সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ড. ইউনূস কি বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করেন না

প্রভাষ আমিন

ড. ইউনূস কি বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করেন না

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পাওয়ার মুহূর্তটুকু আমি কোনো দিন ভুলব না। ১৭ বছরের পুরনো হলেও, স্মৃতিতে একটুও ধুলো জমেনি। তারিখটি মনে নেই। আমি শাজাহানপুর এলাকার সরু রাস্তায় প্যাঁচ লাগানো যানজটে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। তখনই মোবাইলে সুখবরটি পাই। খুশিতে আমার প্রায় পাগল হয়ে যাওয়ার দশা। গাড়ি চালাতে চালাতেই পাগলের মতো একের পর এক ফোন করছিলাম। কোনো কাজে নয়, আনন্দটা প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে। আমার জীবনে সবচেয়ে আনন্দময় ঘটনার একটি ড. ইউনূসের নোবেল জয়। নোবেল জিতেছেন বলেই নয়, ড. ইউনূসের অর্জনকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। নোবেল ছাড়াও বিশ্বের অর্জনযোগ্য সব পুরস্কারে ঝলমলে ড. ইউনূসের সাফল্যের মুকুট। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণের ধারণাকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব ড. ইউনূসেরই। গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ অর্থনীতিতে দারুণ চাঞ্চল্য এনেছে। নারীর ক্ষমতায়নেও তার রয়েছে অসামান্য অবদান। তবে গ্রামীণ ব্যাংকের অতিরিক্ত সুদ এবং সুদ আদায়ে নানা অপকৌশলের সমালোচনাও কম নয়। এ সূত্রে অনেকেই ড. ইউনূসকে ‘সুদখোর’ বলে গালি দেন। তবে এটি অন্যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংক ব্যবস্থা আসলে দাঁড়িয়ে আছে সুদের ওপর। কোথাও কম কোথাও বেশি। সব সমালোচনার সত্ত্বেও ড. ইউনূস বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত নাম। বাংলাদেশের সাইনবোর্ড বলা যায়। গত এক দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে মোমেন্টাম, আর আন্তর্জাতিক মহলে ড. ইউনূসের যে ভাবমূর্তি। দুটি এক সুতায় গাঁথতে পারলে বাংলাদেশের এ উন্নয়ন যাত্রা আরও গতি পেতে পারত। কিন্তু এই বিপুল সম্ভাবনাময় ঘটনাটি ঘটেনি। আমি গভীর বেদনার সঙ্গে বলছি, বাংলাদেশের এই উন্নয়ন যাত্রায় ড. ইউনূসের কোনোই অবদান নেই। ড. ইউনূস বাংলাদেশের কোনো কাজে নিজেকে জড়াননি। অথবা বাংলাদেশ তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানকে দেশের কাজে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। কেউ কেউ বলতে পারেন, এই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ড. ইউনূসকে অনেক হেনস্তা করেছে। তাঁর হাতে গড়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অভিযোগ অসত্য নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাগ করে বাংলাদেশকেই যে পরিত্যাগ করে ফেলেছেন ড. ইউনূস। আমার কষ্টটা এখানেই।

ড. ইউনূসের অর্জন এক সময় আমাকেসহ গোটা বাংলাদেশকে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়েছিল। কিন্তু এখন বারবার নেতিবাচক কারণে ড. ইউনূসকে শিরোনামে আসতে দেখলে আমার আক্ষেপ হয়। কী হওয়ার কথা, আর কী হলো। ড. ইউনূসের প্রতি এক সময় আমার প্রবল অনুরাগ ছিল। এখনো বিরাগ নেই, তবে আফসোস আছে। ড. ইউনূস হয়ে উঠতে পারতেন জাতির অভিভাবক, আন্তর্জাতিক বিবেক। কিন্তু বারবার তিনি নেতিবাচকভাবে আলোচনায় এসেছেন, একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ড. ইউনূসকে ঘিরে যে আবেগ, তাকে তিনি রাজনীতির মাঠে টেনে আনতে চেয়েছিলেন। ওয়ান-ইলেভেন সরকার তাকে কেয়ারটেকার প্রধান করতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি ‘কেয়ারটেকার নয়, টেকার’ হতে চেয়েছিলেন। সেই চেষ্টায় ওয়ান-ইলেভেনের সময় রাজনীতি করার আকাক্সক্ষা জাগিয়েও হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এ সময়ে তিনি যতটা বিশ্বমানব হয়েছেন, ততটা বাংলাদেশি হতে পারেননি। আমি জানি, এটুকু পড়ে অনেকেই আমাকে গালাগাল শুরু করে দেবেন। আমরা যোগ্য লোককে সম্মান জানাতে পারি না, আমরা পরশ্রীকাতর, সরকারের দালাল ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ড. ইউনূসের অর্জনকে বাংলাদেশের অর্জন হিসেবে বিবেচনা করতে না পারার বেদনা যে আমাকে কতটা পোড়ায়, তা লিখে বোঝানোর সাধ্য আমার নেই।

ড. ইউনূসের প্রচারণার জন্য শক্তিশালী ইউনূস সেন্টার রয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ড. ইউনূস কিছু করলেই ইউনূস সেন্টার দারুণ দক্ষতায় তা প্রচার করে। সিনিয়র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জনসংযোগে কোনো নোবেল দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে নিঃসন্দেহে সেটা ড. ইউনূসই পেতেন। বিশ্বজুড়ে এমন শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আর কারোই নেই। তবে এটাও ঠিক, এই জনসংযোগ চালাতে প্রয়োজন বিপুল অর্থের। এ শক্তিশালী প্রচার নেটওয়ার্ক আর টাকার জোরেই ড. ইউনূসের পক্ষে খোলা চিঠি লেখেন শতাধিক নোবেল বিজয়ী। সেই খোলা চিঠি পুরো পৃষ্ঠা বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয় ওয়াশিংটন পোস্ট বা নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকায়। কিন্তু ড. ইউনূসের যে প্রচার নেটওয়ার্ক বা ইউনূস সেন্টার, তাদের প্রচার তালিকায় কখনই বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায় না। গত ১৭ বছরে বাংলাদেশের কোনো সংকটে ড. ইউনূসকে কখনই পাশে পাওয়া যায়নি। পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে ড. ইউনূসকে দায়ী করা হয়। আমি ধরে নিচ্ছি অভিযোগটি অসত্য। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের এই টানাপোড়েনে তিনি তো বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াতে পারতেন। বাংলাদেশের ঘাড়ে যে এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা, এ সমস্যার সমাধানে ড. ইউনূস কখনো একটি শব্দও ব্যয় করেননি। আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে তিনি সাক্ষাৎকার দেন। কিন্তু নোবেল পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের কয়জন সাংবাদিক ড. ইউনূসের টিকিটির দেখা পেয়েছেন? ড. ইউনূস বাংলাদেশে জন্মেছেন, এ জন্য আমরা গর্বিত। তিনি বিশ্বমানব হয়েছেন, এ জন্যই আমরা গর্বিত। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের হতে পারেননি, এটা দুর্ভাগ্যজনক। কবি যেমন বলেছেন, বিশ্বমানব হবি যদি, কায়মনে বাঙালি হ’, ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে সেই হওয়ায় বড্ড ঘাটতি।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা আছে। অনেকেই বলছেন, সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি ও হেয় করছে। আমি এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেই বলছি, যদি মামলাগুলো সত্যি সত্যি ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক হয়, তাহলে সেটা তো আদালতেই প্রমাণিত হবে। তার বিরুদ্ধে তো কোনো রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয়নি। সব অভিযোগই সব সুনির্দিষ্ট-শ্রমিকদের প্রাপ্য অর্থ না দেওয়া, আয়কর মওকুফ চাওয়া ইত্যাদি। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে যত অভিযোগই থাকুক, অন্তত ড. ইউনূসের মামলায় অন্যায্য কিছু হবে না, এটা আশা করাই যায়। যদি ড. ইউনূস আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হন, তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের মামলার ইতিহাস শুরু হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ নিয়ে, সেটিও করেছিলেন ড. ইউনূসই। তিনি চেয়েছিলেন আজীবন এমডি থাকতে। সরকার অন্য সব ব্যাংকের এমডির মতো নির্দিষ্ট বয়সে তাকেও অবসরে যেতে বলেছিল। মামলাটি ছিল খুব সহজ-নোবেল বিজয়ী হন আর যেই হোন; আইন সবার জন্য সমান। এটি ছিল কমনসেন্সের মামলা। স্বাভাবিকভাবেই ড. ইউনূস হেরে গিয়েছিলেন। প্রিয় গ্রামীণ ব্যাংক তাকে ছাড়তে হয়েছে অপ্রিয়ভাবে। আয়কর মামলায় হেরে গিয়ে এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা না দেওয়ার মামলাও চলমান। ড. ইউনূস নোবেল জিতেছেন বলে, শ্রমিকরা তার বিরুদ্ধে ন্যায্য পাওনা চেয়ে মামলা দিতে পারবে না?

কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদালতের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। তিনি আদালতের বাইরে নানাভাবে মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টায় এখন মাঠে নেমেছেন তার আন্তর্জাতিক বন্ধুরা। গত মার্চে ড. ইউনূসের ‘নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ’ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন ৪০ জন বিশ্বনেতা। সেই খোলা চিঠির ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে একই ধরনের আরেকটি খোলা চিঠি লেখা হয়েছে শেখ হাসিনার কাছে। এবারের চিঠিতে শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ মোট ১৮৫ জন বিশ্বনেতা স্বাক্ষর করেছেন। আগের ৪০ জন বা এবারের ১৮৫ জন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে খোলা চিঠি লিখেছেন, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। নিশ্চয়ই ড. ইউনূসের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এই খোলা চিঠি ‘ম্যানেজ’ করেছে। তবে এবারের খোলা চিঠিটি নিয়ে আলোচনা অনেক বেশি হচ্ছে দুটি কারণে। প্রথমত, এবারের চিঠিতে শতাধিক নোবেল বিজয়ীর স্বাক্ষর রয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা হলো, এবারের চিঠির কনটেন্ট। শতাধিক নোবেল বিজয়ীর খোলা চিঠিটি আইনি বিবেচনায় প্রত্যাশিত নয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দন্ড দেওয়া হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে সম্প্রতি তাকে (ড. ইউনূস) লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং এটি ধারাবাহিকভাবে বিচারিক হেনস্তা বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ তাদের আশঙ্কা, উদ্বেগ বা বিশ্বাস নিয়ে কোনো কথা নেই। তবে সেটা তো আদালতেই মীমাংসা হতে হবে। খোলা চিঠিতে আবদার করা হয়েছে, ‘আমরা সম্মানের সঙ্গে অনুরোধ করছি, অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।’ শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ ১৮৫ জন বিশ্বনেতা কীভাবে একটি দেশের নির্বাহী প্রধানের কাছে একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করতে চাইতে পারেন, এটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে, কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগ স্বাধীন। নির্বাহী প্রধান চাইলেও বিচারিক প্রক্রিয়া স্থগিত করতে পারবেন না। এই খোলা চিঠির ব্যাপারে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘একজনের জন্য এত এত বিবৃতি না দিয়ে এক্সপার্ট পাঠাক। এত দরদ থাকলে আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ পাঠাক। যার বিরুদ্ধে মামলা, তার সব দলিল-দস্তাবেজ তারা খতিয়ে দেখুক। সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি, তারা নিজেরাই দেখুক। তাদের এসে দেখা দরকার, কী কী অসামঞ্জস্য আছে।’ আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান খোলা চিঠির দাবির পরিপূরক। কারণ খোলা চিঠিতেও বলা ছিল, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে আপনার দেশের নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেলে এই অভিযোগ পর্যালোচনা করুন।’ তাহলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে পর্যালোচনা করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। খোলা চিঠিতে বিশ্বনেতারা যদি বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত না চেয়ে ন্যায়বিচার চাইতেন তাহলে সেটি অনেক বেশি যৌক্তিক এবং আইনি হতো। অভিযুক্ত যত বিখ্যাতই হন, তার পক্ষের খোলা চিঠির লেখকরা যতই বিশিষ্ট হন; কারও বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না, বিচার করা যাবে না; এ আবদার তো কোনো বিচারিক মানদন্ডেই গ্রহণযোগ্য নয়। নোবেল বিজয়ী হলেই তিনি আইনের ঊর্ধ্বে, এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। পাশের দেশ মিয়ানমারে নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি কারাগারে আছেন, এই ১৮৫ জন তো তার পক্ষে খোলা চিঠি লেখেননি। বেলারুশের নোবেল বিজয়ী অ্যালেস বিয়ালিয়াটস্কিকে ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন সে দেশের আদালত, তখন কোথায় ছিলেন এই বিশ্ব বিবেক। পাশের দেশ ভারতের আরেক নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের বাড়ির সীমানা নিয়ে বিশ্বভারতীর সঙ্গে ঝামেলা চলছে। কই কেউ তো তার পক্ষে খোলা চিঠি লেখেননি। লেখেননি কারণ তাদের কারোই ড. ইউনূসের মতো শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নেওটওয়ার্ক নেই, নেই বিপুল বিনিয়োগের সামর্থ্যও। খোলা চিঠিতে আরেকটি খুব আপত্তিকর কথা বলা হয়েছে, ‘আমরা নিশ্চিত যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা হলে তিনি খালাস পাবেন।’ তারা কীভাবে নিশ্চিত হলেন? বিচার শেষ হওয়ার আগেই অভিযুক্তের নির্দোষিতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় যাওয়াটা আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোরই শামিল।

ফেসবুকে কয়েক দিন ধরে অধ্যাপক আবুল বারাকাতের একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে, ‘আমার মনে কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর আমি পাই না। যেমন ড. ইউনূস কেন সাভার স্মৃতিসৌধে যান না; কেন তিনি শহীদ মিনারে যান না; কেন তাকে পহেলা বৈশাখ স্পর্শ করে না; কেন তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণ করেন না; কেন তিনি ১৫ আগস্ট বাঙালির সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে যান না; কেন তিনি ১৬ ডিসেম্বর এবং ৭ মার্চ ধারণ করেন না; ১৭ আগস্ট ২০০৫-এ জঙ্গিরা যখন সারা দেশে বোমাবাজি করল কেন তিনি তখন কিছুই বললেন না; ২১ আগস্ট ২০০৪-এ যখন শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলো-তখনো তিনি কেন কিছুই বললেন না; কেন তিনি এদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন না। হতে পারে আমরা আবেগী-অতি আবেগী, আর তিনি...আমি না, বুঝি না।’ অধ্যাপক আবুল বারাকাত সত্যি সত্যি এই কথা বলেছেন কিনা জানি না। কোথায় বলেছেন তাও জানি না। তবে তার প্রশ্নগুলো আমারও প্রশ্ন। স্মৃতিসৌধ বা শহীদ মিনারে গেলে আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই ড. ইউনূসকে বাধা দিত না। ড. ইউনূস কি তবে বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করেন না?

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর