সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের বিপজ্জনক রাজনীতি

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের বিপজ্জনক রাজনীতি

মুক্তিযুদ্ধ কথাটির বিশাল ব্যাপ্তি রয়েছে। এর অর্থ ও তাৎপর্য শুধু একাত্তরের ৯ মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একটু পেছনে ফিরে তাকাই। সবারই জানা ১৯৪৭ সালে আমরা একবার স্বাধীন হয়েছিলাম। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই স্বাধীনতা বাঙালিদের কাছে অর্থহীন হয়ে যায়। তার জন্য বলা হয়ে থাকে পাকিস্তানের জন্মের মধ্যেই তার মৃত্যুর বীজ নিহিত ছিল। একটি রাষ্ট্র শুধু একটি ধর্মের মানুষের জন্য হবে এমন অবাস্তবতা তখনকার মুসলিম লীগের নেতারা বুঝতে অক্ষম ছিলেন সে কথা বলা যাবে না। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বে যখন ব্যক্তি ইগো নিজের পদ-পদবি আর নেতৃত্বের মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে যায় তখন সে দেশের মানুষের কী রকম দুর্গতি হতে পারে তার নির্মম উদাহরণ সাতচল্লিশের ভারত বিভাজন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু এক জায়গায় বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন ভুল করে তখন তার জন্য চরম খেসারত দিতে হয় জনগণকে। জনগণ বুঝতে পারলেও তাদের কিছু করার থাকে না। কারণ, সংগঠন ও সাংগঠনিক শক্তি ব্যতিরেকে বৃহত্তর জনইচ্ছার কোনো মূল্য নেই। যুগে যুগে সব সমাজেই মানুষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব, উত্তেজনাকর মিথ্যা খবর ও ধর্মীয় উন্মাদনার শিকার হয়ে চিরদিনই নিজের নাগরিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মুসলিম লীগ নেতারা তখন নিজেদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বকে অবাধ করার জন্য সর্বনাশা দ্বিজাতিতত্ত্ব, অর্থাৎ ধর্মের ভিত্তিতে মাতোয়ারা হয়ে যান। তবে এ কথা বলতেই হবে, ভারত ভাগের জন্য শুধু মুসলিম লীগ নেতারা দায়ী তা কিন্তু নয়, কংগ্রেস নেতারাও কম দায়ী নন। তবে দায় এড়াতে না পারলেও কংগ্রেস নেতারা কখনো বলেননি যে, বিভক্তির পর ইন্ডিয়া শুধু হিন্দুদের রাষ্ট্র হবে, যে কথা মুসলিম লীগ নেতারা বলেছেন পাকিস্তান হবে শুধু মুসলমানদের জন্য। একটু ইতিহাসের কথা বলি। তখন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের একজন ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মাওলানা আজাদ এখনো বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তিনি একবার বলেছিলেন, ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান হলে সেখানে ধর্ম-রাজনীতি কোনোটাই থাকবে না। মাওলানা আজাদের এই কথাটি কতখানি প্রোফেটিক ছিল তা এখন সবাই দেখতে পারছেন। ইসলাম ধর্মের নামে একাত্তরে পাকিস্তানিরা ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে, যার সিংহভাগ ছিল মুসলমান। গণিমতের মাল আখ্যা দিয়ে ধর্মের নামে ধর্ষণ করেছে। সবই হয়েছে ইসলাম রক্ষার নামে। আর রাজনীতি শুরু থেকেই পাকিস্তানে ছিল না, অবশিষ্ট পাকিস্তানে এখনো নেই। সেখানে আছে কেবলই সামরিকতন্ত্র। বলছিলাম ইতিহাসের কথা। অখন্ড স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কংগ্রেস-মুসলিম লীগসহ সবাই ঐকমত্যে আসেন এবং ১৯৪৬ সালের ১৬ মে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়। মুসলিম লীগের কাউন্সিল তিন দিন ধরে অধিবেশনে বিস্তারিত আলোচনা করে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে। ইন্ডিয়া উইন ফ্রিডম গ্রন্থের ১৫৭ পৃষ্ঠায় মাওলানা আজাদ লিখেছেন- জিন্নাহ সাহেব উল্লিখিত কাউন্সিল অধিবেশনে বলেন, ভারতবর্ষে সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাবের চেয়ে অধিকতর ভালো আর কিছু নেই। কংগ্রেসও ১৯৪৬ সালের ১৬ জুন ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাব গ্রহণ করে। জওহরলাল নেহরু কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট হন ১৯৪৬ সালের ৭ জুলাই। ১০ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে নেহরু বলেন, আমরা গণপরিষদে বসব খোলা মন নিয়ে এবং ভারতবর্ষে সবার জন্য যা ভালো হয় সেটাই করা হবে, তাতে ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাব কোনো বাধা হবে না, প্রয়োজনে সেটাও সংশোধন করা যেতে পারে (মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম, পৃষ্ঠা-১৬৪-১৬৫)। ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাব গ্রহণ করা নিয়ে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী একাংশের চাপে ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তাই নেহরুর বক্তব্যে জিন্নাহ সুযোগ পেয়ে যান এবং কংগ্রেসের মনোভাব সন্দেহজনক উল্লেখপূর্বক ১৯৪৬ সালের ২৭ জুলাই ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানসহ পাকিস্তানের দাবিতে অনড় অবস্থানের ঘোষণা দেন। তারপর হিন্দু-মুসলমান এক রাষ্ট্রে বসবাস করা যাবে না, এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারত বিভক্তি অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাতে অন্য কোনো দোষ নয়, শুধু হিন্দু অথবা মুসলমান হওয়ার জন্যই লাখ লাখ মানুষের রক্তে বুড়িগঙ্গা থেকে ভাগীরথি ও সিন্দুসহ শত শত নদীর পানি লাল হয়ে যায়। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত ও স্থানচ্যুত হয় এবং নারী-শিশুসহ প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিহত হন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় (আয়েশা জালাল, পিটি অব পার্টিশন, পৃ :-৪-৫)। এ দ্বিজাতিতত্ত্বের পরিণতিতে লাখ লাখ নিরীহ নারী-পুরুষের রক্তের অভিশাপে মাত্র ২৩ বছরের মাথায় পাকিস্তান ভাঙে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগীদের মনোভাব ৫২ বছরের মাথায় এসেও পরিবর্তন না হওয়াতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের বিপজ্জনক রাজনীতির কবলে বাংলাদেশ। একাত্তরে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ঠেকাতে যেভাবে মরিয়া হয়ে কাজ করেছে, তেমনি আজও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে মরিয়া অবস্থানে আছে। দেশ ভাগের সময় পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ২১ ভাগ ছিল হিন্দু, যা এখন এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র শতকরা ২ ভাগে। পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশের চিত্রটি অতটা খারাপ না হওয়ার কারণ অন্য ধর্ম এবং অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি পরমসহিষ্ণুতা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, কয়েক হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যের শক্তিতে গাঁথা। তাই শুরু থেকেই বাঙালি সংস্কৃতির শক্তিকে ভেঙে ফেলার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানি শাসকবর্গ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়েছে বারবার। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানের শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে যখনই সংগ্রাম করেছে তখনই তারা প্রপাগান্ডা চালিয়েছে এই মর্মে যে- বাঙালিরা প্রকৃত মুসলমান নয়। ষাটের দশকের মধ্যভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিদের শীর্ষ নেতৃত্বে আসার পর সংগ্রাম দুর্বার গতি লাভ করে। ধাপে ধাপে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একেকটি বিজয় অর্জনের পথ ধরেই আসে একাত্তরের যুদ্ধ। অর্থাৎ সংগ্রাম ও যুদ্ধ মিলেই মুক্তিযুদ্ধ, যার শেষ একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে হয়নি, বরং মানুষের সার্বিক মুক্তি অর্জনের পথে নতুন যাত্রা শুরু হয় মাত্র। যেটি এখনো চলমান। তাই সংগ্রামের অংশকে অস্বীকার করা হলে মুক্তিযুদ্ধের অর্ধেক নেই হয়ে যায় তা শুধু নয়, একাত্তরের যুদ্ধে বিজয় অর্জন কখনো সম্ভব হতো না, যদি সংগ্রামের শক্তি তার সঙ্গে না থাকত। তাই সংগ্রাম প্লাস যুদ্ধের সংমিশ্রণ এবং তার থেকে যে রাজনৈতিক মূল্যবোধের আবির্ভাব ঘটে সেটাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতি। এ রাজনীতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণ প্রতিফলন ঘটে বাহাত্তরের সংবিধানে। কিন্তু পঁচাত্তরের পরে কী ঘটল। এক. মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন সংবলিত সব শব্দ, বাক্য ও অনুচ্ছেদ সামরিক আদেশে বাতিল হয়ে গেল। দুই. বাঙালি সংস্কৃতির বাহক বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাতিল হয়ে শেকড়হীন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এলো। তিন. অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের রক্ষাকবচ ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল হয়ে গেল। চার. জয় বাংলাকে অপাঙ্ক্তেয় করে পাকিস্তান স্টাইলের জিন্দাবাদ এলো। পাঁচ. একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হলো। ছয়. মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ঠেকাতে মরিয়া হয়ে পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে কাজ করা শাহ আজিজ, আবদুল আলিম, মাওলানা মান্নান, মীর্জা গোলাম হাফিজ, লে. কর্নেল মুস্তাফিজসহ অনেকেই প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপি হয়ে গেলেন। সাত. ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হয়ে জামায়াত নেতারা বললেন, এ দেশে কখনোই কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। এরকম আরও ঘটনা আছে, মাত্র কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলাম। সংগত কারণেই আমাদের বুঝতে ও বলতে হবে উপরোক্ত ১ থেকে ৭ ক্রমিককে উল্লিখিত উপাদান ও ঘটনাগুলো যে রাজনীতির মধ্যে ছিল এবং এখনো আছে সেটি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছু নয়। পঁচাত্তরের পরে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান উপরোক্ত কাজ ও তার বীজ বপন না করে যদি মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী ও আদর্শে বিশ্বাসী মানুষকে নিয়ে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতেন তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চেহারা আজ ভিন্ন হতো। উল্লিখিত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজনীতি টানা ২১ বছর পরে দুই মেয়াদে ১০ বছর, মোট ৩১ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করায় রাষ্ট্র-সমাজের সর্বক্ষেত্রে ও স্তরে ওই রাজনীতির বড় এক সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, তারা সুবিধাপ্রাপ্তির রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিগত টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করলেও মুক্তিযুদ্ধের দর্শনে নতুন প্রজন্মের মনোজগৎকে সমৃদ্ধ করতে পারেনি। তারপর জামায়াত-হেফাজতসহ ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের পক্ষ থেকে বাধাহীন ধর্মীয় অপপ্রচার হচ্ছে, যা মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা, চেতনা ও দর্শনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে যেভাবে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে সেটা দেশের মানুষের উপলব্ধিতে ক্রমশই আসছে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের রাজনীতি রাষ্ট্রের জন্য কত বড় বিপজ্জনক তার কিছু উদাহরণ দিই। এক. ধর্মীয় রাজনীতির আশ্রয়ে ও পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের ভিতরে বিভিন্ন নামের সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্ম ও উত্থান ঘটে। ২০০৪ সালে রাজশাহীতে সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের সমান্তরাল শাসন ও নিরীহ মানুষ হত্যা এখনো মানুষের মনে ভয়ংকর বিপজ্জনক স্মৃতি হয়ে আছে। ২০০৫ সালে জঙ্গিরা আদালতে গ্রেনেড-বোমা মেরে বিচারক হত্যার মাধ্যমে ঘোষণা দেয় তারা তাগুতি আইন, অর্থাৎ মানুবসৃষ্ট আইন মানবে না। তখনকার সরকার এদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক শক্তিবর্গ শঙ্কিত হয় এবং পরোক্ষভাবে বলতে থাকে বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থান বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। প্রয়োজন হলে জঙ্গি দমনে তারা সামরিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দিকে তাকালে বোঝা যায় এটা তখন বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য কত বড় সংকট তৈরি করেছিল। দুই. ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলা চালিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তিন. আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান মানুষ শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ খুলনার মুনজুরুল ইমাম, টঙ্গীতে আহসান উল্লাহ মাস্টার, নাটোরের মমতাজ উদ্দিনের মতো রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয় ২০০১-০৬ মেয়াদে, যার উদাহরণ বাংলাদেশে নেই। কখনো ছিল না। চার. ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সশস্ত্র গ্রুপগুলো বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্র, গোলাবারুদসহ সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা পেতে থাকে। ২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র গোলাবারুদের একটি চালান চট্টগ্রামে ধরা পড়ার পর বিষয়টি জনগণ জানতে পারে। এটি ছিল বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় এক বিপজ্জনক ঘটনা। স্বাধীনতার ৫২ বছরের মাথায় এসে রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের বিভাজন রাষ্ট্রের জন্য কত বড় বিপজ্জনক হতে পারে তার কিছু বিচার-বিশ্লেষণ তুলে ধরলাম। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের কিছু বৃহৎ বন্ধুরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যেভাবে নাক গলাচ্ছে সেটিও সম্ভব হচ্ছে কেবলই রাজনীতির আলোচ্য, এ চরম বিভাজনের কারণে। সুতরাং দেশের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের বিপজ্জনক রাজনীতির চির অবসান হওয়া উচিত। দেশের স্বার্থে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এসে দলীয় রাজনীতি করতে হবে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর