকদের যাদের তোমাদের ভালো লাগে’ (সুরা আন নিসা-৩)। প্রসিদ্ধ সাহাবি মুগিরা ইবনে শু’বা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে জনৈক মহিলা সম্পর্কে আলোচনা করি, যাকে আমি বিবাহের জন্য প্রস্তাব করেছি। তিনি বলেন, যাও! অতএব, তাকে দেখে নাও। তাহলে তোমাদের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে’ (ইবনে মাজাহ সহিহ)। এ বিষয়ে  কোরআন সুন্নায় আরও চমৎকার চমৎকার বর্ণনা রয়েছে, যা পছন্দ মতো বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। তাই বিবাহের আগে পাত্রী দেখে নেওয়া সুন্নত। তবে যে পুরুষ যে নারীকে বিবাহ করতে চায় সে ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের পক্ষে ওই নারীকে দেখা বৈধ নয়। বৈধ নয় ছবি আদান-প্রদান করা। কেননা ছবির মাধ্যমে চূড়ান্ত কোনো সমাধান হয় না। বরং অন্যদের দেখা এবং বিভিন্ন ধরনের ফিতনার সম্ভাবনা রয়েছে। বিবাহের প্রস্তাবকারী পুরুষের জন্য প্রস্তাবকৃত নারীর চেহারা ও হাত দেখার অনুমতি ইসলামে রয়েছে। এ ছাড়া জানার বিষয় হলো, পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের মাপকাঠি কী হবে। কী কী গুণের ওপর ভিত্তি করে পাত্র-পাত্রী পছন্দ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সমতার বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচ্য। উভয়ের বংশগত সমতা, ধর্ম পালনের সমতা, উভয় পরিবারের পেশাগত সমতা ইত্যাদি। সামাজিকভাবে পাত্রীর সৌন্দর্য, ধনসম্পদ ইত্যাদি লক্ষ্য করা হয়। ইসলামী শরিয়তে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমাজে প্রচলিত যুক্তিসংগত গুণাগুণকে অবমূল্যায়ন করেনি। তবে ইসলাম ধর্মে দ্বীন ধর্মের বিষয়টিকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বারোপের সঙ্গে উৎসাহিত করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘চারটি গুণ দেখে নারীকে বিবাহ করা হয়; তার ধন-সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ সৌন্দর্য এবং তার দ্বীন-ধর্ম। তবে তুমি ধার্মিক পাত্রী লাভ করে সফল হও। অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম)।

দ্বীন-ধর্ম এবং সচ্চরিত্রকে বিবাহের ক্ষেত্রে প্রাধান্য না দেওয়ার ফলে বর্তমান সমাজে যে ভয়াবহ পরিণতি দেখা দিচ্ছে, তা আজ সবাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তাই শুধু সৌন্দর্যের মোহে উন্মাদ না হয়ে গুণকে মূল্যায়ন করা বর্তমান সমাজের দাবি। ইহ এবং পরকালে শান্তির সোপান। সৎ ও সুসন্তান লাভের প্রথম শর্ত। মা-বাবা ভালো না হলে ভালো সন্তান লাভের আশা করা যায় না। পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রেও উল্লিখিত গুণাবলি লক্ষ্য করা প্রয়োজন। প্রয়োজন দ্বীন-ধর্ম ও সচ্চরিত্রকে প্রাধান্য দেওয়া। এ ছাড়া পাত্র শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্যবান হতে হবে। স্ত্রীর মোহর আদায়, খোরপোশের সামর্থ্য এবং প্রয়োজনীয় রোজগারের যোগ্যতা দেখে পাত্র নির্বাচন করতে হবে (সহিহ বুখারি, মুসলিম)। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্য থেকে যারা সামর্থ্যবান তারা বিবাহ কর। কেননা, তা চোখ অবনতকারী এবং লজ্জাস্থানকে সংযতকারীর জন্য সহায়ক। আর যে অক্ষম সে রোজা রাখবে। কেননা, রোজা তার চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করবে’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম)।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর