বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজশাহীর রেশম ঐতিহ্য

রাজশাহীর রেশম ঐতিহ্য

প্রায় ৩ হাজার বছর আগে চীনের এক সম্রাজ্ঞী তাঁর বাগানবাড়িতে বসে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় কোথা থেকে একটি গুটি এসে পড়ল তার চায়ের কাপে। তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে কাপ থেকে গুটিটি যতই তোলার চেষ্টা করছিলেন ততই তা থেকে অদ্ভুত সুন্দর এক আঁশ বের হতে লাগল। এটিই আজকের সিল্ক বা রেশম সুতা। কৌতূহলী রানির গবেষণায় সর্বপ্রথম রেশমের আবিষ্কার হলো চীনে। এরপর ইংল্যান্ড, ভারত, ব্রাজিল হয়ে রেশমের চাষ শুরু হয় বাংলাদেশে।

আর ঐতিহ্যবাহী সেই রেশম শিল্পের নগরী রাজশাহী। ১৮৭০-এর দশকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় রেশমের চাষাবাদ হয়। তা থেকে কাপড় প্রস্তুত করত বাংলার সাধারণ জনগণ। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভের পর নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর সৃষ্ট জমিদারি অঞ্চলগুলোকে জেলায় রূপান্তর করে ১৭৮৬ সালে। এর ফলে রাজশাহী জেলার সৃষ্টি। কারণ, সে সময় বা তার আগে থেকেই রাজশাহী ও তার আশপাশের অঞ্চল রেশম চাষের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। প্রতিনিয়ত ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে আজও রেশম নগরীর স্বপ্ন হয়ে টিকে আছে রাজশাহীর রেশম শিল্প। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পে তৈরি বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য বা পোশাকের মধ্যে অন্যতম শাড়ি। রাজশাহীর সিল্ক পল্লীতে ঢুকলেই পাওয়া যাবে বাহারি ডিজাইন ও নামের এসব সিল্ক শাড়ি। জানা গেছে, শাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলে সফট সিল্ক শাড়ি। মোলায়েম এই শাড়িগুলোর দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। সিল্ক শাড়িতে রয়েছে বাহারি ডিজাইন। এ ধরনের সিল্ক শাড়ির ওপর হ্যান্ড পেইন্ট, কারচুপি ও এমব্রয়ডারির কাজ ফুটিয়ে তোলা হয়। এর দাম ৩ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আরেক ধরনের সিল্ক শাড়ির নাম অ্যান্ডি সিল্ক, যার দাম ৩ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত। এখানে রেশম শাড়ির অন্য এক আকর্ষণ বলাকা সিল্ক। বলাকা সিল্কের ওপর ফুটিয়ে তোলা হয় স্টিজ ও ব্লকের কাজ, যার দাম ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। নতুন বউয়ের জন্যও রয়েছে সিল্ক কাতান। রেশম পল্লীর বিশেষ ঐতিহ্য পাঞ্জাবি। এখানে ১ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সিল্ক পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। আরও রয়েছে সিল্কের শার্ট, ওড়না, চাদর এবং গজ কাপড়। উৎপাদন ও চাহিদার সঙ্গে এসব পোশাকের দাম কম-বেশি হয়ে থাকে। ঢাকা ও রাজশাহী শহরের মধ্য যে দুটি আন্তনগর ট্রেন চলে তার একটির নাম সিল্ক সিটি। আবার শহরের বিভিন্ন স্থানে তাকালেই চোখে পড়ে বড় সাইনবোর্ডে লেখা- সিল্ক সিটি রাজশাহী। রাজশাহীর মানুষও সিল্ক সিটির নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে বেশ ভালোবাসে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজশাহীর রেশম শিল্প আজ অনেকখানি হারিয়েছে তার অতীত জৌলুস।

সর্বশেষ খবর