মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নতুন যুগে প্রবেশ, একজন প্রকৃত নেতার মহাপ্রয়াণ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

নতুন যুগে প্রবেশ, একজন প্রকৃত নেতার মহাপ্রয়াণ

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর সৃষ্টিকৌশলের কত গোপন রহস্য লুকিয়ে রেখেছেন যা কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। সময়ের বিষয় কখনো অসময়ে বোঝা যায় না। প্রতিটি মানুষের জীবন স্তরে স্তরে বিকশিত। মনে হয় এক দিন আগে ও এক দিন পরের অবস্থা খুব একটা পুরোপুরি অনুধাবন করা যায় না। সেই কবে জন্মেছিলাম এক অজপাড়াগাঁয়ে। রাস্তাঘাট ছিল না, ছিল না শিক্ষাদীক্ষার তেমন সুব্যবস্থা। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলাম, চোখ খুলল। যতটুকু পারলাম লেখাপড়া করলাম। যদিও পরিবারের সবার চাইতে আমার বিদ্যাবুদ্ধি একেবারেই কম। যদিও যত দিন গেছে ততই আকাশ-বাতাস, তরুলতা, ঝড়বৃৃষ্টি, প্রকৃতির কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেছি। ভুলে হয়তো কখনো কারও ক্ষতি করে থাকতে পারি। কিন্তু বুঝতে পারলে মিসকিনের পা ধরে ক্ষমা চাইতেও কখনো হৃদয়ে বাধেনি। কেন যেন ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে আর কিছুই ভালো লাগে না। বাবা মারা গেলে, মা মারা গেলে, উপার্জনক্ষম সংসারে কেউ মারা গেলে সংসারে ধস নামে। কিন্তু ’৭১-এ হানাদাররা বাড়িঘর পুড়ে ছারখার করে দিয়েছিল। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর গোষ্ঠীশুদ্ধ সবাই নির্যাতনের শিকার, ক্ষতির শিকার, অবহেলার শিকার। আগস্ট আমার জন্য চিরকালের চিরবেদনার মাস। আমার পরিবারের জন্যও তেমন এক সর্বগ্রাসী ধ্বংসের মাস। নিশ্চয়ই আমার চাইতে, আমার পরিবারের চাইতে বাঙালি জাতির অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমাদেরও খুব একটা কম ক্ষতি হয়নি। ২ সেপ্টেম্বর শনিবার গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা, ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শরিক হতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অংশটি নিশ্চয়ই ভালো হয়েছে। কিন্তু সমাবেশের অংশ তেমন ভালো হয়নি। বাংলাদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ভারসাম্যহীনতার। বড়-ছোটর কোনো ভেদাভেদ নেই। একটি জাতির মানবিক গুণ বলতে যা বোঝায় তা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোহাম্মদপুরে থাকি। ঘর থেকে বেরোলেই একের পর এক হাসপাতাল। একটু গেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গণভবন। তাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গণভবনের কাছ দিয়েই গিয়েছিলাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠের কাছাকাছি। পুলিশ ব্যারিকেড ছিল। কোনো কোনো সময় পুলিশ এত আগ্রহ দেখায় বুক ভরে যায়। তাদের সন্তানের মতো মনে হয়। একজন বয়সী সাবইন্সপেক্টর বললেন, ‘স্যার, গাড়ি আর বেশিদূর যেতে পারবে না। আপনি কি হেঁটে যেতে পারবেন?’ আগে ২-৪-৫-১০ কিলোমিটার ছিল আমার কাছে পানির মতো। পা ফেললেই পথ ফুরিয়ে যেত। এখন হাঁটতে মাঝেমধ্যে সত্যিই কষ্ট হয়। সেই ছোটকাল থেকে ঠান্ডার দোষে দোষী ছিলাম। সেটা আর পুরোপুরি সারেনি। কিছু না কিছু থেকেই যায়। কখনোসখনো ব্যাপারটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আগস্ট পুরোটাই কষ্টে কষ্টে গেছে। শুধু আমার কেন, বাড়ির সবাই কমবেশি এটাওটায় আক্রান্ত। দীপের মা, কুশিমণি, কুশির বড়বোন কুঁড়ি সবাই কমবেশি অসুস্থতায় দীর্ঘদিন ভুগছে। গতকাল বড় মেয়ে কুঁড়িকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করেছি। পুলিশের কথা শুনে গাড়ি ঘুরিয়ে গণভবনের পাশ দিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করেছিলাম। রাস্তা বন্ধ ছিল। কিন্তু সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই একজন পুলিশ অফিসার ছুটে এসে গাড়ি পার করে দিল। আস্তে আস্তে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশ দিয়ে একেবারে অনুষ্ঠানস্থলের গেটে গিয়ে নেমেছিলাম। প্রায় সবাই খুব যত্ন করেছে। নানা জায়গা থেকে ছুটে এসে হাত মিলিয়েছে। আর মোবাইলের কল্যাণে সেলফি তোলার সে যে কী দুর্বার প্রচেষ্টা কোনোভাবেই বলার মতো নয়। ভিতরে ঢুকে খুবই হতাশ হয়েছিলাম। কোনো শৃঙ্খলা নেই। কে কীভাবে বসে আছে। তবে ইদানীং কেন যেন সাধারণ কর্মীরা দারুণ সম্মান করে। উদ্যোক্তারা সামনের সারিতে নিয়ে গেলেন। একেবারে সামনে সোহেল এমপি বসে ছিলেন। দেখে লাফিয়ে উঠে জায়গা ছেড়ে দিলেন। বসব বসব করছি এমন সময় সামনের আসনের ৮-১০ সিট দূর থেকে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ছুটে এলেন, ‘স্যার, এখানে বসেন’। ড. আবদুর রাজ্জাক তার সিটের পাশে টেনে নিতে নিতে মনে হয় একজন সিট ছেড়ে চলে গেল। ডান পাশে ড. আবদুর রাজ্জাক, বাঁ পাশে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আবদুর রাজ্জাকের ডানে মোশারফ হোসেন। সময় যাচ্ছিল, একটার পর একটা অতিরিক্ত চেয়ার আসছিল, আমাদের বাঁ পাশে উল্টো মুখ করে প্রায় সবাই বসে যাচ্ছে। কেউ কারও দিকে নজর নেই। চেয়ার এনে মন্ত্রীরাও বসছিলেন, নাম না জানারাও বসছিলেন। শেষের দিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এসে জায়গা পাচ্ছিলেন না। আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল, খারাপ লাগছিল। মন্ত্রিসভায় তিনি এখন ১ নম্বরে। অথচ একটা অনুষ্ঠানে কোনো মূল্য নেই। ডেপুটি স্পিকারের পাশে বসে থাকা ভদ্রলোককে বলেছিলাম, আপনি এসে আমার সিটে বসুন। ওখানে মাননীয় মন্ত্রীকে বসতে দিন। এরপর মনে হয় দুই দিক থেকে দুজন চলে গেলেন। মাননীয় মন্ত্রী নির্বিবাদে বসে ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে আসার সময় ডেপুটি স্পিকারের হাত ধরেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার বেরোবার সময় ঘাটে ঘাটে সাহায্য করেছিলেন। কেন যেন অনুষ্ঠানের একসময় মাননীয় মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাককে বলেছিলাম, আমরা চলে যাওয়ার পর হয়তো আর কেউ কাউকে সম্মান দেখাবে না, মান্য করবে না। তবে অনুষ্ঠান খুবই হৃদয়গ্রাহী হয়েছে। সবার বক্তব্য বেশ ভালো লেগেছে। তবে কেন যেন বুঝতে পারছি না একজন বলিষ্ঠ মানুষ একসময় জ্ঞানগরিমার দিক থেকে সেরা ব্যক্তি। কিন্তু কেন যেন এখন তাঁর বক্তৃতায় তেমন জোর খুঁজে পাই না। ভালো যুক্তিও খুঁজে পাই না। তাঁর ‘খেলা হবে’ এমনটায় লোকজনের গলা মেলানো তাঁকে সম্মান করা নয়। যেটা নাসিম ওসমানের ছোট ভাই শামীম ওসমানকে বোঝায়, সেটা মাননীয় সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে বোঝায় না। আমি আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তৃতা খুব একটা শুনিনি। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাঁর বক্তৃতা চমৎকার হয়েছে। আসলে বাংলাদেশ এক নতুন যুগে পা রাখল। জাতীয় উন্নয়ন খুব একটা বেশি মানুষ অস্বীকার করতে পারে না। আগেই বলেছি, আগস্ট আমাদের জন্য বেদনার, কষ্টের, অন্ধকারের মাস। বয়স হয়ে গেছে, ইদানীং ঘুম থেকে উঠেই একের পর এক মৃত্যুসংবাদ শুনতে পাই। মৃত্যু অবধারিত সত্য। যার জন্ম আছে তার মৃত্যু আছে। পৃথিবীর কোনো প্রাণের মৃত্যুর স্বাদ ছাড়া মুক্তি নেই। আমাদের একজন অত্যন্ত প্রিয় নেতা ময়মনসিংহের প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান সেদিন দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। একজন মানুষ ধীরে ধীরে পলে পলে নানা কষ্ট-নির্যাতন, অবহেলা সহ্য করে বড় হয়, ক্ষমতাবান হয়, মানুষ হয়। তার এক উজ্জ্বল প্রমাণ ময়মনসিংহ আকুয়ার প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকেই প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের সঙ্গে আমাদের পরিচয়, জানাশোনা, ঘনিষ্ঠতা। পরিচয়ের পর যত দিন গেছে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ততই বেড়েছে। একজন মজার মানুষ, একজন মাটির মানুষ, একজন আগাগোড়া রাজনৈতিক মানুষ। ব্রিটিশ ভারতে সব থেকে বড় জেলা ময়মনসিংহ। সেই ময়মনসিংহ পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছেন তিনবার। মনে হয় প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান একমাত্র ব্যক্তি যিনি ময়মনসিংহ পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকতেও একটানা দুই বছর জেল খেটেছেন। জেলে তাঁকে একটি খাট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তাঁকে মাটিতে ফেলে রাখা হতো। যে মানুষটার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ময়মনসিংহ জেলায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং নান্দাইলের রফিক উদ্দিন ভূইয়ার পরেই স্থান, সেই মতিউর রহমান বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলে যারপরনাই নির্যাতন সহ্য করেছেন।

যে মানুষটি ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়েছেন, ময়মনসিংহের মতো অত বড় জেলার নেতৃত্ব দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা তাঁকে সামান্য একটু মর্যাদাও দেয়নি। বড় খারাপ লাগে। একজন মানুষ পরিপূর্ণ রাজনৈতিক হলে তিনি কতটা ভদ্র, কতটা শালীন, অন্যকে কতটা সম্মান করতে পারেন তার এক মূর্তপ্রতীক প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। ময়মনসিংহে মিন্টু যখন শহীদ হয়, তখন আমরা অনেকেই ময়মনসিংহ জেলে। টাঙ্গাইলেও বিশ্বনাথ নামে এক ছাত্র পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়। এরপর ময়মনসিংহে মিন্টুর নামে কলেজ গড়ে তোলেন। সেই থেকে জননেতা মতিউর রহমান প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানে পরিণত হন। আমার কাছে সবার থেকে বড় বিস্ময় লেগেছে তিনি যখন মন্ত্রী। ছেলেবেলায় শুনতাম যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা আমাদের এড়িয়ে চলতেন। একসময় ১০ হাত দূর থেকে যারা সালাম করতে ছুটে আসত তাদের দেখা পাওয়া যেত না। অথচ প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ময়মনসিংহ গেলে আমি যেখানেই যেতাম তিনি অন্তত একবার দেখা করতেন। বড় ভালো লাগত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দেখা করছেন। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩০৮ দিন ঘরের বাইরে অবস্থান করেছি। সে সময় বেগুনবাড়ি কলেজ মাঠে রাত কাটিয়ে ছিলাম। প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান বারবার খবর নিয়েছিলেন। ময়মনসিংহ টাউন হলের মাঠে রাত কাটিয়েছি। খবর নিয়েছেন। হালুয়াঘাট-ধারা-নকলা-নালিতাবাড়ী যেখানেই গেছি আপনজনের মতো খোঁজখবর করেছেন। পত্রিকায় দেখলাম তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলে। কিন্তু আমার জানা ছিল প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের আরেক ছেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশ কয়েক বছর আগে মারা যায়। আমি ময়মনসিংহে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম। সন্তানহারা কোনো বাপকে আমি সেই প্রথম খুব কাছ থেকে গভীর মমতায় তীক্ষè দৃষ্টিতে দেখেছিলাম। ’৯০-এ দেশে ফেরার পর আমার সঙ্গে এক নেতা অনেকদিন থেকেছে। তার খাওয়া-পরা সবকিছু করেছি। তার স্ত্রী আনুকে সন্তানের মতো দেখেছি। সেদিন প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের বাড়িতে ফারুক এবং আনু দুজনের সঙ্গেই দেখা হয়েছিল। আনু সালাম করে জিজ্ঞেস করেছিল, দাদা আমাকে চিনতে পেরেছেন? হ্যাঁ, তাকে চিনেছিলাম। ময়মনসিংহের এক প্রবীণ সংস্কৃতিমনা আমীর আহমেদ চৌধুরী রতনের মুকুল নিকেতনে শিক্ষিকার চাকরি দিয়েছিলাম। এখন ওরা ভালোই আছে। ফারুক তো মোটামুটি বেশ বড়সড় নেতা হয়েছে। তবে একসময় বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছিল আমাদের প্রাণ, আমাদের গর্ব। আমাদের নেতা জননেতা আবদুল মান্নান তাঁর প্রথম জীবনে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে পড়াতেন। তিনিই সৈয়দ নজরুল ইসলামকে জোরজবরদস্তি করে আওয়ামী লীগে এনেছিলেন। আমাদের আরেকজন নেতা হাতেম আলী তালুকদার তখন ময়মনসিংহে থাকতেন। লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কাজ করতেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে তাঁরই একটি টকটকে লাল কার ছিল। ময়মনসিংহের অনেক ইতিহাস। আবুল মনসুর আহমদ ময়মনসিংহের ত্রিশালের মানুষ। ওরকম মেধাবী লেখক আমাদের দেশে খুব একটা বেশি নেই। তিনিও আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে জড়িয়ে ছিলেন। যদিও তিনি প্রথম প্রথম কলকাতায় থাকতেন। সেখানকার রাজনীতি করতেন। অবিভক্ত বাংলার একসময়ের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের খুবই বিশ্বাসভাজন ছিলেন। পত্রিকা চালাতেন। সম্পাদক হিসেবে সে সময় তাঁর যথেষ্ট নাম ছিল। প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান মন্ত্রী ছিলেন, এমপি ছিলেন, নেতা ছিলেন। কিন্তু তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সীমান্তে বারাঙ্গাপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধে গঠন করা ইয়ুথ ক্যাম্প এক বিস্ময়। প্রায় ৩০-৪০ হাজার যুবক তাঁর ক্যাম্পে থেকেছে খেয়েছে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সেখান থেকে অন্য ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য গেছে। বাংলাদেশে তাঁর ক্যাম্পের কত সদস্য সর্বোচ্চ সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আর্মি-পুলিশ-বিডিআর নানা বাহিনীতে কত জেনারেল হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের যতটা মূল্যায়ন হওয়ার কথা তার তেমন কিছুই হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একসময় তাঁকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন এই যা। হ্যাঁ, তাঁকে একটি একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। অনেক দিন আগে শুনেছি তিনি নাকি বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছেন। পরে শুনলাম ময়মনসিংহের প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান নন, তিনি অন্য কেউ। তাতে আমি আরও বেশি বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের স্থলে অন্য কেউ বীরপ্রতীক হতে পারেন, এ ছিল আমার ভাবনারও বাইরে। প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানকে বিশেষ বিবেচনায় যদি বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবেও ভূষিত করা হতো যথাযথ হতো। একজন বীরউত্তম হলেও খুশি হতাম। কয়েকদিনের দুনিয়া থেকে আল্লাহতায়ালা তাঁকে সসম্মানে তাঁর কাছে টেনে নিয়েছেন এটাই বড় কথা। আল্লাহ তাঁকে সব ভুলত্রুটি ক্ষমা করে বেহেশতবাসী করুন, তাঁর পরিবার-পরিজনকে তাঁর রহমতের ছায়াতলে রাখুন।

 

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর