মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপন্ন চলনবিল

এ জলাধার টিকিয়ে রাখতে হবে

দেশের বৃহত্তম জলাধার চলনবিল অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য প্রভাব পড়ছে এ জলাধারে। ফারাক্কা বাঁধের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চলনবিল। অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ, সেতু, কালভার্ট, সড়ক নির্মাণও চলনবিলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় বেশ কয়েকটি নদী ও বিপুলসংখ্যক খাল। শুষ্ক মৌসুমে এসব জলাধার পরিণত হয় আবাদি জমিতে। বড়াল নদের উৎসমুখে যেখানে সেখানে স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে চলনবিলের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রাকৃতিক পানির উৎস বিপন্ন হয়ে পড়ায় ২১ হাজার হেক্টর জমির সেচ কার্যক্রম নলকূপনির্ভর হয়ে পড়ছে। বর্ষার পানি নামার পর চলনবিলের বুকজুড়ে বোরো ধান, সরিষা, রসুন, গমসহ নানা ফসলের আবাদ হয়। বর্ষায় অপার জলসমুদ্রের চলনবিল পরিণত হয় সবুজের গালিচায়। দিগন্তবিস্তৃত এ সবুজ ফসলের মাঠ দেখে চোখ জুড়ালেও কয়েক বছর ধরে প্রশান্তি নেই কৃষকের মনে। অভাবনীয় বাস্তবতায় ক্রমে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে চলনবিল। একসময় যে বিলের পানিতেই সারা বছর চলেছে সেচের কাজ, সেখানে শুষ্ক মৌসুমে এখন পানির জন্য দেখা দেয় হাহাকার। এতে চাষাবাদের খরচ বাড়ার পাশাপাশি বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশেও। দখল-দূষণ ও পানি সংকটে দেশি জাতের মাছের বিচরণ ক্ষেত্র হ্রাস পাচ্ছে। পানির অভাবে ক্রমেই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ মৎস্যভান্ডার চলনবিল। মৎস্যসম্পদ রক্ষায় অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন চলনবিলের ওপর নির্ভরশীলরা। স্মর্তব্য, বৃহত্তম এ বিলের পানি চলমান হওয়ায় বিলের নামকরণ হয় চলনবিল। কিন্তু চলমান পানি তো দূরের বিষয়, নানা প্রতিবন্ধকতায় অখন্ড চলনবিল এখন বহুবিভক্ত। এতে চলনবিলের মৎস্যসম্পদ ও জলজপ্রাণী বিলুপ্তির পথে। চলনবিল শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, দেশের ঐতিহ্যের একটি স্মারক। দেশের বৃহত্তম এ জলাধারের সুরক্ষায় দখল দূষণের কবল থেকে চলনবিল রক্ষায় বিলসংলগ্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সচেতন হতে হবে। প্রশাসনের চোখ-কান খোলা রাখাও জরুরি। নিজেদের স্বার্থেই চলনবিলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর