বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এই ডিএজি আদালত অবমাননা করেছেন

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

এই ডিএজি আদালত অবমাননা করেছেন

গত ৪ আগস্ট একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া নামক এক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা শুনে নিজের চোখ এবং কানকেই বিশ্বাস করতে পারিনি।

আমাদের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশের সংবিধানেও রয়েছে। এসব নিষিদ্ধ বিষয়ের অন্যতমটি হলো- মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে এমন কিছু বলা যাবে না, যা আদালত অবমাননাকর। এই ডিএজির বক্তব্য নিশ্চিতভাবে আদালত অবমাননা। তিনি বলেছেন, বিদেশ থেকে যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে এই মর্মে চিঠি লিখেছেন,

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাগুলো হয়রানিমূলক, তার সঙ্গে তিনি একমত। ড. ইউনূসের মামলাটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত, আপিল বিভাগ পর্যন্ত পৌঁছলে সে বিভাগ সমস্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পরিষ্কার ভাষায় এই মর্মে আদেশ দিয়েছেন যে, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা চলবে। এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ১৬০ জন বিদেশির সঙ্গে একমত পোষণ করে যা বলেছেন তার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, তিনি দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের আদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন, যেটি করে তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অবমাননা করে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আর সে কারণে দেশে আইনের শাসনের স্বার্থে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং কর্তৃত্বের স্বার্থে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা অপরিহার্য। ডিএজি একজন আইন অজানা ব্যক্তি হলে তবুও কিছু বলা যেত, কিন্তু আইনে পড়াশোনা করা, আইনের জগতে বিচরণ করা, বহু বছর আইনজীবী হিসেবে কাজ করা ব্যক্তি এ ধরনের আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিলে তা কোনোক্রমেই ক্ষমা করা যায় না। তাছাড়া ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদটি সরকারি চাকরি না হলেও একটি আইন দ্বারা তাদের নিয়োগ করা হয় বিধায় তাদের অবস্থান বিধিসাপেক্ষ। তাদের বেতন আসে সরকারি তহবিল থেকে। বহুলাংশে সরকারি কর্মকর্তাদের মতোই তাদের অনেক বিধিনিষেধ মানতে হয়। তারা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমোদন ব্যতীত কোনো মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে পারেন না, যেমন পারেন না সরকারি কর্মকর্তারা। তাদের ব্যাপারে একটি স্পষ্ট বিধান হচ্ছে এই যে, তারা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো মামলায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে পারবেন না, যার অর্থ তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দিতে পারেন না। এটি তাদের অসদাচরণের মধ্যে পড়ে, যার জন্যও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হতে পারে।

অন্য লোকে যাই করুক বা বলুক না কেন, রাষ্ট্রীয় পদে অবস্থান করা কোনো ব্যক্তি এমন কিছু সমর্থন করতে পারেন না, যা মূলত দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সেই ১৬০ জন বিদেশি ব্যক্তি উক্ত চিঠিটি লিখে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকেও অস্বীকার করার অপচেষ্টা করেছেন, বিধায় যেসব ব্যক্তি তাদের এই অশুভ, অযাচিত অপ্রয়াসকে সমর্থন করে, তারাও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধীদের তালিকাভুক্ত বৈকি। দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকারীদের পক্ষ নেওয়া বস্তুত দেশদ্রোহিতা সম। তাছাড়া কেন এই ব্যক্তি বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ড. ইউনূস নামক এক বিচারাধীন আসামির পক্ষ নিলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত সেটিও তদন্ত করা।

ড. ইউনূসের আইনজীবী এফিডেভিট মাধ্যমে মহামান্য হাই কোর্টে উল্লেখ করেছেন, তাকে ১৬ কোটি টাকা ফি, বাদীদের এবং তাদের আইনজীবীদের জন্য ড. ইউনূস ১০ কোটি টাকা বিতরণ করেছেন। সে টাকার অংশ এই ডিএজি পেয়েছেন কি না, তাও দুদক কর্তৃক তদন্ত করে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বক্তব্য দানকালে উক্ত ডিএজি ভদ্রতার ন্যূনতম সীমা লঙ্ঘন করে মুখে কিছু একটা চিবাচ্ছিলেন, যা থেকে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে তার মতো ভদ্রতাজ্ঞানশূন্য কোনো লোক ডিএজি হওয়ার যোগ্য কি না।

           ♦ লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি

সর্বশেষ খবর